কতিপয় আমলার স্ত্রী।। আব্দুল গণি হাজারী

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আবদুল গণি হাজারী (১২ জানুয়ারি ১৯২১- ১৯৭৬) ছিলেন কবি ও সাংবাদিক। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৪ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার ও ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ১৯৯১ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। তার কবিতার বইগুলো হচ্ছে, সামান্য ধন (১৯৫৯), কতিপয় আমলার স্ত্রী, সূর্যের সিঁড়ি (১৯৬৫) এবং জাগ্রত প্রদীপ (১৯৭০)। অনুবাদ গ্রন্থ: স্বর্ণগর্দভ (১৯৬৪) ও ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষা (১৯৭৫)। রম্যরচনা: কালপেঁচার ডায়েরী (১৯৭৬)।

আব্দুল গণি হাজারী

আমরা কতিপয় আমলার স্ত্রী
তোমার দিকে মুখ ফেরালাম
হে প্রভু আমাদের ত্রাণ করো
বিশ্রামে বিধ্বস্ত আমরা
কতিপয় আমলার স্ত্রী
হে প্রভু আমাদের স্বামীরা
অগাধ নথিপত্রে ডুবুরি
(কি তোলে তা তারাই জানে)
পরিবার-পরিকল্পনায় আমরা নিঃস্ব
সময় আমাদের পিষ্ট করে যায়
আমরা কতিপয় আমলার স্ত্রী
সকাল থেকে সন্ধ্যা
কোন মহৎ চিন্তার কিনারে
এবং ফ্যাশান পত্রিকার বিবর্ণ পাতা
দৈনিক কাগজে, সিনেমার ইস্তেহার
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের উলংগ ছবি
এবং একটি প্রাপ্ত-প্রায় মহত্ত্বের শিহরণ।

কোমরের উপত্যকায় মেদের আক্রমণ
উদরের স্ফীতি
চিবুকের দ্বিত্ব
স্তনের অস্বাস্থ্যে শংকিত
হে প্রভু আমরা
চর্বির মসোলিয়ামে হাঁসফাঁস
আমরা কতিপয় আমলার স্ত্রী
ভাঁড়ার আমাদের লক্ষ্মী
বালিশের ভাঁজে উদ্বৃত্ত হাতখরচ
আয়নার দেরাজে হেলেন কার্টিস
এনি ফ্রেঞ্চ-মিল্ক
এষ্ট্রিনযেন্ট
ডিওডরেন্ট
হ্যান্ড লোশন
রেভ্‌লন
ক্রিশ্চিয়ান ডিয়োর
এবং রুবিনষ্টিন
অবশ্য স্বামীদের কাছ থেকেই
উষ্ণ প্রেমের ঘাট্‌তির
প্রৌঢ় ক্ষতিপূরণ

আর্দালীর কুর্নিশে গর্বিত
স্বামীরা অফিসে সর্বক্ষণ
অন্যের পদোন্নতির বাধা
দরখাস্ত নাকচ
এবং কতিপয় পদস্থ দস্তখত

বাড়ী ফিরেও হায়
বন্ধুর প্রমোশনে ঈর্ষিত
বেনামী ব্যবসার লাভক্ষতি
তারপর টেলিফোন
তারপর টেলিফোন
তারপরও টেলিফোন

মাদের ঠোঁটের রেভ্‌লন
মুখের ফাউন্ডেশন
কপালের সযত্ন টিপ
শুকিয়ে আসে
বৈকালের নিমন্ত্রণ বাসি

অতঃপর হে প্রভু
দ্বিতীয় ব্যক্তির চিন্তা
আমাদের উন্মনা করে যায়
পুরাতন প্রেমিক বিবাহিত
তরুণদের মাসী
সাবর্ডিনেটের আম্মা
বোনের সংসারে নানী
এবং বৈকালের নিমন্ত্রণ বাসি

বিলেতী পত্রিকার পাতায়
মেগির প্রেম
জ্যাকেলিনের স্তব
লিজ টেলরের ছেনালী
বি-বির মাপজোক
লোলার লোলুপতা
এবং মেরেলিনের আত্মহত্যা
এবং আত্মহত্যা
এবং আত্মহত্যা
হায়রে বৈকালের নিমন্ত্রণ

অতঃপর হে প্রভু
আমাদের রাত্রির শরীর পান্‌সে
জানালার চাঁদ নিরক্ত
ব্যবহৃত দেহ
নাকডাকা স্বামী
বিনিদ্র রাত
এবং ট্র্যাংকুইলাইজার

হে প্রভু অনন্যোপায়
তোমার দিকে মুখ ফেরালাম
আমাদের কোন কাজ দাও
ভ্যানিটি ব্যাগে আয়না
ফাউন্ডেশন আর গ্যালার রং
এবং সমাজ সেবা
কিন্ডারগার্টেনের শ্রাদ্ধ
লেডিজ ক্লাবের সামনের সীট
কিংবা স্বামীর পদাধিকারে
শিশুসদনের উদ্বোধন

আমরা কতিপয় আমলার স্ত্রী
হে প্রভু
যে-কোন একটা কাজ দাও
নিজেদের নিক্ষেপ করি
তার গহ্বরে।

মন্তব্য: