আহসান হাবীব
রাতের পাহাড় থেকে
খসে যাওয়া পাথরের মতাে
অন্ধকার ধসে ধসে পড়ছে।
দু-হাতে সরিয়ে তাকে নির্বিকার নিরুত্তাপ মন
এগােল।
দু-পাশের পায়ে-চলা পথে
এখনাে ঘুমের স্রোত মরে নি,
পড়ে আছে কুণ্ডলি পাকিয়ে
এখানে ওখানে।
তারায়ভরা আকাশকে কাপিয়ে
শাদা কাফনের সঙ্কেত।
পদক্ষেপ জোরালাে।
মনের সাথে নেই তার মিতালি,
অলস মন
ঘুম ঘুম চোখের মতাে চাইছে
ছুঁয়ে যাচ্ছে পৃথিবীকে,
অথচ নেই অনাবশ্যক প্রখরতা
আশ্চর্য।
খানিকটা হেঁটে গিয়ে
মার্কুইস লেন ছাড়িয়ে
কিড স্ট্রিট পেরিয়ে
তারপর চৌরঙ্গি।
গড়ের মাঠ দু-টুকরাে
মাঝখানে আড়াআড়ি পিচের পথ
পেরিয়ে
অতঃপর দীর্ঘ রেড রােড।
এখানে এই বিশাল পথ জড়িয়ে
অন্ধকার পড়ে আছে
দীর্ঘকায় সাপের মতাে।
আর আছে রেড রােডের দু-পাশে
তীক্ষ্ণ চোখ জ্বালিয়ে
অন্ধকার শয়তানের পাহারা
তারা এখন মুমূর্ষু।
বাঁ-পাশের পাথরে গড়া মুর্তির গা বেয়ে
শেষরাতের শিশির এখনাে ঝরছে
তার সাথে গলে গলে পড়ছে
অথবা পড়ছে বলে মনে হচ্ছে
এতদিনের যত্নে গড়া চেহারা-
তার ফাঁটলে বুঝি শেষ রাত্রির কান্না।
এদিকে আকাশে
কার শিকারী চোখের ছায়া জাগল
কয়েকটি রেখা এসে লাগল
দৈত্যকায় অজগরের পাঁজরে
তার দেহে লাগল মৃত্যুর মােচড়।
এখন সাপের দেহ নড়বে
তারপর আকাশ থেকে ঝরবে
তীক্ষ্ণ তির্যক বর্শা
আর উড়বে অনেক দূরে
ছিন্ন ভিন্ন কালাে সাপের দেহাংশ,
মিলিয়ে যাবে
রেড রােডের বুক থেকে,
এগিয়ে যাবে কেন্লার মাঠ পেরিয়ে
তারপর আরও এগোবে।
গঙ্গার গভীর জলে ঘুচবে কি তার লজ্জা!
অথবা ঘাটে বাঁধা অনেক দূরের জাহাজ,
যারা পার করে দেয় পলাতক অদ্ধকারকে
নিরাপত্তার পাল তুলে!
এরা সেই আপনি গড়া খেয়া নৌকোয় হয়ত-
পেরিয়ে যাবে গঙ্গা
মিলিয়ে যাবে পশ্চিম সীমান্তে,
নদীর জলে ঝলকে উঠবে মুক্তি,
বন্যা আসবে রেড রােডের প্রান্তে
কেন না
এদিকে আবার জাগবে নতুন সূর্য।
খানিকটা স্থির হয়ে সে থাকবে
তারপর সে চমকাবে
কাঁপবে
কেঁপে কেঁপে উঠে আসবে উপরে
ঝরাবে তার সােনা
ছড়াবে এই এখানে
এই রেড রােডের মরচে ধরা ঘাসে।
সকাল বেলার হাওয়ায় লাগবে জোর
পুরনাে ধুলােরা এবার উড়বে।