আপেক্ষিকতার আরেক তত্ত্ব : মিলেভা মারিক

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আলী হাসান

বরফের ওপর দিয়ে তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন ছেলেকে এক নজর দেখবেন বলে। হঠাৎ-ই মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন। পথিকজনদের কেউ তাঁকে তুলে পৌছে দেয় বাড়িতে। আগের রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন- তুষারঝড়ের মধ্য দিয়ে যেতে চাইছেন ছেলের কাছে, কিন্তু পৌঁছতে পারছেন না। এই ঘটনার তিন মাস পর তাঁর জীবনাবসান ঘটে। ইঁনি মিলেভা মারিক- জ্ঞানযুদ্ধে হেরে যাওয়া এক স্লাভ-নারী। প্রথমে আইনস্টাইনের সহপাঠী, পরে স্ত্রী। পদার্থবিজ্ঞানে আইনস্টাইনের সমান পারদর্শী ছিলেন মিলেভা। তাই কেউ কেউ মনে করেন আপক্ষিক তত্ত্ব উদ্ভাবনে মিলেভার অবদান রয়েছে; পরােক্ষভাবে তাে বটেই প্রত্যক্ষভাবেও তিনি কিছু গাণিতিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সংযােগ করে তত্ত্বটিকে আলাের মুখ দেখান। মিলেভার মেধা-দক্ষতা এবং তরুন-আইনস্টাইনের সাথে বুদ্ধিমত্তার চমৎকার সুসম্পর্ক এর ইঙ্গিত বহন করে। কিন্তু কোনাে লিখিত প্রমাণ নেই বলে এ-বিশ্বাস ভিত্তি পাচ্ছে না।

মিলেভা মারিক ১৮৭৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর হাঙ্গেরীর অঙ্গরাজ্য ভােজভােদিনার টাইটেনে জন্মগ্রহন করেন। বেড়ে ওঠেন সার্বিয়ার মফস্বল-শহর নাভিসাদে। প্রথমজীবনে ডাক্তারী পড়ার ইচ্ছা লালন করতেন। এ-লেভেল সম্পন্ন করে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভর্তিও হয়েছিলেন কিন্তু পাঠ শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই ডাক্তারী-বিদ্যায় কেন যেন তাঁর আগ্রহ হ্রাস পেয়ে ঝোঁক বাড়তে থাকে গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানে। ফলশ্রুতিতে ১৮৯৬ সালে জুরিখ পলিটেকনিকে ভর্তি হয়ে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান পড়া শুরু করেন। তিনি খুব ধনীঘরের মেয়ে নন, তবে পড়াশুনায় অত্যন্ত কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় বাবা-মা তাঁকে জুরিখে পাঠান উচ্চশিক্ষার জন্য। এখানে অধ্যয়নকালে পরিচয় ঘটে অত্যন্ত মেধাবী কিন্তু শৃংখলাবদ্ধ-পড়াশুনা এবং গতানুগতিক ধারার ক্লাশে অমনোেযােগী সহপাঠী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সাথে। বয়সে আইনস্টাইনের চেয়ে কয়েক মাসের বড় মিলেভা ছিলেন লাজুক প্রকৃতির, বক্তৃতা শ্রবণে আগ্রহী এবং গ্রুপের একমাত্র মহিলা শিক্ষার্থী। আইনস্টাইন ঠিক তার উল্টো। শিক্ষকদের বক্তৃতা শােনার চেয়ে বক্তৃতা দিতে পছন্দ করতেন। সহপাঠীদের মধ্য সে-সুযােগ তার মাঝে-মধ্যেই ঘটত; আর এতে পয়লা নম্বরের শ্রোতা হয়ে উঠতেন মিলেভা। ধীরে ধীরে দু’জনের আসনের দূরত্ব এবং পরে মনের দূরত্ব কমতে থাকে। এবং এক সময় জড়িয়ে পড়েন গভীর প্রেমে।

পলিটেকনিকের শিক্ষাগ্রহণ নানা কারণে বাধাগ্রন্থ হয়। এ সময়ে আইনস্টাইন কর্তৃক তাঁর গর্ভবতী হওয়া একটি বিশেষ কারণ। চূড়ান্ত পরীক্ষায় গ্রেড-পয়েন্ট ৬ এর মধ্যে মিলেভা পেলেন ৪.০; পক্ষান্তরে আইনস্টান পেলেন ৫.৭। তবে পদার্থবিজ্ঞানে উভয়ের পয়েন্ট ছিল

৫.৫ । তিন মাসের গর্ভাবস্থা নিয়ে গ্রেড-পয়েন্ট উন্নয়নের পরীক্ষায় পুনরায় অবতীর্ণও হয়েও কোনাে উন্নয়ন হল না। তাই দূর্বল ডিপ্লোমা ডিগ্রি ঢেকে রাখতে পি.এইচ.ডি লাভের পরিকল্পনা করেন মিলেভা। উক্ত প্রতিষ্ঠানেরই পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হেইনরিচ ওয়েবার-র অধীনে গবেষণা শুরুও করেন; কিন্তু সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসায় তা চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হন। ১৯০১ এর মাঝামাঝিতে (মতান্তরে শেষের দিকে) মিলেভা জুরিখ ছেড়ে ‘নভি সাদ’-এ মায়ের কাছে চলে যান। এবং সেখানেই ১৯০২ সালের জানুয়ারীতে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কন্যাটির নাম রাখা হয় লিসার্ল। আইনস্টাইনের এই সন্তান সম্পর্কে তেমন বিশেষ কোনাে তথ্য পাওয়া যায় না। কেউ কেউ ধারণা করেন শিশুটি শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছিল; আবার কেউ কেউ মনে করেন মিলেভারই এক বন্ধু হেলেন সাভিক শিশুটিকে দত্তক নিয়েছিলেন। মিলেভা-আইনস্টাইন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯০০ সালে। ১৯০৪ সালে তাঁদের প্রথম পুত্র হ্যান্স আলবার্ট এবং ১৯১০ সালে দ্বিতীয় পর এডুয়ার্ড-র জন্ম হয়। আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব প্রকাশ পায় ১৯০৫ সালে; হ্যান্স আলবার্টের জন্মের পরের বছরই। এ সময় আর্থিক অনটনের কারণে দাম্পত্ত এবং সংসার-জীবনে কিছুটা অশান্তি নেমে এলেও অনেকেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, তত্ত্বটি উদ্ভাবনে মিলেভার একটু হলেও অবদান ছিল। এ বক্তব্যের লিখিত কোনাে প্রমাণাদি নেই। তবে কিছু ঘটনা এমন কিছু ইঙ্গিত বহন করে যা আমাদেরকে বিভ্রান্তিতে ফেলে।

০১. এ-রকম একটি গল্প প্রচলিত আছে, আইনস্টাইন মিলেভার সাথে মাঝে-মধ্যেই বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলােচনা করতেন। একদিন তিনি আপেক্ষিকতা বিষয়ে তাঁর উপলব্ধি ব্যক্ত করে মিলেভাকে বললেন, “বিশ্বব্রহ্মান্ডকপ ভাল করে বুঝতে হলে পাঁচটি ইন্দ্রিয় থেকে আমাদেরকে মুক্ত থাকতে হবে। কারণ দেখা-শােনা, স্পর্শ, অনুভব ইত্যাদি ক্রিয়াগুলাে আমাদেরকে যে-কোনাে সময়ে যে-কোনােভাবে বােকা বানাতে পারে। এতে মিলেভা সংযােগ করেছিলেন, ‘একটি ফুলের সুবাস, একটি কুঁড়ির রঙ দু’জন লােকের কাছে এক-রকম না-ও মনে হতে পারে। কিন্তু বিশ্বকে তুমি তা বােঝাবে কী করে? অস্বাভাবিক কোনাে কিছুর পেছনে অস্বাভাবিক প্রমাণ থাকা চাই’। মিলেভার এমন উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী বাক্যালাপ আইনস্টাইনের মাথায় আপেক্ষিকতার বিষয়টি বেশী করে তােলপাড় শুরু করে। এবং তিনি অধিকাংশ পার্থিব-ঘটনায়ই আপেক্ষিকতার পরশ খুঁজতে থাকেন। অবশেষে ১৯০৫ সালে সত্যিকারের আপেক্ষিকতার জগতের সন্ধান পান। আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার যে সূত্র দাঁড় করাতে চাচ্ছিলেন তাতে অনেক গাণিতিক সূত্রের যােগান দিয়েছেন মিলেভা। ১৯০৫ সালে ‘অন দ্যা ইলােট্রোডিনামিক্স অব মুভিং বডিজ’ লিখে নিউটনীয় চিন্তাধারাকে পাল্টে ধ্রুব-সময়ের ধারণার বদলে আইনস্টাইন যে আপেক্ষিক তত্ত্বের উদ্ভব ঘটান অনেকে বলেন সেটা আইনস্টাইন ও মিলেভার যুগল-প্রয়াসের বহিঃপ্রকাশ। আইনস্টাইনের কিছু কিছু চিঠিতে এর আঁচ পাওয়া যায়। তবে বিজ্ঞানমহলে এটা বড়ই উত্তপ্ত বিতর্কের বিষয় হয়ে রয়েছে।

০২. আইনস্টাইন ১৯০১ সালে মিলেভাকে লেখা এক চিঠিতে বলেন, ‘আপেক্ষিকতা বিষয়ক আমাদের কাজকে আমরা যখন পরিণতি দিতে পারবাে তখন আমি বিশেষ আনন্দ ও গর্ব অনুভব করবাে।’ ১৯০৫ সালে যখন সেই কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জিত হলাে তখন মিলেভা যাবতীয় গাণিতিক বিশ্লেষণ পুনরায় নিরীক্ষা করে তাঁর এক সার্বিয়ান বন্ধুকে লেখেন- আমরা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেছি যা আমার স্বামীকে জগদ্বিখ্যাত করে তুলবে। উক্তিটিতে ভাবনার যথেষ্ট উপাদান আছে। এ সময় আইনস্টাইন-মিলে সম্পর্ক ছাত্র-জীবনের ন্যায় মধুরও ছিল না, আবার বিবাহ-বিচ্ছেদের প্রাক্কালে যেরূপ তিক্ততায় ভরে উঠেছিল সে-রকমও হয়ে ওঠেনি। সুতরাং মিলেভা যদি সত্যিই ‘আমরা’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন তবে বলাই যায গবেষণাকর্মে তাঁর কিছু না কিছু অবদান না থাকলে তিনি অমন শব্দ ব্যবহার করতেন না। উক্তিটি যদি ছাত্র-জীবনের অর্থাৎ প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার সময়ের হতাে তবে না-হয় বলা যেত আইনস্টাইনের প্রতি অতি ভালােবাসার কারণে একটু বাড়িয়েই ঐ-শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু সময়ই বলে দেয়, অতিরঞ্জিত কোনাে সংলাপের অংশ নয়। আইনস্টাইন-গবেষকদের কেউ কেউ অবশ্য যথেষ্ট প্রমাণাদি না পেয়ে বলেছেন- ওটি অতিরঞ্জিত-ই বটে।

০৩. আইনস্টাইন তাঁর কোনাে কোনাে চিঠিতে আমাদের কাজ’, ‘আমাদের তত্ত্ব- এভাবে উল্লেখ করেছেন। আইনস্টাইন-গবেষক এবং সাধারণ আপেক্ষিকতার উপর ডক্টরেট করা জন স্ট্যাচেল নামক একজন আমেরিকান পদার্থবিদ উপরােল্লেখিত উক্তিগুলাে সম্পর্কে মন্তব্য করেন। “চিঠিতে উল্লেখিত কথাগুলাে আইনস্টাইন-মিলেভার ছাত্র-জীবনের লেখা, কম করে হলেও ১৯০৫ সালের চার বছর আগেকার অর্থাৎ ১৯০১ সাল বা তার কাছাকাছি কোন এক সময়ের’। আমাদের জানা নেই, চিঠিগুলােতে তারিখ উল্লেখ ছিল কিনা। যদি তারিখ উল্লেখ থাকে আর স্ট্যাচেল যদি সেই তারিখ পর্যালােচনা করে মন্তব্য করেন তবে কিছু বলার থাকে না; আর যদি মন্তব্যটি তারিখ-ভিত্তিক না হয় তবে বেশ জােরালােভাবে আমাদের কিছু বলার থাকে। আইনস্টাইন নিজের চিঠিতে ‘আমাদের কাজ’ বা ‘আমাদের তত্ত্ব’ উল্লেখ করার অর্থই হল এ কাজ তাঁর একার নয় সাথে জড়িত ছিল আরাে এক বা একাধিক ব্যক্তি। আর তাই যদি হয় তবে সহপাঠী-স্ত্রী এবং পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রী মিলেভার নামটিই সর্বাগ্রে আসে।

০৪. ১৯১৯ সালে মিলেভা-আইনস্টাইন-র বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে; আইনস্টাইন হয়ে উঠতে থাকেন জগদ্বিখ্যাত আর মিলেভা হারাতে থাকেন লােকচক্ষুর অন্তরালে, আপেক্ষিক তত্ত্বের স্পর্শ থেকে অনেক দূরে। বিবাহ বিচ্ছেদের দুই বছর পর ১৯২১ সালে আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানে নােবেল পুরস্কার পান। এবং প্রাপ্ত অর্থের একটি বিরাট অংশ মিলেভাকে প্রদান করেন। এতেও অনেকে মনে করেন, যদি মিলেভার অবদান না-ই থাকবে তবে শুধু শুধু কেন তাঁকে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে দিবেন? এটি একটি প্রশ্ন বটে! তবে এর সবচেয়ে গ্রহণযােগ্য উত্তর হিসেবে অনেকে অনুমান করেন সম্ভবত বিবাহ-বিচ্ছেদের পুর্বে তাদের মধ্যে এমন একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল যে, নােবেল পুরস্কারের অর্থ তিনি মিলেভা এবং তাঁর সন্তানদের জন্য বিনিয়ােগ করবেন। কিন্তু বক্তব্যটি প্রশ্ন-বিদ্ধ; কারণ তাহলে কি আইনস্টাইন এতােটাই নিশ্চিৎ ছিলেন যে তিনি নােবেল প্রাইজ পাবেনই? অতএব এক্ষেত্রেও কিছু রহস্য রয়েই গেছে যা ঠিক ও-ভাবে সর্বজ্ঞাত নয়।

সে সময়ের সমাজ নারীর প্রতিভাকে সুদৃষ্টিতে বিচার করতে কার্পণ্য দেখায় নি তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা কষ্টকর। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয়-সামাজিক-ব্যক্তিক নানা কারণেই নারীর বিজ্ঞানদক্ষতা কারও দৃষ্টি কাড়ে না। মিলেভা এসেছিল সার্বিয়ার এক উপেক্ষিত শহর নাভিসাদ থেকে। স্বাভাবিক কারণেই অভিজাত ইউরোপীয় সমাজে অমন উপেক্ষিত শ্রেণির এক শ্লাভ-নারী বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না- এমন চিন্তাও তাঁর প্রত্যাশার সামনে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে বার বার। সহপাঠী আইনস্টাইনের সাথে যে-সমীকরণে আবদ্ধ হলেন তারও সুষ্ঠু সমাধান হলাে না। মিলেভা-আইনস্টাইনের প্রেমকে আইনস্টাইনের পরিবার ভালাে চোখে দেখেনি। আইনস্টাইনের সন্তান গর্ভে ধারণ করেও বিয়ের আশু না দেখে ভেঙ্গে পড়েন মিলেভা; অথচ গর্ভপাতের পক্ষপাতী হতে পারেন না সে। মেধা পরিস্ফুটনের এ- সময়টা তাঁর জন্য ছিল খুবই কষ্টের। এক সময় কুমারী মাতা হলেন মিলেভা। শিশুটিকে নাভিসাদে মায়ের কাছে রেখে পুনরায় জুরিখে এসে বিজ্ঞানের রাজ্যে সােজা হয়ে দাঁড়ানাের চেষ্টা করতে থাকেন। জ্ঞানপিপাসু এই মহিয়সী নারী যে নিজকে সীমাবদ্ধ জ্ঞানের পরিধিতে আবদ্ধ রাখতে চান নি, বিষয়টি নিঃসন্দেহে তারই সাক্ষ্য দেয়। আইনস্টাইনের বিবাহপূর্ব-সম্তান ধারণ করে শিক্ষাগ্রহণে যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছিল তা তিনি খুব সহজে মেনে নেন বি; আর মেনে নেন নি বলেই দুর্বল ডিগ্রিকে পি.এইচ.ডি দ্বারা ঢেকে রাখতে চেষ্টার ক্রুটি করেন নি।

মিলেভাকে উপরে তােলার বা খাটো করার প্রয়াস প্রদর্শন নিরর্থক মিলেভা মিলেভা-ই। কেউ মন্দ বললেই সে মন্দ হয়ে যাবে না, আর তাঁর মধ্যে যা ছিল না, তা দিতে চাইলেও তাঁকে আলােকিত করা যাবে না। আইনস্টাইনের সাথে দাম্পত্যজীবন তাঁর সুখের হয় নি তাই বলে দ্বিতীয় বিয়েও করেন নি। আইনস্টাইনের সন্তানদেরকেই আঁকড়ে ধরে সারাটি জীবন কাটিয়েছেন। নােবেল-পুরস্কারের অর্থ তাঁকে দেয়া হয়েছিল কিন্তু তাতে অর্থকষ্ট দূর হয় নি। ওই সময় জার্মান মুদ্রার মান পতনে প্রাপ্ত অর্থের উপযােগিতা অনেক কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি জটিল মানসিক রােগাক্রান্ত ছােট ছেলে এডুয়ার্ডের চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হতে থাকে। এ সময় মিলেভার শারীরিক কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয় যার কারণে হাঁটাচলা করতেও বেশ অসুবিধা হতাে। উচ্চশিক্ষা লাভে ব্যর্থতা, স্বামীর ভালােবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়া, পদার্থবিদ হতে না পারা, অর্থ-কষ্ট, সর্বোপরি ছােট ছেলে এডুয়ার্ডের অসুস্থতার দায়ভার কাধে নিয়ে সাংসারিক কাজে আটকে পড়ার কারণে মিলেভা হারিয়ে ফেলেন তাঁর বিজ্ঞান-প্রতিভা, পরিণত হন এক সাধারণ স্লাভ-রমণীতে। ব্যর্থতার জীবন নিয়ে নানা বিরূপতার সাথে লড়তে লড়তে অবশেষে করুণ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান তিনি।

পুত্রের সাথে দেখা করতে স্যানাটোরিয়ামে যাওয়ার পথে বরফের ওপর ওই-যে মুখ থুবড়ে পড়লেন মৃত্যু আর তাঁর পিছু ছাড়ল না। ওই ঘটনার তিন মাসের মধ্যেই ১৯৪৮ সালের ৪ আগস্ট, ৭২ বছর বয়সে জুরিখে মিলেভার জীবনাবসান ঘটে। মৃত্যু হয় এক জ্বলে উঠতে না-পারা বিজ্ঞান-প্রতিভার। জুরিখের ‘নরধেইম’ কবরস্থানে তাঁকে কবরস্থ করা হয়। এবং কবরটি অদ্যাবধি অক্ষত আছে।

স্বামীর সাথে মিলেভা মারিক

দুই ছেলের সাথে মিলেভা মারিক

মন্তব্য: