ছোটকাগজ নিজেই নিজের রক্ষাকর্তা’।।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

শিকদার ওয়ালিউজ্জামান সম্পাদনা করেন লিটল ম্যাগাজিন ‘সপ্তক’। এর বাইরেও তার সম্পাদনার পরিসর বিস্তৃত ও বহুমুখী। পেশাগত জীবনে শিক্ষকতা করছেন। কবিতাকর্মী ও সাহিত্য সংগঠক হিসেবেই সমধিক পরিচিত। স্থায়ী বসবাস মাগুরায়। লেখালেখি ও সংস্কৃতিচর্চায় তার নিবেদন প্রশংসিত হয়েছে দেশে-বিদেশে। লিটলম্যাগচর্চার হালহকিকত ও সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন খোলা কাগজ-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিক হাসান

সপ্তক’র প্রথম সংখ্যা কখন প্রকাশিত হয়? কোন লক্ষ্য থেকে সম্পাদনায় ব্রতী হয়েছেন? অর্জন বা বিসর্জন কী?


সপ্তক’র প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। সপ্তক’র আগেও আমি মাগুরাতে নদীপ্রবাহ ও সাহিত্য আড্ডা নামে দুটি পত্রিকা সম্পাদনা করি। মূলত ওই দুটি কাগজের মাধ্যমেই আমরা ছোটকাগজের যে ধারণা আছে সেই ধারণার বীজ অঙ্কুরিত হতে শুরু করেছিল। প্রথম ১৯৯৯ সালে কাগজ করতে শুরু করি সেটা নিতান্তই খেয়াল। ওগুলোকে মাগুরার স্থানীয় লেখিয়েদের সাহিত্যচর্চার একটি মুখপাত্র বলতে পারেন। স্থানীয় অগ্রজরা পত্রিকা করতেন। তারই রেশ ধরে সম্পাদনার কাজ শুরু করি। কিন্তু সম্পাদনার যে গুরু দায়িত্ব আছে তা বুঝতে দশটি বছর আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। মাগুরা জেলায় যে কাগজচর্চা হয়, একসময় উপলব্ধি করতে থাকি একটা পরিবর্তন আনতে হবে। পার্শ্ববর্তী যশোর, ফরিদপুর আর বরিশাল জেলার বিভিন্ন ছোটকাগজ দেখার পর মাগুরার চর্চাটাকে দেশব্যাপী ব্যাপ্ত করার ব্রত গ্রহণ করি। সেই ব্রত থেকে সপ্তক সম্পাদনা। সপ্তক’র মাধ্যমে কিছুটা হলেও মাগুরাকে ছোটকাগজের আন্দোলনের ধারণা দিতে পেরেছি। কোনো আন্দোলনই বিফলে যায় না। বিগত দশ বছরে আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। সপ্তক’র মাধ্যমে সপ্তকের নিজস্ব একটি বলয় সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অনেকেই এখন ভালো লিখছেন। এটাই আমাদের আনন্দ। আর বিসর্জন তো থাকেই। মফস্বলের ছোটকাগজ বিক্রির স্বাদ খুব কম পায়। নিজেদের পকেটে টাকা দিয়ে, বিজ্ঞাপন ছাড়াই সপ্তক প্রকাশিত হয়। আর্থিক বিসর্জনকে আমরা কোনোরকম আমলে নিই না। কাগজটি সপ্তক পরিবারের জন্য নেশা হয়ে গেছে।

বর্তমানে লিটলম্যাগচর্চা কেমন হচ্ছে? আপনার দৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ম্যাগ কোনগুলো?


প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যবৃত্তির বিপরীতে রকমারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ভিন্ন চিন্তার বিশেষ ধারার প্রকাশনাই লিটল ম্যাগাজিন। বাংলাসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শনকে প্রথম ছোটকাগজ বলা হলেও, সার্বিকভাবে প্রথাবিরোধী মননশীলতার ধারায় প্রমথ চৌধুরীর সবুজপত্রকেই প্রথম লিটল ম্যাগাজিন বলা যেতে পারে। এরপর বিশ শতকের তৃতীয় দশকে বাংলা ভাষার ছোটকাগজ প্রকাশিত হতে থাকে। তার অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত। সাতচল্লিশ পরবর্তীকালে পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশে লিটল ম্যাগাজিনের একটি ক্ষীণ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। তবে ষাটের দশক হচ্ছে বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সবচেয়ে উর্বর সময়। এরপর আশির দশক থেকে ছোটকাগজ নতুন উদ্যমে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন ভিন্ন অভিপ্রায়ে প্রকাশিত হয়ে আসছে। তবে একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে লিটলম্যাগ চর্চাটা কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। ছোটকাগজের ভিতরে দুঃখ, ব্যথা ও ক্ষত আছে, সে খবর কেবল কয়েকজন ছোটকাগজের বিদগ্ধ লেখকরাই রাখেন। আজকাল ছোটকাগজের নামে অধিকাংশই ধান্দাবাজি করছেন। কেউ এর থেকে লিফট নিচ্ছেন গন্তব্যে পৌঁছে যেতে। অনেকেই অ্যান্টি-এস্টাবলিশমেন্টের বুলি আওড়ান, আবার সেই এস্টাবলিশমেন্টের সুবিধাদি ভেঙে খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ধারণা কিন্তু কাগজের নির্মাণ এবং সম্পাদনার মধ্যেই থাকে। আমাদের মধ্যে অতিক্রম করার প্রবণতা তো নেই-ই, উল্টো একটি ছোটকাগজ অন্য একটি ছোটকাগজকে সহ্য করার ক্ষমতাই অর্জন করতে পারিনি অনেকেই। বরং নিজের চরিত্র হারিয়ে অন্যের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলছি। একে অন্যকে তাচ্ছিল্য করছি। ছোটকাগজের সাহিত্য নির্মাণের পথে এই চরিত্র বিরাট অন্তরায়।

লেখক সৃষ্টিতে লিটলম্যাগের ভূমিকা কতটুকু? বর্তমানে লেখক সৃষ্টি হচ্ছে কি?


ছোটকাগজের ধারণা কখনোই ছোট কিছু নয়। ছোটকাগজ অবশ্যই পাঠক সৃষ্টি করছে। তরুণ লেখক বিশ্বাসের জায়গা পাচ্ছে, উঠে দাঁড়াচ্ছে। প্রকৃত পাঠক ও লেখকের সত্যিকার প্লাটফর্ম ছোটকাগজ। ছোটকাগজই পাঠক ও লেখকের প্রতিনিয়ত যাওয়া-আসার পথ সৃষ্টি করে। ছোটকাগজ যদি লেখক সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে পাঠকও সৃষ্টি করছে সমপরিমাণ। অতীতে তাকালেই আমরা এর সত্যতা পাই। কিছু বড়কাগজের ঔদ্ধত্য আর পাঠক সমান্তরাল। আবার বড় লেখকের কাছে বড় কাগজের ভাঁড়ামিও থাকে। বড় লেখক সৃষ্টি কিংবা বড় কাগজের অহংকার এ দুটোই সৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু ছোটকাগজের কল্যাণেই। নতুন প্রজন্ম, নতুন লেখক, নতুন সম্পাদকের চাপে ছোটকাগজ থেকে অগণিত লেখক বেরিয়েও যাচ্ছে। তারা বেরিয়ে যায় বড় লেখকের খেতাব নিয়েই। কিন্তু পাঠকের মান কিংবা লেখকের মান/ স্তর রাষ্ট্রীয় অনেক উপাদানের সঙ্গে যুক্ত। এমন অবস্থার ক্ষেত্রে অবশ্য ছোটকাগজের কিছুই করার থাকে না। কমিটমেন্টই পারে যথার্থ পাঠক বা লেখক সৃষ্টি করতে।

সম্পাদনায় কী ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করছেন?


ছোটকাগজচর্চার ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা সবসময় আমাদের ভালোবেসে জড়িয়ে রাখে। মাগুরা কিন্তু ছোট একটি জেলা শহর। প্রথমদিকে আমরা দ্বারস্থ হতাম বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে। ‘নদীপ্রবাহ’, ‘সাহিত্য আড্ডা’, ‘জলসিঁড়ি’ ও ‘সপ্তক’ প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা কিছু বিজ্ঞাপন পেয়েছি কিন্তু বেশিরভাগ জায়গা থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। অন্যদিকে বিজ্ঞাপনদাতাদের গড়িমসিতে বিপাকেও পড়েছি। ছোটকাগজের ক্রেতা সীমিত থাকায় অনেক ছোটকাগজ দু’একটি সংখ্যা প্রকাশের পর বন্ধ হয়ে যায়। এতসব প্রতিবন্ধকতা কিন্তু সপ্তক সাহিত্য চক্র’র প্রকাশনাকে বন্ধ করতে পারেনি। আমরা নিজেদের পকেট থেকে আর সাহিত্যপ্রেমীদের সহযোগিতায় ছোটকাগজের চর্চাকে এগিয়ে নিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় ‘সপ্তক’র ৭টি সংখ্যা ও ‘জলসিঁড়ি’র ৮টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে আমরা আর বিজ্ঞাপনের ধার ধারি না। সাহিত্যপ্রেমই আমাদের ছোটকাগজ প্রকাশের প্রধান শক্তি। সপ্তক আর জলসিঁড়ি সম্পাদনার ক্ষেত্রে তরুণদেরই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। অনেক ক্ষেত্রে, অনেক সুনামী লেখক আমাদেরকে লেখা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিমুখও করেছেন। আমরা হোঁচট খাইনি। সপ্তক বিষয়ভিত্তিক করার কারণে অনেক সময় নির্ধারিত বিষয়ের কিছু পোক্ত লেখার প্রয়োজন বোধ করি। অবশ্য সেটা তরুণদের ওই বিষয়ে ঋদ্ধ করতেই আমাদের এই প্রয়াস থাকে। কিন্তু অনেক লেখকের (উপরোক্ত সুনামী) গড়িমসিতে আমরা সেই বিষয়ে কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়েছি বিভিন্ন সময়। যার ফলে পত্রিকার কাক্সিক্ষত ম্যাটারে ঘাটতি থেকে গেছে। এটা সম্পাদকের জন্য এক পীড়ার কারণ। আমরা দমে থাকিনি তারপরও।

কী বৈশিষ্ট্যে লিটলম্যাগ ও সাহিত্যপত্রিকাকে আলাদা করবেন? ছোটকাগজের সঙ্গে বাণিজ্যিক কাগজের কী পার্থক্য থাকা জরুরি?


লিটলম্যাগে নির্দিষ্ট কমিটমেন্ট থাকে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যও থাকে। সেই লক্ষ্য পূরণ হলে অনেক ছোটকাগজ সম্পাদকই তার কাগজের ইতি টানেন। সাহিত্যপত্রিকায় নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং কমিটমেন্ট না থাকায় দীর্ঘমেয়াদি চলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকে না। আর সাহিত্যের কাগজই একটা সময় বাণিজ্যিকতার চিন্তা লালন করে। আর তখনই তার সীমাবদ্ধতার শুরু হয়। অনেক বাণিজ্যিক কাগজের সাহসই নেই সাহসী তরুণদের লেখা ছাপানোর। এই সাহসের ক্ষেত্রে ছোটকাগজ সবসময়ই অগ্রগামী। বাণিজ্যিক কাগজের সাহস থাকা বা না থাকার পেছনে অবশ্য বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে। এ কারণে তরুণদের নতুন লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে, সবসময়ই ছোটকাগজ দৈনিকের পাতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায়। বুঝতে হবে, দৈনিক কারা প্রকাশ করে আর কারা ছোটকাগজ করে। এই উপলব্ধির মধ্যে দুই মিডিয়ার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে পড়ে। বাণিজ্যিক কাগজে প্রকাশ হওয়া মাত্র কোনো তরুণ কবি দাম্ভিকতায় আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন। যা তার লেখকসত্তার অগ্রগামিতাকে থামিয়ে দিতে পারে। আবার ছোটকাগজে প্রকাশিত হয়েও অহমে আটকা পড়েন অনেকেই। আসল কথা কোথায় ছাপা হবে, না হবে তা ভুলে নিয়ত অন্যকে পড়া ও লেখার দিকে মনোযোগী হওয়াই তরুণের কর্তব্য। সত্যিকারের লেখা হয়ে উঠলে, ছাপাছাপির ক্ষেত্রে কেউ কারওর ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে না। বরং ভালো লেখাটি ছেপে উভয় কাগজই প্রধান হয়ে উঠবে।

সম্পাদনা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? বিদ্যমান বাস্তবতায় লিটলম্যাগচর্চার গুরুত্ব কতটুকু?


সম্পাদনা নিয়ে তেমন সিরিয়াস হইনি কখনই। আগেই বলেছি, ছোট্ট শহরে আমাদের চর্চা। সীমাবদ্ধতাও অনেক। এ সকল সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠতে আর আমাদের প্রস্তুত করে তুলতেই তো দশ বছর হাওয়া! তবে, এখন কিছুটা আত্মবিশ্বাস, আস্থা ও কমিটমেন্টের জায়গা সৃষ্টি করতে পেরেছি। এটাই আমাদের দশ বছরের অর্জন। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনেক বিষয় এখনো আনটাচ্ড রয়ে গেছে। সপ্তক সন্ধানী দৃষ্টিতে সেখানে পৌঁছাতে চায়। সেই পরিকল্পনাতেই আমরা এগোচ্ছি।

বিদ্যমান বাস্তবতা’ বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। যদি কেউ বলেন এমন পরিস্থিতিতে ছোটকাগজের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসছে, আমার কাছে তা হাস্যকর লাগে। ছোটকাগজের মাধ্যমেই দেশের সাহিত্যের গতি-প্রকৃতি, তরুণ লিখিয়েদের বোঝাপড়া ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহস স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাহলে ছোটকাগজের গুরুত্ব বা প্রয়োজন ফুরাবে কেন? ছোটকাগজের উপযোগিতা কখনো ফুরায় না। ছোটকাগজ নিজেই নিজের রক্ষাকর্তা। তাই ছোটকাগজের ব্যর্থতা বলে কিছু নেই। যুগের মেরুকরণ যেভাবেই হোক না কেন ছোটকাগজ টিকে থাকবে। বিশ্বায়ন মানে এই নয়, বর্তমানের সমস্ত আধুনিকতাই ছোটকাগজের চিন্তাকে ক্রান্তির দিকে নিয়ে যাবে। যদি তাই হয়, তবে সমাজ-মানুষ-সভ্যতা কিছু কি থাকে?

কোনো কোনো লিটলম্যাগ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হিসেবেও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এটাকে কীভাবে দেখেন?


যে চরিত্রকে ঘিরে লিটলম্যাগের যাত্রা চলমান থাকা উচিত, সেই চরিত্রকে ধারণ করছে কয়টি লিটলম্যাগ? যেখানে আপনার নিজের চরিত্র নিয়ে অন্য কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন এবং তোলেনও, সেই চরিত্র নিয়ে আপনি প্রতিষ্ঠান হলেন বা হওয়ার খায়েশ শো করলেন তাতে কী আর পার্থক্য থাকে? তাতে প্রকৃত ছোটকাগজের কোনো মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হন, দোষের কিছু দেখছি না, কিন্তু আপনি কতক্ষণ সৎ আর আপসহীন থাকতে পারবেন সেটাই বিষয়। ছোটকাগজ প্রকাশ করলেন, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হলেন আবার বেশ্যাবৃত্তিও করলেন তা তো হয় না। ছোটকাগজ, সে যে ধারায়ই প্রতিষ্ঠিত হোক না কেন, সৎ আর মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এবং প্রতিশ্রুতির ধারায় এগুলে ছোটকাগজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হওয়া দোষের কিছু দেখছি না।

সপ্তক’র প্রকাশিত সংখ্যা কতটি? বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোন সংখ্যাটি, কেন?


২০২১ সাল পর্যন্ত সপ্তক’র প্রকাশিত সংখ্যা সাতটি। সপ্তক সবসময় কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে ভাবার প্রয়াস করে। প্রথম দুটি সংখ্যা প্রকাশের পর আমরা প্রত্যেকটি সংখ্যা বিষয়ভিত্তিক করার চেষ্টা করেছি। সেই হিসেবে প্রত্যেকটি সংখ্যাই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে বলে মনে হয়। প্রতিটি সংখ্যাই আমার সন্তানের মতো। তার কারণ আমাদের প্রতিটি সংখ্যাই অনেক পরিশ্রম আর সাধনার ফল। বিশেষ কাউকে তুষ্ট করতে বা চামচামি করতে কোনো সংখ্যা করিনি। সবসময় নীতিতে অটল থাকার চেষ্টা করেছি। তারপরও বিশেষ ভালোবাসার জায়গা তো থাকেই। ২০১৪ সালে আমরা অকালপ্রয়াত পাঁচ কবিকে নিয়ে (সুকান্ত ভট্টাচার্য, আবুল হাসান, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, শামীম কবির ও আপন মাহমুদ) ক্রোড়পত্র করেছিলাম। সংখ্যাটি বেশ আবেগের জায়গা সৃষ্টি করতে পেরেছিল।

কথাসাহিত্যের কাগজ হাতেগোনা, কবিতার কাগজ অগণন। নেপথ্য রসায়ন কী বলে মনে করেন?


১৯৬৬ সালে কামাল বিন মাহতাব ছোটগল্পকেন্দ্রিক ছোটকাগজ ‘ছোটগল্প’ সম্পাদনা করেন। সাঈদ জুবেরী ও জাহিদ হায়দার ‘বিপক্ষে’ নামে কথাসাহিত্যের কাগজ করেছেন। তিতাস চৌধুরী সম্পাদনা করেছেন ‘অলক্ত’। ২০০২ সাল থেকে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর কথাসাহিত্যের কাগজ ‘কথা’ সম্পাদনা করেছেন। ‘সংবেদ’ করেছেন পারভেজ হোসেন। পাপড়ি রহমান সম্পাদনা করেছেন ‘ধূলিচিত্র’, জেসমিন মুন্নী করেছেন ‘দ্রাঘিমা’। এখনো গল্পের ছোটকাগজ ‘গল্পপত্র’ সম্পাদনা করছেন মাসউদ আহমাদ, গল্প ও গল্পভাষ্যের ছোটকাগজ ‘গল্পকথা’ প্রকাশ করছেন চন্দন আনোয়ার। গল্পের ছোটকাগজ ‘উত্তর ফাল্গুনী’ সম্পাদনা করছেন শোয়ায়েব মুহাম্মদ, ‘বাঁক’ সম্পাদনা করছেন মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। বগুড়া থেকে গল্পের কাগজ ‘অপরাজিত’ ও ‘পারাপার’ সম্পাদনা করছেন নাহিদ হাসান রবিন। এর বাইরেও ‘সম্প্রীতি’র স্মৃতিকথা সংখ্যা সম্পাদনা করেছেন কথাসাহিত্যিক স্বকৃত নোমান এবং ‘ময়ূখ’-এর ভাষাপ্রেম সংখ্যার সম্পাদনা করেছেন ভোলা দেবনাথ। বাংলাদেশে ছোটকাগজের ইতিহাস কিন্তু কম সমৃদ্ধ নয়। প্রকাশিত কাগজের অগণন সংখ্যায় কিন্তু গল্প-উপন্যাসের ওপর আলোচনা হয় প্রায়শই। এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা নিয়েও কাজ কিন্তু ছোটকাগজেই হচ্ছে। এত কিছুর পরও দেখা গেছে কবিতার কাগজ অনেক। কথাসাহিত্য বা ছোটগল্পের কাগজ কম। নেপথ্যের কারণ হতে পারে শ্রম। কথাসাহিত্যের কাগজ করা সত্যিই শ্রমসাধ্য বিষয়। কবির চেয়ে গল্পকারের সংখ্যা তো অনেক কম। ক্রিটিকের সংখ্যা তো হাতে গুনে বলে দেওয়া যায়। ছোটগল্পের আরও বিকাশ দরকার। এজন্য আরও প্রাণবন্ত গল্পবিষয়ক ছোটকাগজ হওয়া দরকার। মানুষের সৃষ্টিকাল থেকে কথাই কিন্তু আরাধ্য। আর সেই কথাকে এগিয়ে নিতে আরও গল্প দরকার, আরও বেশি কথাসাহিত্য দরকার। আর সেটা অবশ্যই হতে হবে জীবনমুখী।

লিটলম্যাগের গোষ্ঠীবদ্ধতাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?


ছোটকাগজ, বড় কাগজ বা সাহিত্যে গোষ্ঠীপ্রথা দেখছি বহুকাল পূর্ব থেকেই। এটাকে কখনো দেখা গেছে অপকৌশল হিসেবে। কখনো দেখা গেছে প্রতিক্রিয়াশীলতার মোড়কে। তবে আমাদের সমাজবিন্যাস এমন নয়, গোষ্ঠীবদ্ধতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি অস্বীকার করা যায়। কোনো না কোনোভাবে আমরা প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়বদ্ধ। এমন নয় যে, কল্যাণকর কোনো কাজে প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো সহযোগিতা নেওয়া যাবে না। যাবে। তবে ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে নয়। এই ব্যক্তিত্বকে সজাগ আর সবল রাখার প্রশ্নেই কিন্তু নির্দিষ্ট গোষ্ঠী হয়ে ছোটকাগজের মর্যাদাকে অটুট রাখা। তবে আমি মনে করি, তুমি-আমি চর্চাটা নেতিবাচক, সে যত বড় গোষ্ঠীই হোক। এ এক হীনম্মন্যতা। এটাকে আমি বা সপ্তক পরিবার কোনোভাবেই সমর্থন করি না। সামগ্রিক অপশক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গড়ে তোলাটাই ছোটকাগজের আদর্শ হওয়া উচিত। তবে কথিত প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মাধ্যমে নয়।

দুই বাংলার লিটলম্যাগচর্চার মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য দেখতে পান?


দুই বাংলার অনেক কাগজই প্রতিষ্ঠান হয়ে যাচ্ছে। ছোটকাগজের চরিত্রকে তারা আর ধরে রাখতে পারছে না। ওপার বাংলার ছোটকাগজের বিষয় বৈচিত্র্য আছে। কিন্তু, অনেক লেখকের চিন্তার পরিসর অনেকাংশেই গতানুগতিক, ওদের চিন্তা এখনো অতীত। ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা তাদের নেই। ফলে, নতুন কিছু আসছে না। এক ধরনের একমাত্রিক জীবনমুখী ধারা ওদের লেখকদের চালিত করে। ফলে, নির্দিষ্ট ক্লাসের নিয়ন্ত্রিত বিষয়ের মধ্যে ওখানকার ছোটকাগজের লেখকরা আবর্তিত। ওদের কাগজে ভাবনিয়ন্ত্রিত সাহিত্যের আদানপ্রদান কম। ওদের বর্ণনাধর্মিতাই বেশি। পশ্চিমবাংলায় কিন্তু পর্যাপ্ত লেখক রয়েছেন তারপরও ছোটকাগজের পরিধি বাড়ছে না। এটা দুঃখজনকই বটে। বাংলাদেশের ছোটকাগজে প্রতিশ্রুতিশীল লেখক কমে যাচ্ছে। যারা লিখছেন তাদের চরিত্র বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। ক্লাসিক চর্চাও কমে যাচ্ছে। গোষ্ঠীবদ্ধতার বাসনা এখানকার লেখকদের শেষ করে দিচ্ছে। তারকা হতে গিয়ে লেখক হওয়ার কমিটমেন্ট হারিয়ে ফেলছেন প্রায় শতভাগ লেখক। সপ্তক সম্পাদনা করতে গিয়ে এ আমার বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা। আমাদের সাময়িক প্রাপ্তির আনন্দ পেয়ে বসেছে। ছোটকাগজ কমে যাচ্ছে। যা থাকছে তাতে ছোটকাগজের চরিত্র থাকছে না। মৌলিক লেখক কমছে। সেই সঙ্গে পাঠকও কমছে। এ জন্য সম্পাদকদের মূর্খতা আর প্রতিষ্ঠান হওয়ার খায়েশই অনেকটা দায়ী বলব।

আপনার জন্ম-জেলার (মাগুরা) লিটলম্যাগচর্চার ইতিহাস জানতে চাই। এখানে আপনার পছন্দের লিটলম্যাগ আছে কি?


চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কাজী কাদের নেওয়াজ, সৈয়দ আলী আহসান, সৈয়দ আলী আশরাফ, আজিজুল হক, ফররুখ আহমদ, ডা. লুৎফর রহমান, গোলাম রসুল, আফসার উদ্দীনের পদচারণায় মাগুরা সমৃদ্ধ হলেও তেমন কোনো সাহিত্যের কাগজ প্রকাশ সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত নই। তখন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যে সমস্ত ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো সেগুলোই সাহিত্যকর্ম প্রকাশের পরিচায়ক

সাত ও আট এর দশকে মাগুরার সাহিত্যাঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের সূচনা হয়। ১৯৭৫ সালে গড়ে ওঠে নবগঙ্গা সাহিত্য গোষ্ঠী। পরবর্তীকালে জেলা সাহিত্য পরিষদ, জাতীয় সাহিত্য পরিষদ (মাগুরা শাখা), লুৎফর রহমান একাডেমী’র আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সময় থেকে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে বিভিন্ন কলেবরে। বি এম এ হালিম সম্পাদনা করেন ‘নবগঙ্গা’। ‘নবগঙ্গা’র নয়টি সংখ্যা সম্পাদনা করেন ঔপন্যাসিক দাউদ হোসেন। ১৯৭৭ সালে অনিল দে মনি ‘বর্ণালী’ সম্পাদনা করেন। ১৯৭৯ সালে সাইফুজ্জামান (রোমিও জালালী) কবি কাদের নওয়াজের নামে কাদের নওয়াজ সাহিত্য সংসদ (কানসাস) প্রতিষ্ঠা করেন। রোমিও জালালী ‘শব্দ’ নামে একটি কাগজ করেন। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয় কবিতাপত্র ‘আমরা বারোজন’। দাউদ হোসেনের সম্পাদনায় ১৯৮৭ সালে ‘সময়’, ১৯৮৯ সালে ‘অনুপ্রাস’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। ‘ঈক্ষণ’ নামে একটি কাগজ সম্পাদনা করেন শামসুজ্জামান পান্না। ছয় সংখ্যার পর বর্ধিত কলেবরে ‘ঈক্ষণ’ সম্পাদনা করেন রোমিও জালালী। আটের দশকে আরও কিছু কাগজের মধ্যে রয়েছে সুশীল শিকদার সম্পাদিত ‘অনাদৃতা’, রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত ‘চেতনা’, মাসুদুর রহমান সম্পাদিত ‘হাতিয়ার’, মিয়া ওয়াহিদ কামাল সম্পাদিত ‘জীবন আজীবন’ ও রোস্তম মল্লিক সম্পাদিত ‘প্রভাতি’ ও ‘চয়ন’। নবগঙ্গা সাহিত্য গোষ্ঠী ‘উদীচী’ নামে আরও একটি সাহিত্যের কাগজ করত। এগুলোর সম্পাদনা করেন ভোলানাথ শিকদার, বিশ্বাস স্বপন ও রূপক আইচ।

নব্বইয়ের দশকে ইব্রাহীম আলী মোনাল সম্পাদনা করেন ‘স্রোতস্বিনী’, ‘নির্মাণ’ ও ‘বনফুল’। ‘বনফুল’-এ আমার প্রথম কবিতা স্থান পায়। নব্বইয়ের শেষের দিকে লেখক জোট প্রকাশ করে ‘লেখক’ ও ‘শেকড়ের সন্ধানে’ দুটি কাগজ। ১৯৯৪ সালের ২১ ফ্রেরুয়ারি প্রকাশিত হয় ‘দৃষ্টি’র প্রথম সংখ্যা। ১৯৮৯ সালে ‘অভিজ্ঞান’ সম্পাদনা করেন সাগর জামান। এ ছাড়াও তিনি ১৯৯১ থেকে সম্পাদনা করেন ‘নীল আকাশ সোনালী রোদ্র’, ‘অমল ধবল দিন’, ‘শব্দের আর্তনাদ’, ‘আলোকের এই ঝর্ণাতলে’। এ সময়ে কাজল খন্দকার সম্পাদিত ‘হিজিবিজি’, শামীম আহমেদ খানের ‘জনক’, ‘মৌনমুখর’, ‘সশস্ত্র হবো অজস্র মৃত্যুতে’, ‘প্রতিক্রিয়া’, অলোক বোসের ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’, সাহেব আলী সম্পাদিত ‘মুক্তি’ এবং বিবেকানন্দ মজুমদার, ইব্রাহীম আলী মোনাল, এম মনির-উজ-জামান ও ভোলানাথ সিকদারের যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘উদয়’।

একুশ শতক মাগুরা সাহিত্যের বাঁক বদলের কাল। ১৯৯৮ সালে ‘অনির্বাণ সাহিত্য সংসদ’-এর প্রকাশনায় আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘নদীপ্রবাহ’। ২০০৮-এ সঞ্জিত বসুর সম্পাদনায় ‘মাটি’ এবং জিল্লুর রহমান খানের সম্পাদনায় ‘আঁচড়’ প্রকাশিত হয়। ২০০৯ সালে আমার সম্পাদনায় ‘সাহিত্য আড্ডা’ প্রকাশিত হয়। ২০১১ মাগুরা সাহিত্যে বৈপ্লবিক সময়। ‘সপ্তক সাহিত্য চক্র’ নতুন আঙ্গিকে মাগুরার কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, নাট্যকার ও সাহিত্যপ্রেমীদের নিয়ে শুরু করে পথ চলা এবং ‘সপ্তক’ কাগজটির যাত্রা শুরু হয়, এখনো চলছে। ২০১২ সালে জলসিঁড়ি প্রথম তিন সংখ্যা শিকদার ওয়ালিউজ্জামান সম্পাদনা করার পর বর্তমানে এটি সম্পাদনা করছেন এম মনির-উজ-জামান। এ সময়ে আরও কয়েকটি কাগজের মধ্যে শামীম খান সম্পাদিত ‘চৌরঙ্গী’, অনিল দে মনি সম্পাদিত ‘সেতু’, সোহেল সবুজ সম্পাদিত ‘কবিতা এক্সপ্রেস’ ও ‘সেমিকোলন’ এবং সুদেব চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘গেরিলা’ উল্লেখযোগ্য।

প্রত্যেকটা লিটলম্যাগই নির্দিষ্ট শ্রেণির, নির্দিষ্ট চিন্তার কিছু মানুষের চেতনা নিয়ে গড়ে ওঠে। সেভাবেই তারা আবর্তিত হয়। লোক, সপ্তক, শালুক এগুলো লিটলম্যাগ নয়, মিডি ম্যাগ। মাগুরার যে সব কাগজ হয়েছে এগুলো কোনো সময়েই লিটলম্যাগের আওতায় পড়েনি। এগুলো মূলত সাহিত্যপত্রিকা। এগুলো কিছু গৎবাঁধা নিয়মে আবর্তিত হয়েছে। মাগুরার শেকড়, মাগুরার লোকসংস্কৃতি, ঐতিহ্য কমই উঠে এসেছে এসব কাগজে। মাগুরার সাহিত্যপত্রিকাগুলো নিজস্ব ঘরানারও হয়ে ওঠেনি। মাগুরার অগ্রজ কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে অনুজদের তেমন সম্পর্ক কোনোকালেই গড়ে ওঠেনি। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ আলী আহসান, ফররুখ আহমদ, আজিজুল হকের নাম অতি উজ্জ্বল। শেকড়ের সঙ্গে হয়তো তাদের সংযোগ ছিল কিন্তু মাগুরার লিখিয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল খুবই কম। যোগাযোগ না থাকার কারণে সাহিত্যে সমসাময়িক হালচাল জানার সুযোগ এখানকার লিখিয়েদের খুবই কম হয়েছে।

উন্নতমানের লিটলম্যাগের সঙ্গে পরিচয় তাদের তেমন হয়নি। মাগুরার গণ্ডি থেকে তারা কখনই বের হতে পারেননি। এখানে ছোটকাগজকর্মীদের হয়তো উদ্দেশ্য ছিল মহৎ কিন্তু লক্ষ্য ছিল সংকীর্ণ। অনেক বছর পরে হলেও সপ্তকের মাধ্যমে মাগুরায় লিটলম্যাগ কনসেপ্ট এসেছে। ভবিষ্যতে অনুজপ্রতিমরা এ ধারা অব্যাহত রাখবে হয়তো। লিটলম্যাগ ও সাহিত্যপত্রিকার মধ্যে পার্থক্য এখন বুঝতে পারছে পরের জেনারেশন। সপ্তক লিটলম্যাগ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে… এ কারণে মাগুরা থেকে প্রকাশিত কাগজের মধ্যে সপ্তকই আমার প্রিয় কাগজ।

লিটলম্যাগের নামকরণের (সপ্তক) পেছনে কী ভাবনা কাজ করেছিল?


দেখ ভাই, আমার কোনো কাজই দীর্ঘমেয়াদি ভাবনার ফল নয়। কোনো বিশেষ মুহূর্তে বিশেষ ভাবনা মাথায় জটলা সৃষ্টি করে। সেই ভাবনা, এমনও সময় যায়, রাতের ঘুম গিলে খায়। এক জোছনা রাতে আমি আর কবি হাসান সাব্বির হাঁটছিলাম। আকাশের দিকে তাকাতেই সাত আসমান, সাত তারা, সাত সুরের খেয়াল মাথায় এলো। সাব্বিরের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করলাম। ব্যস, আমাদের পত্রিকার নামকরণও হয়ে গেল। সেই থেকেই সপ্তক। সাত সুরের মোহনা ধরার চেষ্টায় আছি আমরা।

শিকদার ওয়ালিউজ্জামান, কবি, সম্পাদক ও সংগঠক  

মন্তব্য: