মোজাফফর হোসেন এর সাক্ষাৎকার

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

কটা ভাষার অর্থ অনুবাদ করা যায়, রেটোরিক বা সৌন্দর্যকে নয়

মোজাফফর হোসেন

মোজাফ্ফর হোসেন মূলত কথাসাহিত্যিক। পাশাপাশি তিনি কথাসাহিত্য-বিষয়ক প্রবন্ধ লেখেন ও অনুবাদ করেন। বাংলা একাডেমির অনুবাদ উপবিভাগে কর্মরত। ৩টি ছোটগল্প ও ১টি প্রবন্ধ বইয়ের পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অনুদিত গল্পসংকল ‘বিশ্বগল্পের বহুমাত্রিক পাঠ’।  এইখানে তাঁর সঙ্গে মূলত অনুবাদের নানা অনুষঙ্গ ধরে কথা বলেছেন তরুণ কথাশিল্পী অলাত এহ্সান।]

অনুবাদ তো একটা পরিণত কাজ। আপনার কাছে অনুবাদক হয়ে ওঠার প্রস্তুতি কী রকম?

অনুবাদক হয়ে ওঠার জন্য আলাদা করে কোনো প্রস্তুতি আমি নিইনি। তবে হ্যাঁ, ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স করেছি। সেই সুবাদে কিছু প্রস্তুতি হয়ত এই সময়ে নেয়া হয়েছে। আর এর বাইরে আমার সাহিত্যচর্চার সঙ্গে এই কাজটি সম্পৃক্ত, কাজেই সামগ্রিকভাবে আমি অনুবাদের কাজটি বুঝতে চেষ্টা করেছি বা করে যাচ্ছি।

অনুবাদ তো শুধু ভাষার পরিবর্তন নয়, ভাবের অনুবাদের ক্ষেত্রে ভাবের অনুবাদ তো একটা মৌলিক সমস্যা। আপনি এই সমস্যা দূর করতে কী করেন?

অনুবাদে কিছু সমস্যা কখনই দূর হবার নয়। স্পিভাকের কথা নিজের করে বলছি, একটা ভাষার অর্থ অনুবাদ করা যায়, রেটোরিক বা সৌন্দর্যকে নয়। কারণ দুটি ভাষার রেটোরিক সেন্স একও নয়। উদাহরণ হিসেবে আমি পরিচিত একটা ছড়ার কয়েকটা লাইনের কথা বলতে পারি: তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে, সবগাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে। এইযে একপায়ে দাঁড়িয়ে কিংবা উঁকি মারে আকাশে- খুব সরল বিন্যাস, কিন্তু অনুবাদে মূল ব্যঞ্জনা হারাবেই। আমি যেটা করি, দুটি ভাষা তো দুটি সংস্কৃতির বোধকে ধারণ করে, আমি অনুবাদের ভেতর দিয়ে এদুটোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করি।

লেখার সঙ্গে, বিশেষত সাহিত্যের সঙ্গে দেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি-মিথ ইত্যাদির গভীরভাবে যুক্ত। সেক্ষেত্রে অনুবাদের জন্য লেখকের দেশ-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি নয় কি?

বটেই। এর কোনো বিকল্প নেই। সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি যে দেশের সাহিত্য অনুবাদ করবেন সে দেশে কিছুকাল যাপন করতে পারলে। অর্থাৎ ভাষা শেখাটাই এখানে সব না। আমি নিজে এক্ষেত্রে সময় নিয়ে অনুবাদ করি। কিছু কিছু শব্দের স্খানিক অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা করি। বলা যায়, অনুবাদে যতটুকু সময় যায়, তার চেয়ে বেশি সময় যায় টেক্সটকে আত্মস্থ করতে। এর কারণ, অভিধানের অর্থ সবসময় চলে না। যেমন ধরুন, যুক্তরাজ্যে ভধম মানে সিগারেট, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ভধম বলতে হোমোসেক্সুয়াল পুরুষ বোঝায়। অর্থাৎ ভাষা সব সময় কনটেক্সচুয়াল। আপনাকে সেটা ধরতে হবে।

অনুবাদের দক্ষতা অর্জনের জন্য কোনো একটা দেশ বা মহাদেশ এবং ভাষাকেই বেছে নেয়া উত্তম। তাই না?

হুম। সেটি হলে নিজের কাজের প্রতি স্পেসিফিক থাকা যায়। বেসিক্যালি করাও হয় তাই। একজন লেখক তো লেখায় মেজাজ-মর্জি-ছন্দ-গতি দিয়ে লেখেন। অনুবাদেও সেই মেজাজ-ছন্দের জন্য সেই লেখকের ওপর প্রস্তুতি দরকার। এজন্য একজন লেখককে নির্বাচন করাই ঠিক, নয় কি?

সব সময় না। একজন লেখকের ওপর কাজ করলে অবশ্যই একটা দখল চলে আসে যেটা অনুবাদের মানটা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে আমি মনে করি, ভালো পাঠ ও বোঝা থাকলে আপনি যে কাউকে অনুবাদ করতে পারেন। যেমন ধরুন : বিখ্যাত অনুবাদক এডিথ গ্রোসম্যান ইয়োসা-মার্কেস ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন, পাশাপাশি তিনি দন কিহোতে অনুবাদ করেছেন। এই ভদ্রলোক অনুবাদ সম্পর্কে তাঁর এক ভাষণে চমৎকার বলেছেন। তিনি বলছেন: Fidelity is surely our highest aim, but a translation is not made with tracing paper. It is an act of critical interpretation. Let me insist on the obvious: Languages trail immense, individual histories behind them, and no two languages, with all their accretions of tradition and culture, ever dovetail perfectly…. A translation can be faithful to tone and intention, to meaning. It can rarely be faithful to words or syntax, for these are peculiar to specific languages and are not transferable.

একজন অনুবাদকের তৃপ্তি কোথায়, একটি অনুবাদ করায়, না একটি ভাষা-দেশ-সংস্কৃতি-লেখক সম্পর্কে গভীরভাবে জানায়?

প্রশ্নটা আমার কাছে পরিস্কার না। ভাষা-দেশ-সংস্কৃতি-লেখক সম্পর্কে জেনেই তো অনুবাদটা করা। প্রথমটা ইনপুট, পরেরটা আউটপুট। আনন্দ দুটি কাজেই আছে।

প্রায়ই শোনা যায়, অনুবাদ কোনো সাহিত্য নয়। অনুবাদকে সাহিত্য হয়ে ওঠায় অন্তরায়টা কোথায়? অনুবাদ কীভাবে সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে?

অনুবাদ অবশ্যই সাহিত্য। এবং কখনো কখনো মৌলিক সাহিত্য। শেক্সপিয়ার দুটি বাদে তাঁর নাটকের সবগুলোই অনুবাদ করেছেন। বিভিন্ন সোর্স থেকে গল্পগুলো নিয়ে নিজের মতো করে লিখেছেন। এটিও একপ্রকার অনুবাদ। বেনজামিন তাঁর ‘‘দ্য টাস্ক অব দ্য ট্রান্সলেটর” প্রবন্ধে বলছেন, অনুবাদ হলো মূলের ঘাটতি কাটিয়ে উঠে একটা আদর্শ টেক্সটের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া। অর্থাৎ অনুবাদ মূলের চেয়েও খাঁটি। এক্ষেত্রে অবশ্য অনুবাদককে হতে হবে একজন উঁচু স্তরের সাহিত্যবোদ্ধা। তাকে নিজে যে উচুঁ স্তরের সৃজনশীল লেখক হতে হবে- নট নেসেসারি। যেমন ধরুন, মার্কেসের One Hundred Years of Solitude অনুবাদ করেছেন Gregory Rabassa। মার্কেস এই অনুবাদ পড়ে বলেছিলেন, তাঁর অর্জিনালের চেয়ে ভালো হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, কর্মজীবনে গ্রেগরি লিপিকর ছিলেন। পরে অবশ্য প্রচুর অনুবাদ করেছেন।

অনুবাদ মূলকে অনুসরণ করে বলে আমরা একে মৌলিক সাহিত্য বলে ভাবি না। মূলকে অনুসরণ করা অনুবাদ সাহিত্যের কোনো ত্রুটিপূর্ণ দিক নয়। মৌলিক সাহিত্যেরও কিন্তু এক বা একাধিক মূল থাকে যেগুলোকে প্রত্যক্ষ বা প্রচ্ছন্নভাবে অনুসরণ করা হয়। কবি ওক্টাভিও পাজ বলছেন:

Each text is unique, yet at the same time it is the translation of another text. No text can be completely original because language itself, in its very essence, is already a translation– first from the nonverbal world, and then, because each sign and each phrase is a translation of another sign, another phrase.

অনেক সময় দেখা যায়, কোনো লেখক বা দেশের কিছু গল্প অনুবাদ করেই তাকে ‘শ্রেষ্ঠগল্প’ বলে দিচ্ছে। বইয়ের ভূমিকায়ও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু থাকে না যে, এগুলো কেন শ্রেষ্ঠ গল্প। কিভাবে বাছাই করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পাঠকরা কি প্রতারিত হচ্ছেন না?

এটা বাণিজ্যিক বিষয়। আমরা না চাইলেও প্রকাশকরা এভাবে চাইবেন। এটা নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলে। তবে হ্যাঁ, যে কোনো অনুবাদে একটা যুৎসই ভূমিকা থাকা দরকার, যেটা আমাদের এখানে থাকে না বললেই চলে। এক্ষেত্রে পাঠকের বিস্তারিত জানার সুযোগ থাকে।

আমাদের দেশে সাধারণত যে অনুবাদগুলো হয় সেগুলো মূলভাষা থেকে নয়, দ্বিতীয় কোনো ভাষা, বিশেষত ইংরেজি থেকে। তাহলে আমরা ‘সূর্যের রশ্মি থেকে তাপ না নিয়ে বালি থেকে তাপ নিচ্ছি’ বলে মনে হয় না?

মূল ভাষা থেকে হলে ভালো। পৃথিবীতে লেখা হচ্ছে এমন ভাষা অনেক আছে। নির্দিষ্ট সংখ্যা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। আপনি চাইলেও এতগুলো ভাষায় প-িত মানুষ এক দেশে পাবেন না। আবার সব ভাষার বইও মার্কেটে অ্যাভেলেবল না। কাজেই আপনার উপায় নেই। ইংরেজি হয়ে আপনাকে অনুবাদ করতে হবে। তবে আমাদের এখানে কিন্তু ফরাসি, জার্মানি, স্প্যানিশ প্রভৃতি ভাষা থেকে সরাসরি অনুবাদ হয়েছে। এখানে মজার বিষয় হলো, কারো কারো ক্ষেত্রে মূল ভাষায় যিনি অনুবাদ করছেন তার চেয়ে ইংরেজি হয়ে যিনি অনুবাদ করছেন, তার অনুবাদ ভালো হয়েছে। কাজেই, শুধু মূল জানলেই ভালো অনুবাদ হয়ে গেল না। বিষয়টা আপেক্ষিক।

অধিকাংশ অনুবাদই বিশ্বের জনপ্রিয় বা বহুল আলোচিত, মানে ‘বেস্ট সেলার’ বইগুলো হয়ে থাকে। এই অনুবাদ দ্বারা একটি দেশের সাহিত্য কতটুকু উপকৃত হতে পারে?

অলওয়েজ, সামথিং ইজ বেটার দ্যান নাথিং! আপনি এক সাথে সব পাবেন না। অ্যাগেইন, এটার সঙ্গে বাণিজ্যিক বিষয়ও জড়িত। তবে দুটোই হচ্ছে। পপসাহিত্য বেশি হচ্ছে, সেটা শুধু এখানে না, সবখানেই। যেমন মূলে, তেমন অনুবাদে। তবে আফসোস, ম্যাজিক মাউন্টেইন, ইউলিসিস-এর মতো উপন্যাসগুলোর অনুবাদ বাজারে নেই। এগুলোও ইন এ সেন্স পপুলার নভেল।

বিশ্বের অনেক বিখ্যাত গ্রন্থ আছে যেগুলো ভাল, কিন্তু বহুল আলোচিত নয়। যেখানে প্রকাশকরাও বিনিয়োগ করতে চায় না। সেক্ষেত্রে মানসম্মত সাহিত্য অনুবাদ কী করে পেতে পারি?

যে সমাজব্যবস্থায় ‘মানি ডিটারমাইনস এভরিথিং’ সেই সমাজব্যবস্থায় অনেক ভালো কিছু অনুপুস্থিতি আমাদের পোড়াবে, কিন্তু আমরা এর বাইরে যেতে পারবো না। প্রকাশকরা ব্যবসায়ী, সাহিত্যসেবক নন। তাই যে বইয়ে লস হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাতে তারা লগ্নী করবেন না। এক্ষেত্রে হয় আপনাকে ভালো বইয়ের পাঠক সৃষ্টি করতে হবে অথবা সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দিয়ে কিছু কাজ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সরকার যদি সেনাবাহিনী খাতে এত এত অর্থ বরাদ্দ করতে পারে, তবে কেন শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে নয়? এটাও তো একটা দেশের জন্য বায়বীয় অস্ত্র নাকি? বোধের উন্নয়নে ব্যয় শরীরী উন্নয়নে ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি দরকারী, এটা কে বোঝাবে!

একটি দেশ উপনিবেশমুক্ত হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিশ্বের সেরা সাহিত্য, জ্ঞানগর্ভ-মননশীল-চিন্তাশীল বইগুলো ব্যাপকভাবে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই, দেশি ভাষায় অনুবাদ করা। আমাদের দেশে তা হয়নি। এটা কি আমাদের দেশের সাহিত্যের অগ্রগতিতে প্রভাব ফেলেছে মনে করেন?

তাও যা হয়েছে, কম হয়নি। আমি বরং বলবো, আমাদের সাহিত্য, চিন্তাশীল কাজগুলো অন্য ভাষায় খুব কম অনুবাদ হয়েছে। রাশিয়া উদ্যোগ নিয়ে যদি তাদের সাহিত্য বাংলায় অনুবাদ করতে পারে, তবে আমরা কেন রাশিয়ান ভাষায় পারছি না? তাদের মার্কেট তো আরো ব্রড। তাছাড়া যারা দুশো বছর আমাদের শাসন করে গেল, তাদের এমনিতেই আমরা কম জানি না। এখন সময় আমাদের জানানোর। সেটা তো ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি বিনিময় ছাড়া সম্ভব নয়। তবে এও ঠিক, অনুবাদ হলেই তারা পড়বে কেন, সেই বাজারটাও আমাদের সৃষ্টি করতে হবে।

টেকনিক্যাল শব্দগুলো ছাড়াও অন্য ভাষার সাহিত্য অনুবাদে সংকট হলো যথাযথ পরিভাষার অভাব। আমাদের দেশে পরিভাষা তৈরির তেমন কোনো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের কী করনীয়?

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ সবসময় না থাকাই ভালো। রাষ্ট্রযন্ত্র বড় আজব, শিল্প-সংস্কৃতিতে যত কম হস্তক্ষেপ করে ততই মঙ্গল। কিডিং! এনিওয়ে, এটা ঠিক যে আমাদের অনুবাদ করতে গিয়ে উপযুক্ত টার্ম না পেয়ে অনেক সময় মূলটাকেই বাংলা ভাষায় পারিভাসিক হিসেবে গ্রহণ করতে হচ্ছে। একটা যুৎসই শব্দ থাকলে মন্দ হতো না। তবে অক্সিজেনের অনুবাদ আমরা যেমন করেছি অম্লজান এমন অদ্ভূত অনুবাদ না হলেও চলে।

অনেকেই মনে করেন অনুবাদের মান রক্ষার জন্য দেশে রেগুলেটরি স্থাপন করা দরকার। আপনার কী মনে হয়? আমরা কীভাবে মানসম্মত অনুবাদ পেতে পারি?

এর বিপদও আছে। শিল্পসাহিত্যের মান নির্ধারণ করার মতো কোনো যন্ত্র আবিষ্কার এখনো সম্ভব হয়নি। কোনো ব্যক্তিবিশেষের হাতে এমন ক্ষমতা থাকলে তার মিসইউজের সম্ভাবনা আছে। আমার মনে হয়, প্রতিটা প্রকাশক যদি একটা একটা ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাখে, যাদের কাজ হবে অনুবাদ পা-ুলিপিকে মূল বইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে তবেই ছাপার জন্য ছাড়পত্র দেয়া, তাহলে এই সমস্যার খানিকটা হলেও সমাধান সম্ভব। তাই যতদিন না পাঠক-প্রকাশক-অনুবাদক এই বিষয়ে সচেতন না হচ্ছেন ততদিন এমন যাচ্ছেতাই অবস্থা চলবে। কোনো রেগুলেটরি স্থাপন করে কিছু হবে না।

অনেকেই পাঠের জন্য মূলগ্রন্থ পাঠকেই গুরুত্ব দেন। লেখক প্রস্তুতি হিসেবে অনুবাদ সাহিত্য পাঠকে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?

মূলগ্রন্থ পাঠের বিকল্প নেই। তবে আপনার পক্ষে যেহেতু পৃথিবীর সব ভাষা জানা সম্ভব না, তাই এ নিয়ে হায় হায় করে লাভ নেই। অনুবাদ পড়তেই হবে, সে ইংরেজি ভাষার মধ্য দিয়ে হোক, আর বাংলা মাধ্যম দিয়ে হোক।

আর একজন লেখকের প্রস্তুতিপর্ব তো কখনো শেষ হয় না। কেউ তো আর দিনক্ষণ ঠিক করে বলতে পারেন না, আজ আমি লেখক হয়ে গেলাম, আমি আর পড়বো না, খালি লিখবো। তাই সবসময় একজন লেখকের জন্য পাঠ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এই পাঠেরই অংশ হল অনুবাদ সাহিত্য।

প্রতিবছরই দেশে প্রচুর অনুবাদ হয়। তার সবই জনপ্রিয় ও বহুলালোচিত গ্রন্থ। অপরিচিত কিন্তু শক্তিশালী লেখক বা বই, অনুবাদকের তেমন কোনো আবিষ্কার নেই। এটা কি অনুবাদকের দূর্বলতা, না অন্য কিছু?

আবিষ্কার যে একেবারে নেই তা না। জনপ্রিয় কিংবা আলোচিত বই হলেই যে আমরা সবাই পড়তে পারছি তা তো নয়। বাংলা ভাষায় প্রথম হওয়া মানেই সেটা বাংলা ভাষার পাঠকদের জন্য আবিষ্কার। বুদ্ধদেব বসু বোদলেয়ার অনুবাদ করলেন। না করলে কি বাংলা ভাষাভাষি পাঠকরা পড়তে পারতেন? সে বোদলেয়ার বিশ্বে যতই আলোচিত হোক না কেন। একইভাবে গোর্কি-তলস্তয়-কাফকা-হেমিংওয়ে-দস্তয়ভস্কি, এঁদের কোনো ভাষায় প্রথম অনুবাদ সেই ভাষায় আবিস্কারের মতোই। পাশাপাশি আমরা কম চিনি কিন্তু ভালো লেখক, এমন লেখকের বইও অনুবাদ হচ্ছে। আস্তে আস্তে আরো হবে।

রবার্ট ফ্রস্ট, টি এস এলিয়ট, শার্ল বোদলেয়ার, শাহানামা অনেক অনুবাদ করেছেন; কিন্তু শামসুর রাহমান, বুদ্ধদেব বসু, কাজী নজরুল ইসলামের মতো কেউ করতে পারেননি মনে করা হয়। কবিতার অনুবাদ কবি, গল্পের অনুবাদ একজন গল্পকার করলে সেরাটা পাওয়া সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন। আপনি কী মনে করেন?

বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদ নিয়ে কোনো কথা নেই। কিন্তু শামসুর রাহমানের অনুবাদ নিয়ে আমি দু-একটি কথা বলতে চাই।

ফ্রস্টের বিখ্যাত ও বহুলপঠিত কবিতা ÔStopping by Woods on a Snowy EveningÕ এর বাংলা অনুবাদ করেছেন শামসুর রাহমান। গীতিধর্মী কবিতাটির তিনি অনুবাদ করেন ছড়াধর্মী ছন্দে। এতে মূল কবিতার মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়। কিছু চিত্রকল্পের ভুল অনুবাদও করেছেন তিনি। The woods are lovely, dark and deep এর বাংলা করেছেন “কাজল গভীর এ-বন মধুর লাগে। আবার My little horse must think it queer এর অনুবাদ করেছেন “ঘোড়াটা ভাবছে ব্যাপার চমৎকার”। ফ্রস্ট ঠিক এরকমটি বলতে চাননি। Tree at My Window কবিতার Vague dream-head lifted out of the ground, And thing next most diffuse to cloud এর অনুবাদ করেছেন “মাটি থেকে উঠে এলো আবছা স্বপ্ন-চূড়ো আর তারপর কুয়াশার মেঘ এলো ছেয়ে”- এটিও ঠিক ঠিক মিললো না। অর্থাৎ কবি শামসুর রাহমানকে খুব মনোযোগী অনুবাদক হিসেবে আমি মনে করি না। তিনি নিশ্চয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা কবি। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো, সেরা কবি মানেই সেরা অনুবাদক নন।

অনুবাদ তো দুইভাবেই হতে পারে। বিদেশি সাহিত্য দেশি ভাষায়, দেশি সাহিত্য বিদেশি ভাষায়। আমরা কিন্তু তা দেখছি না। এর কারণ কি? এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের উপায় কি বলে মনে করেন?

আমাদের সাহিত্য বিদেশী ভাষায় হয় না বললেই চলে। যা হয় তার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। আমাদের সাহিত্য বিদেশী ভাষায় হওয়াটা খুব জরুরী। শিল্প-সাহিত্য লেনাদেনার বিষয়। আমরা বিশ্ব থেকে নানাভাবে নিচ্ছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফিউশন এমনভাবে ঘটাচ্ছি যে আমাদের নিজেরটাই হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা নিজেদেরটা ছড়িয়ে দিতে পারছি না। বিশ্বের সংস্কৃতি লড়াইয়ে আমাদের অস্ত্র হতে পারতো আমাদের ফোক কালচার, লোকজ ভাবনা ও পরিবেশনা। কিন্তু আফসোস সেগুলো আমরা নিজেরাও আর লালন করছি না। যাহোক, সেটা এই আলোচনার বিষয় না।

এবার আপনার ‘বিশ্বগল্পের বহুমাত্রিক পাঠ’ সম্পর্কে বলুন।

বাংলাদেশে ছোটগল্পবিষয়ক তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো প্রবন্ধ বা আলোচনা গ্রন্থ নেই বললেই চলে। তাই যারা ছোটগল্প চর্চা করছেন বা আগামীতে করবেন তাদের কথা ভেবেই আমি বইটি রচনায় হাত দিই। এখানে ছোটগল্পের কাঠামো বা নির্মাণশৈলি এবং বিষয়বস্তু গল্প ধরে ধরে আলোচনা করেছি। বাংলা সাহিত্যসহ বিশ্বসাহিত্যের চৌদ্দটি গল্প এই সংকলনে আছে। অন্যভাষার গল্পগুলো আমি নিজে ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছি। গল্পগুলো যেমন বিভিন্ন দেশের তেমন বিভিন্ন কালের। আধুনিক গল্পের জনক এডগার অ্যালান পো থেকে শুরু করে একালের মুরাকামি পর্যন্ত এই সংকলনে আছেন। কাজেই এই স্বল্প পরিসরে খুব সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও বিশ্বগল্পের আপাত একটি ধারণা পাওয়া যাবে। বইটির সবশেষে টিকা আকারে এখানে আলোচিত সাহিত্যতত্ত্ব ও লিটারারি টার্মসের ব্যাখা বা ডেফিনেশন প্রদান করা হয়েছে।

অনুবাদের জন্য এই লেখকদের গল্পগুলো বেছে নেয়ার কারণ কি?

প্রথম কারণ, গল্পগুলো আমার প্রিয়। দ্বিতীয় কারণ, বৈচিত্র। আমার এই গ্রন্থটির জন্য এমন বহু ডায়মেনশনের গল্প দরকার ছিল। এটাই প্রধান কারণ।

এখানে অনেক গল্প তো আগেও অনুবাদ হয়েছে। আপনিও করলেন। ব্যাপারটা মনোটোনাস হয়ে গেল না? কিংবা আপনার বিশেষত্ব কোথায়?

কয়েকটি গল্প ছাড়া বেশিরভাগ গল্পের অনুবাদ আমি বাজারে দেখিনি। থাকলেও আমার চোখে পড়েনি। আর একটি বইয়ের বেশ কটি ভার্সন, আই মিন অনুবাদে, থাকা ভালো। এতে বাছাই করার সুযোগ থাকে। আমার অনুবাদ করা এডগার অ্যালান পোর ‘টেল টেল হার্ট’ গল্পটি ছাপা হলে কলকাতার এক সাহিত্যিক সম্তর্ষি বিশ্বাস বলেছিলেন, ‘অসাধারণ – এই গল্প, অন্ততঃ ৩০ জনের অনুবাদে আমি পড়েছি, এর মধ্যে শেখর বসু’র মতো প্রফেশনাল অনুবাদকও আছেন। তবে মোজাফফরের অনুবাদটি সমস্তকে ছাড়িয়ে গেছে।’ রফিকুল্লাহ খানও পড়ে প্রশংসা করেছিলেন। আমি এজন্যে বলছি যে, আমার প্রথম করা অনুবাদে এই দুজনের প্রশংসাবাণী আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আমার মনে হয়েছিল, কাজটি অনেকে করছেন, আমিও করতে পারি। কোনো পাঠকের যদি কাজে লাগে- এই আর কি!

অনুবাদের ক্ষেত্রে অনেকে ভাষা, অনেকে ভাব, অনেকে মূলবক্তব্য অনুসরণ করেন। এতে কি একটি সাহিত্যের প্রকৃতাবস্থার হেরফের ঘটে যায় না?

মূল টেক্সট এক হলেও তার যদি আপনি একশ বার অনুবাদ করান, সবগুলোই আলাদা আলাদা ভার্সন হবে। এর মধ্যে থেকে আপনার চাহিদা যেটা সার্ভ করবে সেটাই আপনার কাছে বেস্ট ট্রান্সলেশন। ভালো অনুবাদে সাহিত্যের প্রকৃত অবস্থার হেরফের ঘটে বলে আমি মনে করি না। অনেকে মূল বইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে মিলিয়ে মানে আক্ষরিক বা মূলানুগ অনুবাদ, কেউ ভাবগত বা মূলবক্তব্যের দিক খেয়াল রেখে অনুবাদ করেন। কোন ধরনের অনুবাদে প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে বলে আপনি মনে করেন? কেন?

মৌলিকতা এবং সৃজনশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বিশ্বেই দুই ধরণের অনুবাদ করা হয়। একটি মূল থেকে সরে গিয়ে অন্যটা মূলের কাছাকাছি থেকে। ঈশ্বরচন্দ্রের ভ্রান্তিবিলাস বা গিরীশ ঘোষের ম্যাকবেথ, মুনীর চৌধুরী ও প্রফেসর কবীর চৌধুরীর ওথেলো, সৈয়দ শামমুল হকের ম্যাকবেথ- এগুলো করা হয়েছে মূল থেকে খানিকটা সরে এসে। এক ধরনের পুণর্লিখনের প্রয়াস সেখানে আছে। আবার এমন অনেক অনুবাদও হয়েছে যেটি মূলকে ভালোভাবে উপস্থাপন করে। আমার কাছে এই দুই ধরণের অনুবাদ আলাদা দুটি শিল্প। আমি পড়ার সময় দুটোকেই গুরুত্ব দিই। তবে নিজে যখন অনুবাদ করি, তখন আমি মূলকে ভালোবেসে তার কাছাকাছি থাকবার চেষ্টা করি।

অন্যান্য অনুবাদক থেকে নিজেকে কিভাবে আলাদা করেন?

আমি মূলের বাক্য-কাঠামো ও চিত্রকল্পের অন্ধ অনুকরণ করি না। এসবের পেছনে যে অনুচ্চারিত ভাব ও বোধ থাকে তারই প্রকাশ করার চেষ্টা করি। আগেও বলেছি, আমি মূল টেক্সটের দাস হয়ে নয়, প্রেমিক হয়ে অনুবাদ করতে চেষ্টা করি। অন্যরা হয়ত এই কাজটিই আমার চেয়ে আরো ভালো করে করতে পারেন। এই আর কি।

অনুবাদকের স্বাধীনতা, শব্দ তৈরি ইত্যাদি দিক অনেকে সামনে আনেন। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন? তা ছাড়া অনুবাদকের আদৌ কোনো স্বাধীনতা আছে কি?

আমি মনে হয় আগের দুটি প্রশ্নে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েই দিয়েছি। আর নতুন করে কিছু বলার  নেই।

অনুবাদ আমাদের সাহিত্যে কী অবদান রাখছে?

অনুবাদ প্রতিটা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আমাদের দেশের যে সাহিত্য তার প্রসারই ঘটেছে অনুবাদ সাহিত্যের ভেতর দিয়ে। চতুর্দশ শতকের কৃত্তিবাসের রামায়ণ। চতুর্দশ শতক থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত পাঁচশ বছর ধরে বাংলা সাহিত্যের পরিণত হয়ে ওঠার সময় কৃত্তিবাসের রামায়ণের প্রভাব ব্যাপক। দীর্ঘ সময়ের মুসলিম শাসন আমলে আরবি ও ফার্সি সাহিত্য থেকে বাংলা সাহিত্য অনেক কিছু গ্রহণ করেছে। এরপর ইংরেজি সাহিত্য এবং ইংরেজি ভাষা মারফত বিশ্বসাহিত্যের অনুবাদ আমাদের সাহিত্যে ধারাকে আমুল বদলে দিলো। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভ্রান্তিবিলাস, গিরিশ চন্দ্র ঘোষের ম্যাকবেথ প্রভৃতির কথা উল্লেখ করতে হয়। বঙ্কিম চন্দ্র, মাইকেল মধূসুদন দত্ত যা করলেন সেটিও সাহিত্যের বিশেষ ধরণের অনুবাদ। তারা গঠনকৌশল বা রচনারীতির অনুবাদ করলেন। বঙ্কিম আনলেন উপন্যাস, মাইকেল সনেট, কাব্যনাট্য, মহাকাব্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই কাজটি নানাভাবে করেছেন। এরপর বদ্ধুদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, জীবনানন্দ দাস, বিষ্ণু দে ও অমীয় চক্রবর্তী বিশ্বসাহিত্যকে বাংলাসাহিত্যে নিয়ে এলেন আরো আপন করে। যদি নাটকে শেক্সপিয়ার, সফোক্লিস, ইবসেন; কথাসাহিত্যে দস্তয়ভস্কি, তলস্তয়, হেমিংওয়ে, কাফকা, সার্ভেন্তেস, চেখব, মপাসাঁ; কবিতায় বোদলেয়ার,  গ্যেটে, এলিয়ট, আধুনিক রোমান্টিক ধারার কবিরা, আরো অনেকে আছেন- এঁদের অনুবাদ বাংলায় না হলে বাংলা সাহিত্য কোথায় পড়ে থাকতো, ভাবা যায়!

অন্য একটি ভাষায় লেখা অনুবাদ হচ্ছে। অথচ লেখক জানছেন না, রয়েলটি পাচ্ছেন না। মূলানুগ অনুবাদের জন্যও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে না। বিষয়টা কীভাবে দেখেন?

আামাদের দেশের দু একটি প্রকাশক মূল লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুমতি নিয়ে অনুবাদ বই বাজারে আনেন। প্রক্রিয়াটি একটু জটিল। বিদেশী লেখকদের একটা করে এজেন্ট থাকে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজটি করতে হয়। তারা অনুবাদের মান, প্রচ্ছদ, প্রকাশনার মান এগুলো খোঁজখবর নেন। তারপর আসে অর্থনৈতিক বিষয়। এসব করতে সময়ও অনেক লেগে যায়। আপনাকে বিদেশে যাওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। তাই চাইলেও কাজটি করা এত সহজ না। তবে আমি চাই, অবশ্যই যার অনুবাদ করা হবে তিনি জানুক, তাঁর জানার অধিকার আছে।

লেখালেখির ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের কথা প্রায়ই শোনা যায়। আমাদের দেশে অনুবাদের তেমন পেশাদারিত্ব দেখছি না। অনুবাদের মানোন্নয়নের জন্য পেশাদারিত্বের ভূমিকা কী মনে করেন আপনি?

অবশ্যই পেশাদারিত্বের ভূমিকা আছে। আমি যদি কাজটি করে পর্যাপ্ত অর্থ না পাই, তবে করব কেন? অনুবাদের অর্থমূল্য আমাদের এখানে খুবই কম। আপনি ইন্টারনেটে আউটসোর্সিংয়ে গরুর রচনা লিখে যে টাকা পাবেন, দস্তয়ভস্কি অনুবাদ করে সে পরিমাণ টাকা পাবেন না। আবার আপনি চাইবেন, একজন মানুষ সময় নিয়ে গভীর তপস্যার সঙ্গে কাজটি করুক। মানুষটির তো পেট আছে, নাকি? তাকেও তো খেতে হয়। তার পরিবার আছে, তাদের কথাও ভাবতে হয়। সখের বশে বেশিদূর এগুনো যায় না, তাই এটিকে একটা শিল্পের পর্যায়ে দাঁড় করানো খুব দরকার।

নতুন লেখক তৈরির ক্ষেত্রে লিটল ম্যাগকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়। আজকের দিনে অনেকের মধ্যে অনুবাদক হওয়ার চিন্তাও দেখা যায়। অনুবাদক তৈরির ক্ষেত্রে কোন মাধ্যমটি আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন? আদৌ কি তেমন কোনো মাধ্যম আছে?

অনুবাদক তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই লিটলম্যাগগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটা লিটলম্যাগ চেষ্টা করে একটি-দুটি গল্প কিংবা কবিতার অনুবাদ রাখতে। এ কারণে অনেককেই অনুবাদ করতে হয়। যেমন আমার বেশিরভাগ অনুবাদ লিটলম্যাগের জন্যে। এখনো লিটলম্যাগের পাঠকদের কথা ভেবে বেশি অনুবাদ করি। পাশাপাশি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা উত্তরাধিকার অনুবাদ খুব গুরুত্বের সঙ্গে ছাপে। তবে এটুকুই যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশে মাসিক আকারে একটা মানসম্মত অনুবাদের কাগজ থাকতে পারতো। আশা করি কোনো একদিন হবে।

অনুবাদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদকও দেয়া হচ্ছে। এটা আমাদের দেশে মানসম্মত অনুবাদের ক্ষেত্রে কি কোনো ভূমিকা রাখছে?

অনুবাদের কাজটাকে এভাবে স্বীকৃতি দেয়া অবশ্যই ভালো বিষয়। এতে কেউ কেউ অনুবাদে আরো আগ্রহী হতে পারেন। সেই অর্থে অনুবাদ সংস্কৃতিটা আরো মজবুত হতে পারে। তবে মান ভিন্ন বিষয়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রকাশক অনুবাদের মান নয়, মূল লেখকের নামে বই করেন। তারা মূলটাও পড়েন না, অনুবাদও না। এই পরিস্থিতি যতদিন থাকবে ততদিন মানসম্মত অনুবাদ পাওয়া মুশকিলই হবে।

এই মুহুর্তে দেশে যে অনুবাদ হচ্ছে, তার মান নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট?

এই মূহূর্তে যা হচ্ছে তা মাঝে যা হয়েছে তার চেয়ে ভালো। মানে আমি বলতে চাচ্ছি, কিছুকাল আগের চেয়ে এখন আমাদের অনুবাদের অবস্থা কিছুটা ভালো। তবে সামগ্রিকভাবে অনুবাদের মান নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। প্রত্যাশা আরো অনেক বেশি।

মন্তব্য: