নোভায়োলেট বুলাওয়েও এর ছোটগল্প

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

অনুবাদ : তুহিন দাস

Noviolet Bulawayo এখন থাকেন আমেরিকায়। জন্ম ১০ ডিসেম্বর ১৯৮১, জিম্বাবুয়েতে। ছোটগল্প লেখক ও উপন্যাসিক। ২০১৩ সালে তার লেখা পথশিশুদের ওপর একটি গল্প জিতে নেয় কেইন প্রাইজ ফর আফ্রিকান রাইটিং, এ পুরষ্কারকে আফ্রিকান বুকার বলা হয়। ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস ‘নিড নিউ নেমস’। এ বই একসঙ্গে অনেকগুলো পুরষ্কার লাভ করে। তিনিই প্রথম কালো আফ্রিকান ও একমাত্র জিম্বাবুয়ান যার নাম ম্যান বুকার পুরস্কারের শর্টলিস্টে স্থান পায়। সে বছর, ২০১৩ এর বিশ্ব সাহিত্যের এই মর্যাদাকর পুরষ্কারটি পান আমেরিকান ছোটগল্পকার লিডিয়া ডেভিস। গল্পটির মূল ইংরেজি।

পাহারাদার

সে জানালার কাছে দাঁড়িয়েছিলো, হাতে একটি পুরনো রিভলবার, এবং তাদেরকে উঠে আসতে দেখলো। এমনকি ফুটন্ত সূর্যরশ্মির মধ্যেও তারা হেঁটে আসছে যেন বেড়ালেরা বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে আসছে। চুপচুপে ভেজা, ভীরু, সতর্ক। অনেকটা ফিসফিস করে কথা বলার মতো তারা হাঁটছে। তারা জিম্বাবুয়ের লোক। যেই না উপরে আরেকজনকে পেরিয়ে গেলো, সে অন্যদের দেখলো। অন্য অনেকেরা। একই রকম জানালা থেকে তাকিয়ে আছে। তাদেরকে তার দেশের মধ্যে জলের মতো যেন চুঁইয়ে বেরোতে দেখলো। সে জানে সে এমন অনেককে দেখতে পাবে, তাদের আসা কখনোই থামবে না, তারা বহতা স্রোতের মতো।

তার জানালা সম্পূর্ণ বাদামী ও শুকনো এবং অমসৃণ, সামনের দিকে খোলা, যেদিকে সামনে ও পেছনে একটি ধুলোময় রাস্তা আছে যা ঈশ্বরের কোমরবন্ধ বা বেল্টের মতো জোহানেসবার্গ যাবার সমস্ত পথকে জড়িয়ে আছে। রাস্তাগুলো লাল ও শেষহীন। সবসময় জিম্বাবুয়ের লোকেরা প্রশস্ত লিমপোপো নদী পার হয়ে ঝোপ থেকে বেরিয়ে সামনে হঠাৎ এই দৃশ্য দেখে তাদের মগ্নতা কাটিয়ে ফেলে। যখন লিমপোপো নদী জলে ভরা থাকে তখন সে এই জানালায় দাঁড়ায় এবং শুনতে পায় নদী উপরে উঠে যাচ্ছে, তার জলমন্থনের শব্দ, বড় বড় কাঠের খ- ভেসে আসছে কাদাময় জলে, শক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ধোপা-নারী, বহুদিন ধরে না খাওয়া কুমীরেরা নিঃশ্বাস ধরে আছে তাদের পেটের গভীরে কোথাও। 

কিন্তু এসব কখনোই জিম্বাবুয়ের লোকেদের থামাতে পারে নি। তারা ঝাঁপ দেয় লিমপোপো নদীতে, কখনো ডুবে যায়, যদি তারপরও বেঁচে থাকে তাহলে তারা কুয়াশার মতো জেগে ওঠে জল থেকে তার দেশের সীমান্তের বেড়ার নিচ থেকে গর্ত কেটে। তখন তারা জঙ্গলের মধ্যে লাঙ্গল চালায়, অবশেষে তার এই রাস্তায় তারা দৌড়াতো থাকে যেন তারা তাদের বাড়ির সামনে দৌড়ুচ্ছে।  তাদের লক্ষ্য থাকে জোহানেসবার্গ। যা তাকে ধাঁধার মধ্যে ফেলে দেয়, আসলে সে খুঁজে বের করতে সত্যি পছন্দ করতো, তা হলো কিভাবে তারা পৃথিবীর ওপরে কোনো প্রকার পায়ের ছাপ রেখে যেতো না, কোনো চিহ্ন থাকতো না, এক বিন্দুও কিছু নয়। এবং কিভাবে এটা হয় যে যখন তারা হাঁটে, অনেকটা র্ফিসফিসের মতো, তারা পৃথিবীতে কোনো প্রকার ছায়াও ফেলতো না। 

সে অনেক দীর্ঘ সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে আছে, জানেনা যে কতোটা সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সে নিশ্চিত জানে যে তার সব সময়ের জন্যে সতর্ক হাঁটুকে বিশ্রাম দেবার জন্য তার এখন বসা দরকার। তবু কোনোভাবে সে নিজেকে টেনে নিতে পারে না জানালার কাছ থেকে দূরে, তাই সে কেবলমাত্র তার ওজন এক পা থেকে অন্য পায়ে স্থানান্তরিত করে, তার রিভলবারটি অপেক্ষাকৃত শক্তভাবে ধরে রাখে। ঐ বালকটি যার নাম জো সে তাকে জানিয়েছিলো যে কীভাবে তাদের কিছু লোক এক সপ্তাহ আগে তার বাড়িতে ভেঙে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলো, তারপরে সে তার পুরনো মালপত্র রাখার ভা-ার থেকে রিভলবারটি খুঁজে বের করে এনেছিলো। তারা অপরাধী!  যদি তারা মনে করে যে তারা শুধুমাত্র তার দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে, এবং তখন তারা তার বাড়ি ভেঙেও ঢুকে পড়বে,  তাহলে সে তাদেরকে দেখিয়ে দেবে। পারলে তারা এটা করুক। তাদের চেষ্টা করতে দাও। 

তার মৃত স্ত্রী ম্যামলোফি তার রিভলবারে সম্মতি প্রদান করতো না, সে সম্ভবত সেখানে চলে যেতো এবং তাদেরকে খাবার ও জল দিতো। ম্যামলোফি। ম্যামলোফি, যে কোনো কিছু না ভেবেই দিতে পারতো। ম্যামলোফি, যে বিশ্বাস করতো সব রকম নৈরাশ্য একটি ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ার মতোই মেরামত করা যায় । ম্যামলোফি, ভিক্ষুকেরা তার নাম জানতো। তারা তার স্ত্রীকে ও তার দয়ালু মনোভাবকে নিয়ে তারা ভাবতো, অন্তত তাকে লজ্জায় পড়ে রিভলবার নিয়ে দূরে সরে যেতে হতো, কিন্তু সে নিজেকে বলে যে এমনকি তার ম্যামলোফির এজন্য যথেষ্ট দয়ালু ছিলো না। কারণ অসভ্য জাতির দলকে একটি দেশ শুধু বমির মতো উদগীরণ করছেই না তাদেরকেও এখানে বমির মতো ছুঁড়ে মারছে। না, ম্যামলোফি, সব ধরনের দয়ালুতা থাকা সত্ত্বেও, যথেষ্ট হয়েছে, এবার এসব কিছুর লিমপোপো নদীতে কবর হওয়া দরকার।

সে তার ধুসর হয়ে যাওয়া দাড়ির যত্ন নেয়, এবং নিজেকে মনে করিয়ে দেয় যে সে বিছানায় যাবেনা এমন সংকল্প করেনি, অন্য যে কেউ করতো সে শুধু তাই করছে, সে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে, দেখছে, এবং তার আগ্নেয়াস্ত্রটি ধরে আছে যদি এটিকে ব্যবহার করতে হয়, কারণ এই সব লোকেরা শুধুমাত্র লোক নয়। তারা বেআইনিও-অপরাধী; এমনকি সূর্যও এ ব্যাপারে জানে।

তার মাথায় একটি পোকা উড়ে এলো এবং সে কোনো কিছু না ভেবেই এটিকে মারার জন্য চড় দিলো। সে তার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে এটিকে মুছে ফেললো। সে তাদেরকে স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছে – তারা এখন কাছে। লম্বা একজন লাল ও কালো টি-শার্ট পরা সতর্কভাবে তাকে দেখছে এবং সে ভাবলো লোকটি নিশ্চয়ই ডান দিকে জানালা ও চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে একটু ঘাবড়ে গেলো, তার হাতে ধরা আগ্নেয়াস্ত্রটির মুঠি আলগা হলো এবং তখন সে দেখতে পেলো লোকটি ঘুরে গেলো, অন্য দু’জনের দিকে তাকালো। সে তাদেরকে কি বলছে?

সে দেখতে পায় লোকগুলোর মুখে অতিরিক্ত ক্লিষ্টতা ছড়িয়ে আছে। ক্লান্ত। এবং হয়তো হতাশাও। নয়তো কীভাবে একজন লম্বা-ঢ্যাঙা লোককে ছোট ও গোল মাথা করে দ্যায়; তার বাহু দু’টির শাখা লিকলিকে যেন হঠাৎ একদিনে বেড়ে উঠেছে এবং সে হেঁটে যায় এমনভাবে যেন সে তার জানা সবকিছু থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, হেঁটে যায় অন্য দেশের দিকে যেখানে সে চলে আসতে চেয়েছে এবং সে এখন সেখানে ও একইসময়ে সে যেন সেখানে নেই। তখন মোটা লোকটি আসে, খাটো লোকটি শাদা জামা ও সবুজ টুপি পরা, লোকটিই একমাত্র খুঁড়িয়ে চলেছে। ওই লোকটির কি হয়েছে? সে কি ওভাবেই তার দেশ ত্যাগ করেছিলো? নাকি পায়ে হেঁটে দক্ষিণ আফ্রিকা আসতে গিয়ে তার ওমনটি হয়েছে?

মোটা মতো একজনের চালচলন তার শক্ত করে ধরে রাখা আগ্নেয়াস্ত্রের ওপরে হাত আলগা করে দিলো, আগ্নেয়াস্ত্রটি প্রায় পড়ে যাচ্ছিলো। খোঁড়া লোকটি, যাকে দেখে তার এক বাল্যবন্ধুর কথা মনে পড়ে, যার ছিলো সিংহের মতো চলনভঙ্গী,  দেখতে পেলো সে কিভাবে তার বাহুকে ধরে আছে, দেখতে পেলো কিভাবে দুই দিকে সমানভাবে ভার রক্ষা করা কাঁধগুলোতে তার মাথা তার গলার ওপরে বসানো। অনেকটা দেখতে তার নিজস্ব বন্ধু জুমার মতো। তার হাসি প্রায় জুমার মতো, ছেলেবেলার কথা মনে পড়ছে, যা দূরবর্তী ও এখন চলে গেছে। যদিও সে এসবের সঙ্গে সাদৃশ্য পেলো না এবং তাই সে বিভ্রান্ত হলো।  কিন্তু না, সে যার দিকে তাকিয়ে আছে সে তার বন্ধু নয়, তার আগ্নেয়াস্ত্রের কথা মনে পড়লো। মুঠো শক্ত করে ধরলো। 

এবং তখন নারীটি আসলো। তার হলুদ রঙের পোশাকের উজ্জ্বলতা লাল রাস্তার সঙ্গে মানিয়েছে এবং কিছুটা বাদামী দেশটির সঙ্গে যায়। খুব ভালোভাবে মানিয়েছে কেননা সে প্রায় তাদের থামাতে চায়। তাদের সে থামাতে চায় ঠিক রাস্তার মাঝখানে, তাই সে এসব কিছু যত্ন নিয়ে করে। তার বাহুতে একটি ঝুড়ি থাকে এবং এই রাস্তাটিই তার ঝুড়ি বহন করার রাস্তায়। সে ঝুড়িটি বহন করে যেন কিছু না কিছু এর ভেতরে থাকে। সে নারীটিকে দেখলো এবং সে হঠাৎ কৌতুহলী হয়ে উঠলো, জানার জন্য সে আকস্মিকভাবে উদগ্রীব হয়ে উঠলো যে ঝুড়ির মধ্যে কি আছে। কি হতে পারে যা এই দেশহীন নারীটি একটি সাধারণ ঝুড়িতে বহন করছে, অনেকটা সে নিজের সবকিছু বহন করছে, অনেকটা ঈশ্বরকে বহন করার মতো? 

হাঁটছে বৃষ্টির ভেতরে হাঁটা বেড়ালের মতো, ভেজা, ভীরু, অনিশ্চিত। সে তাদেরকে দেখছে বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ক্ষুদ্র জলাশয়গুলোকে কৌশলে এড়িয়ে যেতে, যেগুলো আগে সেখানে ছিলো না। বৃষ্টি নেই, শুধুমাত্র সূর্য আছে। সরাসরি মাথার ওপরে, দাঁত বেরিয়ে পড়েছে, হিংস্র, গর্জনরত। তারা এখন দূরে চলে যাচ্ছে, কিন্তু সে এখনও সেদিকে আগ্নেয়াস্ত্র ধরে আছে। তারা পিঁপড়ের ছোট্ট গাদা পেরিয়ে গেলো, তখন তারা বাওবাব গাছের দিকে গেলো। সে জানে তারা সেখানে থামবে। তারা সবসময় সেখানেই থামে, তাদের সবাই, যেন তারা এই বাওবাব গাছটিকে স্বপ্নে দেখেছে, কিছু লোক – সম্ভবত তাদের পূর্বপুরুষেরা, তাদেরকে ঘুমোনোর সময় গল্প বলতো, যখন তুমি নদী পার হবে এবং লাল রঙের রাস্তাটি ধরে যাবে, দেখতে পাবে একটি প্রশস্ত বাওবাব গাছ, তখন তুমি আশান্বিত হবে এবং সেখানে তুমি বিশ্রাম নিতে পারো। 

এবং তারা বিশ্রাম নেয়। নারীটি ও লম্বা মতো একজন বসে আছে মাটিতে, তার দিকে পেছন ফিরে। মোটা মতো লোকটি দাঁড়িয়ে, যেন বারবার গাছটির বিরুদ্ধে। তাদেরকে বিশ্রামরত লোকেদের মতো দেখাচ্ছে না। তারা সেখানে আছে ও তারা যেন সেখানে নেই, তারা যেন তাদের ক্রীতদাসীয় অতীত বাস্তবতা তাদের দেশের মধ্যেই ত্যাগ করে এসেছে। সেসব যেন দূরে গুটিয়ে ফেলে এসেছে খালি ম্যাচবাক্সগুলোর ভেতরে। সেসব ভাবনাকে পুরনোর ভেতরেই সীল করে দিয়েছে, বাতিল জুতোর মতো, কোনো প্রকার ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে। 

সে তখন শুনতে পায়। তা তাকে চমকে দেয় এবং সে প্রায় তার মাথা জানালার সঙ্গে লাগিয়ে করে ফেলে। তার কানে বজ্রপাতের মতো শোনায়। হুঙ্কার। আগ্নেয়াস্ত্রের ওপরে আবার হাত রাখে। সে দেখতে পায় ভূমি থেকে ধুলো লাফিয়ে উঠছে, সবদিকে ধুলো উড়ছে এবং তখন জিপগাড়িটি বারবাব গাছ লক্ষ্য করে ছুটছে। সে নিজেকে চিৎকাররত অবস্থায় লক্ষ্য করলো এবং সে জানে না সে কি বলে চিৎকার করছে, কার উদ্দেশ্যে চিৎকার করছে। কিন্তু সে তার জানালায় দাঁড়িয়ে আছে, চিৎকার করছে এবং কেউ শুনতে পাচ্ছে না। তারা এখন দৌড়াচ্ছে। প্রথমে নারীটি, তারপরে লম্বা মতো লোকটি, সব শেষে মোটা মতো লোকটি। ছিটকে পড়ার মতো তারা দৌড়াচ্ছে।

সে দেখতে পেলো জিপগাড়িটি আকস্মিক ধাক্কা খেয়ে থেমে গেলো এবং সীমান্তরক্ষী পুলিশেরা মোটা মতো লোকটিকে থাবা মারলো। তার অবশ্যই উল্টে পড়ার কথা, কেননা সে দেখতে পাচ্ছে পুলিশদের কালো লাঠি উপরে উঠছে-নিচে নামছে, নিচে নামছে-উপরে উঠছে, আঘাত করছে, একটানা, চাবুক মারার মতো করে। সে লাঠিগুলোকে দেখতে পায়, শরীরগুলোকে, বাহুগুলো উঠছে-নামছে, নামছে-উঠছে। যেন একটি নদী শ্বাস নিচ্ছে। এক মুহূর্ত পরে সে বিস্মিত হতে শুরু করলো যখন এই ওঠা-নামা থেমে যাবে, নিশ্চিতভাবে মোটা মতো লোকটিকে দমন করা গেছে। তাকে ওইরকম মার দেয়ার পরে তা হওয়াই উচিত।

কিন্তু পুলিশের লাঠি উঠছে-নামছে, নামছে ও জেগে উঠছে একটি আহত সিংহের গর্জনের মতো এবং সে শুধুমাত্র সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, দেখছে, এমনকি তার আগ্নেয়াস্ত্রের ওপরে তার হাত যে কোনো সময়ের থেকে শক্ত হয়ে উঠলো, সে হঠাৎ চাইলো এসব যেন থামে, তখনও বেশি সময়ও হয়নি মোটা মতো লোকটিকে যাকে তারা এখন প্রহার করছে, কিন্তু তার বাল্যবন্ধু জুমার জন্য, সে তাদের থামাতে চাইলো, সে শুনতে পায় সাহায্যের জন্যে তার চীৎকার, ঐ কণ্ঠস্বর সে খুব ভালোভাবেই চেনে, সে দেখতে পায় ক্ষতস্থান থেকে রক্ত চুঁইয়ে নামছে, সে তার বন্ধুর ভয়ের স্বাদ টের পায়, সে তার ব্যথা অনুভব করে, অনুভব করে হাতে থেঁতলে যাওয়া মাংসের কথা, যদিও সে  হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ধরে আছে।

এবং তখন হঠাৎ করে প্রহার করা থামলো, তাকে উপরে তুললো, ছুঁড়ে ফেললো জীপগাড়ির পেছন দিকে। এবং গিয়ে উড়ে পড়লো নিচে, রাস্তায়। সব সে দেখতে পারে ধুলোর মতো। ধুলোর মেঘ। সে উঁচু মতো লোকটিকে নিয়ে ভাবে, সে ভাবে নারীটির কথা, তারাও কি ধরা পড়বে? তারাও কি শাস্তি পাবে? ধুলোর মধ্যে গড়িয়ে নারীটিকে আঘাতের পরে তার পোশাকটি কেমন দেখাবে? সে অপেক্ষা করে। অবশেষে, আরো একটি ধুলোর মেঘের সৃষ্টি হলো, জীপগাড়িটি একটি হিং¯্র পশুর মতো রাস্তায় এগিয়ে চলে, ফিরে যায় যে রাস্তা থেকে এসেছিলো সেদিকে। আরো ধুলো, তার মাঝে ঘাসের মতো এক টুকরো হলুদ সে দেখতে পায়। ঝুড়িটি। সে ভুলে গিয়েছিলো নারীটির ঝুড়ির কথা, তার মনে পড়ে যায় জীপগাড়ি আসার পূর্বে ঝুড়িটি সম্পর্কে তার অনুভূতির কথা।

ঝুড়িটি। সে দ্রুত দরজার দিকে যায়, এটি খোলে, দ্রুত বাওবাব গাছের দিকে যায়। সূর্য তার পেছনে গদা চালাচ্ছে, তার হাঁটুর অনবরত যন্ত্রণা সম্বন্ধে তার কোনো অনুভূতি নেই। ঝুড়িটি। সে এটিকে গাছের নিচে দেখতে পায়। একটি সংবাদপত্র যার লাল অক্ষর উচ্চকিতভাবে জানাচ্ছে ‘আমার জিম্বাবুয়ে’। সে তার আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে খোঁচা দেয়, কাগজগুলো একপাশে সরিয়ে দেয়। সে প্রস্তুত ছিলো না এটা দেখার জন্য যে দু’টো ছোট ছোট চোখ তাকে দেখছে, প্রস্তুত না থাকার কারণে সে হতবুদ্ধি হয়ে গেলো, তার হৃদয় গর্জাচ্ছে। সে সেখানে ঝুড়িটির দিকে তাকিয়ে ছিলো যতোক্ষণ পর্যন্ত না সে মাটিতে বসে পড়লো এবং তার আগ্নেয়াস্ত্রটি ফেলে দিলো ধুলোয়, ঝুড়িটিকে তুলে নিলো। এবং ততোক্ষণ পর্যন্ত সে থামলো না যতোক্ষণে না সে ফিরে এলো, কারণ সে জানে বাচ্চাটিকে সূর্য থেকে রক্ষা করতে হবে, এবং সে তার বুকের কাছে এমন ভাবে ধরে রাখলো যেন সে ঈশ্বরকে বহন করছে।

. . . . 

অনুবাদকের নোট * বাওবাব গাছ- এর যদিও বাংলা নাম নেই, তবুও এর বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘বাঁদুরে রুটির গাছ’।  এর কাণ্ড সুবিশাল ও রসালো ফল ধরে। আফ্রিকান ভাষায় এর অর্থ হলো ‘উল্টানো গাছ’। গাছগুলোকে দেখলে মনে হবে কেউ গাছগুলিকে উল্টিয়ে লাগিয়েছে। এ গাছ নিয়ে মজার গল্প প্রচলিত আছে। যেমন: ঈশ্বর যখন সব গাছকে পৃথিবীতে পাঠালেন তখন তিনি নির্দেশ দিলেন সব গাছকে স্থির দাঁড়িয়ে থাকার জন্য। কিন্তু এই গাছ এতো নড়াচড়া করে যে ঈশ্বর এ গাছগুলিকে উল্টা করে মাটিতে লাগিয়ে দিলেন। এই গাছের ফলের নাম হলো মাঙ্কি ব্রেড বা বাঁদরের রুটি। ফল ভিটামিন সি যুক্ত।

মন্তব্য: