জন্ম মৃত্যু জীবনযাপন
মৃত্যু আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেবে না,
আমি তাই নিরপেক্ষ মানুষের কাছে, কবিদের সুধী সমাবেশে
আমার মৃত্যুর আগে বােলে যেতে চাই,
সুধীবৃন্দ ক্ষান্ত হােন, গােলাপ ফুলের মতাে শান্ত হােন
কী লাভ যুদ্ধ কোরে? শত্রুতায় কী লাভ বলুন?
আধিপত্যে এত লােভ? পত্রিকা তাে কেবলি আপনাদের
ক্ষয়ক্ষতি, ধ্বংস আর বিনাশের সংবাদে ভরপুর…
মানুষ চাঁদে গেল, আমি ভালােবাসা পেলুম
পৃথিবীতে তবু হানাহানি থামলােনা!
পৃথিবীতে তবু আমার মতাে কেউ রাত জেগে
নুলাে ভিখিরীর গান, দারিদ্রের এত অভিমান দেখলােনা!
আমাদের জীবনের অর্ধেক সময় তাে আমরা
সঙ্গমে আর সন্তান উৎপাদনে শেষ কারে দিলাম,
সুধীবৃন্দ, তবু জীবনে কয়বার বলুন তাে
আমরা আমাদের কাছে বলতে পেরেছি,
ভালাে আছি, খুব ভালাে আছি?
গােলাপের নীচে নিহত হে কবি কিশাের
গােলাপের নীচে নিহত হে কবি কিশাের আমিও ভবঘুরেদের প্রধান
ছিলাম।
জোৎস্নায় ফেরা জাগুয়ার চাঁদ দাঁতে ফালা ফালা করেছে আমারও
প্রেমিক হৃদয়।
আমিও আমার প্রেমহীনতায় গণিকালয়ের গণিকার কাছে ক্লান্তি
সপেছি
বাঘিনীর মুখে চুমাে খেয়ে আমি বলেছি আমাকে উদ্ধার দাও!
সক্রেটিসের হেমলক আমি মাথার খুলিতে চেলে তবে পান করেছি মৃত্যু
হে কবি কিশাের
আমারও অনেক স্বপ্ন শহীদ হয়েছে জীবনে কাঁটার আঘাত সয়েছি আমিও।
হৃদয়ে লুকানাে লােহার আয়না ঘুরিয়ে সেখানে নিজেকে দেখেছি
পাণ্ডুর খুবই নিঃস্ব একাকী!
আমার পায়ের সমান পৃথিবী কোথাও পাইনি অভিমানে আমি
অভিমানে তাই
চক্ষু উপড়ে চড়ইয়ের মতাে মানুষের পাশে ঝরিয়েছি শাদা শুদ্র পালক।
হে কবি কিশাের নিহত ভাবুক, তােমার দুঃখ আমি কি বুঝি না?
আমি কি জানি না ফুটপাতে কারা করুণ শহর কাধে তুলে নেয়?
তােমার তৃষ্ণা আমার পাত্রে কোন কবিতার ঝিলকি রটায় আমি কি
জানি না
তােমার গলায় কোন গান আজ প্রিয় আরাধ্য কোন করতলও হাতে লুকায়
আমি জানি না মাঝরাতে কারা মূতের শহর কাধে তুলে নেয়?
আমারও ভ্ৰমণ পিপাসা আমাকে নারীর নাভিতে ঘুরিয়ে মেরেছে
আমিও প্রেমিক ক্রবাদুর গান স্মৃতি সমুদ্রে একা শাম্পান হয়েছি আবার
সুন্দর জেনে সহদরাকেও সঘন চুমাের আলুথালু করে খুঁজেছি শিল্প।
আমি কভু এর কিছুই তােমাকে দেবাে না ভাবুক তুমি সেরে ওঠো
তুমি সেরে ওঠো তােমার পথেই আমাদের পথে কখনাে এসাে না,
আমাদের পথ
ভীষণ ব্যর্থ আমাদের পথ।
ঝিনুক নীরবে সহাে
ঝিনুক নীরবে সহাে
ঝিনুক নীরবে সহাে, ঝিনুক নীরবে সহে যাও
ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!
টানাপােড়েন
প্রতি পদপাতে এক একটি রােমশ ভয় আমুণ্ডু আচ্ছন্ন করে
যখন আমাকে
আবিষ্কার করি: কোটরের সাপগুলাে বিষজিহবা দিয়ে সব নিচ্ছে টেনে
বাকলের সমস্ত শরীর।
কোনটা ধরে রাখি আর কোনটা ফেলে দেই!
কোটর বাকল সবই আমার!
একটায় বিষধর সাপ, অন্যটায় প্রকৃতির পাখির নখের নৃশংসতা!
প্রতি পদপাতে এক একটি রােমশ ভয় আমৃণ্ড আচ্ছন্ন করে
যখন আমাকে
আবিষ্কার করি। মৃত্যু তার কালাে শুঁড় দিয়ে সব টেনে তুলছে
জীবনের পাল্টে যাওয়া বয়সে পাথরগুলােকে!
কোনটা ধরে রাখি আর কোনটা ফেলে দেই
একটায় অবলুপ্তি, অন্যটায় অন্ধ জাগরণ।
নিঃসঙ্গতা
অতটুকু চায়নি বালিকা।
অত শােভা, অত স্বাধীনতা
চেয়েছিল আরাে কিছু কম,
আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লােক, অত ভীড়, অত সমাগম
চেয়েছিল আরাে কিছু কম!
একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!
সঙ্গমকালীন একটি বৃশ্চিকের মৃত্যু দেখে
এই মৃত্যু জন্ম দেয় শিল্পে কুসুমঃ
এই আদি সঙ্গমের অনাদি পিপাসা
দ্যাখাে দ্যাখাে ঝিলের ঝাকড়া ঘাসে তীরবর্তী একলা বাতাসে ঐ
টান টান একটি বৃশ্চিক!
অফুরন্ত রক্তবমি করে গেলাে, অফুরন্ত অফুরন্ত!
ক্ৰমশঃ মৃত্যুর দিকে সঙ্গমের অনাদি পিপাসায়
বৃশ্চিকের লালা যেনাে স্বর্গমর্য জুড়ে একটি
স্ত্রী বৃশ্চিকের বােবা ঘামে হিমে কুয়াশায় নিস্পন্দিত নদী হয়ে গেল।
শেষ মিথুনের শেষে তার মৃত্যু!
জানলােনা ঘাসের ভিতর একটি যৌন আলিঙ্গন
এমন গােপন শিল্পে মৃত্তিকায় মুছিল শরীর।
জানলােনা!
কেউ জানলােনা!