সাহান আরা মিশি
চার তলার কামরা। চারপাশে বইয়ের লাইব্রেরি। দখিনের জানালা সারি সারি। কাঁচের কপাটগুলো কোন এক ঝড়ে ভেঙ্গে খান খান হয়ে নিচে পড়েছে। কতগুলো সেকেলে আলমিরা। তাতে বই আর বই। বই বন্ধু। তার সাথে সখ্যতা গড়তেই এখানে আসা। খুব একটা পাঠক এখানে আসে না। নিত্য ঝাড়-পোছ করলেও বোঝা যায়- জায়গাটা নির্জন, নিরিবিল।
জানালার পাশে একটা কাঠের আলমিরা। তারই মাথার উপর একটা ঘুঘু পাখি রোজ আসতো। বাসা বেধেছিলো। মাথা মোড় ভেঙে ডাকতো পাখিটা। শুনতে শুনতে ওর ভাষা বুঝতে লাগলাম।
বাবা-জতু………………….
ফের ফের…………………
পূরা কালে ওরা নাকি মানুষ ছিল। নিরুদ্দেশ ছেলেকে এমনিভাবে ডাকতে ডাকতে ওরা নাকি একদিন ঘুঘু পাখি হয়ে গেছে…. এ ভাবনা থেকেই ওকে উপলব্ধি করতাম। ‘ও’ অবশ্য আমাকে তেমন মালুম করতো না…. পাখিরা মানুষের ভাষা বোঝে। তাই আমার উপলব্ধিটা ‘ও’ সহজে বুঝে নিয়েছিল। এভাবে দিনগুলো কাটছিল ভালই। ওর আনাগোনা আমার একাকীত্বকে ভরিয়ে দিত। ওর একটা ছানা এখানে জন্ম নিয়েছিল। একটু একটু করে বেড়ে উঠতেও দেখেছি। ওর স্পর্শ নিতে ইচ্ছে হতো। পারিনি। মনে হতো ‘ও’ একদিন বলবে- “দাদীমা, এইতো আমি। ভয় নেই”।
সেদিনটি আসার আগেই আমার স্বপ্ন ভেঙে গেল। বড় সাহেব পরিদর্শনে আসবেন সংবাদ এলো। চারপাশে তোড় জোড়। আবার ঝাড়-পোছ। এতে ওদের জীবনে অশনির বিপর্যয় নেমে এলো। আশ্রয়টুকু ভেঙে টুকরো টুকরো হলো।
ভাবতে পারিনা ওরা নেই। ঘরে ঢুকতেই দৃষ্টি ওখানে নিক্ষিপ্ত হয়। সব শূন্য…..বুকটা হাহাকার করে ওঠে।