এ্যানি রুথের দু’টি কবিতা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

এ্যানি রুথ

এ্যানি রুথ আমেরিকান লেখক, কবি, চিত্রকর ও শিল্পী। জন্ম ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩ সিনসিনাটিতে। বাবা হাওয়ার্ড হ্যাম্পটন, মা স্টিলা লুইস। ১৯৮৭ সালে সান দিয়েগো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় লিবারেল আর্টস-এ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। রুথের রঙতুলি, গান ও কবিতা নারী ও শিশুদেরকে ব্যাপকভাবে আন্দোলিত করে। এ্যানি রুথ কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদি আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। এসোসিয়েশান ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অব কার্লাড পিপল সংগঠনের হয়ে ১৯৯০ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করছেন। এছাড়া নিগ্রো-আন্দোলনের বেশ কয়েকটি সংগঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন এবং বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এ্যানি সর্বদা ইতিবাচকতার পক্ষে বলেছেন। শিল্প তার বাচনিক বাহন। তার উচ্চারিত সুর ও স্বর হৃদয়নিসৃত। তার অনুমোদিত চিত্রসংগ্রহের মধ্যে অন্যতম- Procter & Gamble, Fifth Third Bank, and Central Clinic – University of Cincinnati and the Presbyterian Foundation. দেশব্যাপী স্কুল, গ্রন্থাগার, আর্ট সেন্টার এবং বাড়িতে বাড়িতে তার পোস্টারগুলোর চাহিদা রয়েছে। তার শব্দ এবং শিল্পকর্মের মাধ্যমে সারাবছর তিনি স্বপ্নচারী হাজার হাজার শিশুকে “সৃজনশীলতা এবং কল্পনা” রাজ্যে বিচরণ করতে সহায়তা করেছেন।

এ্যানি রুথের দু’টি কবিতা

অনুবাদ: শিকদার ওয়ালিউজ্জামান

বস্তির মেয়ে

বস্তিতে থাকে তোর পরিবার

আমি জানি, তুইও জানিস

তোর দাদিমা ছিল মাতাল

কয়েদিখানায় তোর ভাইদের বাস

তুইও তাদের মতোই

বোকার স্বর্গে আছিস, তোর জ্ঞাত নয়

কারণ বস্তিনীই হবি তুই

তোরা কিছুই করার নেই আর…

পাঠশালা তোর কল্পনার ঘর

ওখানে যাওয়ার সাধটুকুও নেই

এমন গল্পই সাজানো বস্তির ডেরায় ডেরায়…

হয়তো তোর চারপাশ ঘুরবে 

দশটি সন্তান

অপরাধজগত ঘিরবে তোকে

হ্যা, তোর বস্তিবাসীর জীবন 

      এক কানাকড়ির মূল্যেরও নয়।

যদি তুই অকর্মার গলায় মালা না পরাস

তোকে বেদম পেটাবে সে 

হয়তো কফিন বাকসে বন্দী, শেষ হবি তুই

    লোকে কাঁদবে তোর আঙিনায়। 

কারণ তোর পরিবার বস্তির পরিজন

তুই জানিস, তুইও তাই

ও মেয়ে, বস্তির মেয়ে এগিয়ে যা

তোর নামের উত্তর তোর কাছেই,

        তাকে জাগিয়ে তোল…

আমিও বস্তির মেয়ে

ভুলে ভুলে দিশেহারা ছিল পরিবার

আমার দাদিমা ছিল মাতাল

পুলিশের ধাওয়ায় পালাতো আমার ভাই

হ্যা, আমি যাচ্ছি পাঠঘরে

আমার লক্ষ্য স্থির

তুই সযতেœ পুষে রাখ 

আমার বলে যাওয়া ইতিহাস।

আমিও ছিলাম বস্তির মেয়ে

যেখানে ছিলাম, সে আমার অহংকার

গরীব আর বস্তিতে বাসে

    কখোনই লজ্জা ছিলনা আমার

যদিও আমি বিত্তশালী 

এখনও

বস্তিই আমার হৃদয়

কারণ ওখানেই শিখেছি অহংবোধ, সম্ভ্রম

        আর অতি দরকারী সব…

আমি শিখেছি মানুষ তার পরিবারের চলনে-

বিচার্য নয়

অথবা এমন জায়গা যাকে তারা বলে ঘর;

হৃদয় আর আত্মাই হলো মানুষের বিচারালায়। 

আমি কালো মেয়ে, আর কিছু নই

এমন সময় গ্যাছে যখন

আমার কৃষ্ণবর্ণে লজ্জা পেতাম

উৎকট মজা করতো বন্ধুরা; আমি সয়ে যেতাম

এমনটা আমি অনুভব করতে চাইনি

কিন্তু কৃষ্ণবর্ণ আমাকে আতঙ্ক দিয়েছে শুধু

“আফ্রিকান, কয়লা, ব্লাক বেবি”

আমি শুনেছি এমন

তবে কেউ দেখেনি, জানতেও পারেনি 

অনেক অশ্রু ঝরে গ্যাছে নিরবে…  

ওগুলোই হয়েছিল আমার ডাক নাম এবং

ও নামেই আমাকে ডাকা হতো প্রতিদিন, স্কুলবেলায়

কারণ তখন আমার ছিল তারুণ্য আর বেড়ে ওঠার কাল

আমি খেলতাম আমার সঙ্গীদের নিয়মেই।

তখনও আমি তরুণ

আমার বাবা আমাদেরকে ছেড়ে গেলেন একদিন

যুগলবন্দি হলেন এক স্বেতাঙ্গীর সাথে

বাবাকে প্রতিদিন ইশারায় ডাকতো সে।

আমার গায়ের রঙে আমি সত্যিই লজ্জা পেতাম

ভাবতাম এটা খুবই খারাপ

ভাবতাম শুভ্রবর্ণের মেয়েদের বিশেষ কিছু আছে

যা কখনোই পাইনি আমি

তখনও আমি তারুণ্যে-

একদিন এক ভদ্রমহিলার সাক্ষাৎ পেলাম যার গায়ের রঙ

আমার চেয়েও কালো। বললেন- তার বর্ণ ঈশ্বরের দান,

এবং তার আছে অসাধারণ অহংকার…

তিনি বললেন আমি সুন্দর

এমন কিছু আমার আছে যা আর কারো নেই

বললেন- তোমার স্কিন কালো আর মসৃন

            যা সৌর-পূর্ণতার বয়ন

বললেন, তোমার কৃষ্ণ অঙ্গকে পূর্ণতা দেয়

তোমার তুষারশুভ্র দাঁতের হাসি; 

এবং আমি নিশ্চিত তুমি ও হাসিই ছড়াবে 

যেখানেই যাও

প্রতিদিন তিনি আমাকে একইভাবে বলতেন

আমার উচ্চারণ ছড়িয়ে পড়লো এখানে ওখানে

অন্যরাও বলতে শুরু করলো

যাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ ছিল না কোনকালেই  

বন্ধুরাও বদলে গেল ক্রমে

তারা বললো, তোমার রূপ আমার অনুভব

আর হাসিতে হাসি মেলাতে দাও।

কারণ বোন, তুমিও সুন্দর বোন

    গাবর্ণে তুমি পুষে যাও অহংকার।

এখন আমার কৃষ্ণবর্ণে লজ্জা পাই না আর

যদিও তাতে অনেক বাঁধার সামনে দাঁড়াই;

আমার পৃথিবীতে আমার দাবি,

আমি কালো মেয়ে বসন্তের এক ফুল

আমি আনন্দের ফুল হয়ে ফুটি

আমাতেই আমার অহংকার

কারণ আমি কালো মেয়ে

            হতে চাই না আর কিছুই।

মন্তব্য: