কয়েকটি অস্ট্রেলীয় কবিতা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

ভূমিকা ও ভাষান্তরঃ গৌরাঙ্গ মোহান্ত

অস্ট্রেলীয় কবি ব্রুস বিভার ম্যানলির সমুদ্র তীরবর্তী শহরতলিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলো নিরানন্দে কাটে। তিনি মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে জীবনধারণ করেন। গোপালক, করণিক, ফলসংগ্রাহক, মুদ্রণশোধক, সাংবাদিক হিসেবে কর্মনিযুক্ত থেকে শেষাবধি লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ তিনি তাঁর প্রথম কাব্য Under the Bridge ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করেন। বাইপোলার ডিসঅর্ডার ভুক্তভোগী কবি বিয়ে করে পূর্ণকালীন লেখকসত্তা অর্জনের সুযোগ লাভ করেন এবং সাহসের সাথে কাব্যসাধনা করে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তাঁর কাব্যের মধ্যে Seawall and Shoreline (1964), Open at Random (1967), Letters to Live Poets (1969), Lauds and Plaints : Poems (1968-1972) (1974), Odes and Days (1975), Death’s Directives (1978), Headlands: Prose Sketches (1986), Charmed Lives (1988), New and Selected Poems 1960-1990 (1991), Anima and Other Poems (1994), Poets and Others (1999), The Long Game and Other Poems (2005) উল্লেখযোগ্য।

শিশুরা

ব্রুস বিভার

আমি শিশুদের কাছে পক্ষপাতপূর্ণ নই;

জননযন্ত্রের উপহাররাশি হয়নি আমার ভাগ্য

বিধাতাকে ধন্যবাদ — এবং ক্ষমা করুন আমার

সমস্ত পিতৃসুলভ প্রবৃত্তির অভাব। আমার কবিতাগুলো

কখনোই বংশধর হিসেবে হয়নি বিবেচিত

তবে হয়েছে ডেইমনের থেকে অবারিত উপহাররাশি হিসেবে।

সক্রেটিসের কি সন্তান-সন্তনি ছিলো

অধিকন্তু ডিসকোর্স? আমি ধরে নিতে পারি

তাঁর ছিলো কেননা তাঁর আচরণ

ছিলো পিতৃসুলভ। মহৎ প্লেটো

ছিলেন বালকের সাথে যৌন সর্ম্পক স্থাপনকারী — আর নয়

শ্রেয়োনীতি, নীতিবিদ্যা ও যৌন

প্রবণতা প্রসঙ্গ। আমি সর্বদা

মধ্যবয়সী মহিলার জন্য অধিকতর

অনুরাগ দেখিয়েছি। তাঁরা সুন্দর

সুরতির জন্য কৃতজ্ঞ। পুরুষেরা জীবনের পরিবর্তনে

কেবল যুক্তি দেখাতে চান

কৈশোরপ্রাপ্ত বালিকা বা বালকদের

জন্য তারা  ছিলেন অভীষ্ট। যে-কোনো

লিঙ্গের একজন ভালো বক্তা দিন আমাকে সারাক্ষণ।

অস্ট্রেলীয় কবি মার্গি ক্রোনিন এমটিসি ক্রোনিন নামে কবিতা লিখছেন; তিনি নিউ সাউথ ওয়েলস এর মেরিওয়াতে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং কুইন্সল্যান্ডস সানসাইন কোস্টের ক্যালান্ড্রায় বেড়ে ওঠেন। শিক্ষাজীবনে তিনি আইন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ গ্রহণ করেন। তিনি সিডনির প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃজনধর্মী লিখনশিল্প বিষয়ে পাঠদান করেন এবং তাঁর পিএইচডি গবেষণাপত্রে আইন ও সাহিত্যের উজ্জ্বল সংগমস্থলকে উন্মোচন করেন। তাঁর প্রথম কাব্য Zoetrope: We See Us Moving ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর এক ডজন কাব্য অস্ট্রেলিয়া, ইউকে, ইউএসএ থেকে মুদ্রিত হয়। তাঁর প্রবন্ধের বই Squeezing Desire Through a Sieve: Micro Essays on Judgement and Justice (2009) গবেষক হিসেবে তাঁর খ্যাতিকে প্রোজ্জ্বল করে। সবকিছুতেই ধুলো (The Dust in Everything) কবিতাটি পিটার পর্টার সম্পাদিত The Best Australian Poetry 2005 গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।

সবকিছুতে ধুলো

এমটিসি ক্রোনিন

সবকিছুতে স্মরণ করুন ধুলো?

তারা-প্রাণী, হৃদয়-প্রাণী, ব্যক্তি-প্রাণী।

আপনার মৃত্যুর পরে সময় থাকবে এমন কোনো গ্যারান্টি নেই।

দুনিয়ার সাথে আপনার মৃত্যুকে ভাগ করে নিতে হবে।

বিষ বা ফুল এবং তাদের এক হওয়ার জ্ঞানের মতো।

আপনার মুখের উজ্জ্বল বেগুনি মাঢ়ি বিবর্ণ হবে এবং তারপর কালো।

‘তারপরও করতে হবে’ ধারণ করবে এর মুকুট ও বিনাশ।

যে ভাত খান নি তা আর হবে না খাওয়া।

থালায় পড়ে-থাকা খাবার ভুখা বনে যাওয়া আপনার মনে বার বার আসবে ফিরে।

দরজার পাশে পড়ে আছে আপনার ব্যাগ।

তখন থেকে অল্প সময়ের মধ্যে এটি ঝাড়া হবে ও রাখা হবে ঝুলিয়ে।

কখনো শূন্যতর ব্যাগের ছিলো না অস্তিত্ব।

একজন মৃতের বিবিধ জিনিস  দিয়ে ছিলো পূর্ণ।

সেগুলো ধুলোর মতো।

আপনার হাতে মানানসই ছিলো যা, ধুলো।

আপনি কাঁধের আকার অনুসরণ করেছিলেন যা, ধুলো।

আপনি যা খুলেছেন ও পড়েছেন এবং যার জন্য কেঁদেছিলেন, ধুলো।

ধুলো, চাঁদ; ধুলো রডোডেনড্রন।

অন্যের চোখের দৃষ্টি ধুলো।

এবং আপনার রয়েছে শূন্য মাথা।

এর মধ্যে আপনার মৃত্যুর পর পুরো প্রথম রাত দিয়েছে উড়াল।

ওই সমস্ত তারা এবং তাদের অভিজ্ঞান-অভ্যাস

আলো ব্যবহার করে কবর পেরিয়ে তাদেরকে রাখছে জীবিত।

তাদের সাথে আপনি চিন্তা করুন এবং সবকিছুতে স্মরণ করুন ধুলো।

ধৈর্য ধরে ও চাহিদা ছেড়ে আপনি এবার হয়ে ওঠুন।

কোনো গোপন রহস্য একবার আপনি প্রকাশ করতে চেয়ে থাকতে পারেন।

একটা বাড়ির ইট, রস-ফোঁটা।

বাস্তবতা রসালো ফল, কানে দেবতার হারানো ভ্যা ভ্যা ডাক।

আপনার নিজস্ব চিন্তাভাবনার একটানা শক্তি।

আপনার মৃত্যুর আগে সময় থাকবে এমন কোনো গ্যারান্টি নেই।

সবকিছু অদৃশ্য হতে পারে, ভ্রমণের মতো।

ধুলো প্রতিভাধরের মনে কিছু ঘটাবার জন্য থেকে যেতে পারে।

এবং মৃত কখনো জীবনধারণ না করে থাকতে পারে।

না জাত, না অজাত, পরিবর্জিত আত্মত্যাগ।

যে ভাত তারা খেয়েছেন তা কখনো হয় নি ভুক্ত।

ভাত হচ্ছে ধুলো।

না, ধুলোর শাখাপ্রশাখা।

ছোট কণার মতো এটি বেড়ায় ভেসে।

সেভাবে আপনি নাচতে শিখেছেন এবং সবকিছু করতে।

অস্ট্রেলীয় কবি ক্রেগ পাওয়েল নিউ সাউথ ওয়েলসের ওলংগং-এ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি মনঃচিকিৎসক হিসেবে পেশায় নিযুক্ত হন। মধ্যষাটের দশকে Twentieth Century, The Realist, Poetry Australia প্রভৃতি জার্নালে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম পর্যায়ের কাব্যকর্মে ব্রুস বিভার ও ফ্রান্সিস ওয়েবের প্রভাব লক্ষণীয়। তাঁর প্রথম কাব্য A Different Kind of Breathing (1966) ব্রুস বিভার এবং দ্বিতীয় কাব্য ও Learn by Going (1968) ফ্রান্সিস ওয়েবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত। ক্রেগ রচিত কাব্যের মধ্যে A Country Without Exiles (1972), Rehearsal for Dancers(1978), Selected Poems 1963–1977( 1978), A Face in Your Hands (1984), The Ocean Remembers It Is Visible. (1989)  উল্লেখযোগ্য।  ক্রেগের কবিতায় মনোবীক্ষণিক চেতনার গভীর দীপ্তি পাঠককে আলোড়িত করে। কবি বস্তুত মানসিক ব্যধিগ্রস্ত মানুষের সংস্পর্শে এসে যে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করেন তার শৈল্পিক পরিস্ফুটন ঘটান কবিতার দৃপ্ত অবয়বে। তাঁর জেমস ডিকে অনুস্মৃতি, ১৯৬৮ 1968 (Remembering James Dickey, 1968) কবিতাটি Les Murray সম্পাদিত The Best Australian Poems 2005 গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।

জেমস ডিকে অনুস্মৃতি, ১৯৬৮

ক্রেগ পাওয়েল

বেশ, তিনি ছিলেন বিখ্যাত কবি, পর্বত মানব, তিনি

সে বছর পরিদর্শনে আসেন। গিটারে তোলেন ঝংকৃতি,

সংগীতে আমাদের সংগে একাত্ম হন এবং যুদ্ধের গল্প বলেন-

সিডনির আর ও আরে ছিলেন যোদ্ধা পাইলট,

ভালোবাসা এক তরুণীকে এখনে করেন বিয়ে, পরে নিঃশঙ্কচিত্তে

প্রিয়ার বাহুডোর কেটে নিউ গিনিতে তার

স্কোয়ড্রানে ফিরে যান। আমরা মৌনতা-মগ্ন হয়ে পড়ি

মেয়েটির অব্যাখ্যেয় মৃত্যুকথা তিনি যখন বোঝাতে থাকেন,

কীভাবে তিনি ছুটি পেতেন না, তার পরিবার চিঠি লিখতেন না,

এবং সারাক্ষণ মেয়েটি তারমন ও কবিতা আচ্ছন্ন করে রাখতেন।

তিনি বয়োবৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, এবং সবকিছু আবিষ্কার করে ফেলেন,

সিডনি তরুণী, বিয়ে, তার হৃদয়ভেদী মৃত্যু।

পাইলট নন, রাডার পর্যবেক্ষক, তার ছিলো

শাশ্বত কাহিনির জন্য অনবদ্য কাব্যিক অনুভব-গাঢ়তা,

আকাক্সক্ষা ও ব্যর্থতা যা বিকাশ করে মহত্ত্ব।

অস্ট্রেলীয় কবি এস. কে. কেলেন (স্টিফেন কেনেথ কেলেন) ১৯৫৬ সালে সিডনিতে লেখক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা স্টিফেন ইস্টভ্যান কেলেন ছিলেন একজন নাট্যকার এবং সাংবাদিক; তাঁর ভাই ক্রিস্টোফার কেলেন কবি হিসেবে সুবিদিত। বাল্যকাল থেকেই কেলেন কবিতা রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে তরুণ কবিদের জন্য Poetry Australia পুরস্কার লাভ করেন। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দর্শন ও সাহিত্য বিষয়ে পাঠগ্রহণ করেন এবং পরবর্তী সময়ে ক্যানবেরায় স্থায়ী হয়ে কমনওয়েলথ পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে কর্মব্যাপৃত থাকেন। তিনি Canberra Times এর গ্রন্থসমালোচক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। কেলেন সৃজনশীল লিখনকর্মে সফলতার সাথে শিক্ষা দান করেন এবং দক্ষিণ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬ সালে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভিয়েতনামে তিনি ১৯৯৮ সালে এশিয়ালিঙ্ক লেখক হিসেবে কর্মনিযুক্ত থাকেন। সৃজনশীল লিখনকর্ম ও ইংরেজি সাহিত্যে ২০০৫ সালে এডেলেইড (অফবষধরফব) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর রচিত কাব্যের মধ্যে The Gods Ash Their Cigarettes (St Lucia, Qld: Makar Press, 1978), Zen Maniacs: Modern Life Studies (Modular Press, 1980), To the Heart of the World’s Electricity (Broadway, NSW: Senor Press, 1980), Atomic Ballet (Sydney: Hale and Iremonger, 1991), Trans-Sumatran Highway and Other Poems (Cook, ACT: Polonius Press, 1995), Postcards from the Universe (Cambridge, UK: Folio/Salt, 1998), Shimmerings: Poems (Wollongong, NSW: Five Islands Press, 2000), Goddess of Mercy: Poems (Blackheath, NSW: Brandl and Schlesinger, 2002), Earthly Delights (Canberra: Pandanus Books, 2006) উল্লেখযোগ্য। Earthly Delights কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি যৌথভাবে ২০০৭ সালে ACT’s Judith Wright Award এ ভূষিত হন। তাঁর কবিতায় প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের ইতিহাস এবং পুরাণতত্ত্বের সাথে অস্ট্রেলীয় অভিজ্ঞতার মিশেল পাঠককে গভীর উদ্দীপনা দান করে। শহর (A City) ও সাবানফেনা চক্র (Suds Cycle) কবিতা দুটি Earthly Delights কাব্যগ্রন্থ থেকে সংগৃহীত

শহর

এস, কে, কেলেন

কর্দমিত লোহিত নদী সিক্ত করে খামার ভূমি,

নগরনিবাসীর প্রিয় শহরের মাঝ দিয়ে চলে ধীরে এঁকে বেঁকে।

পুনর্নিমিত বাড়িগুলোর ছাদে স্থাপিত হচ্ছে টাওয়ার

এবং আকাশচুম্বী ঘোরানো সিঁড়ি, ও মূর্তিরাজি,

পুনরাবর্তী দেবদূত ও প্রসন্ন দানবেরা আকাশ-প্রহরী।

পূর্ব জানালা পর্দাচ্ছাসিত, ভোরের সূর্য

লেজার-নিয়ন্ত্রিত বোমার প্রভাস্ফুরনের মতো হয় দগ্ধ।

শুভ্র প্রাচীর প্রতিবিস্বিত করে মার্বেল পাণ্ডুরতা

(নিয়তি ও বিপর্যয়) যা হয়ে ওঠে শুভ্র প্রদীপ্তি,

অনুরঞ্জিত হয় উজ্জ্বল মানবিক জীবন যাপন, মার্কেট স্থল।

ঋদ্ধ রাজপথ জীবন, শিশুরা খেলে, আকাশ হতে

মৃত্যু অবতরণ করবে না প্রত্যাশায় তারা প্রমোদিত।

প্রাচীন পন্থায় শিক্ষিত হয়ে বিকশিত-মুক্ত হবার

কিংবা ইচ্ছেমতো আধুনিক হবার প্রার্থনা করে কেউ কেউ।

সাবানফেনা চক্র

অনাবৃষ্টি স্থায়ী ছিলো সাত বছর

বছরগুলো কেবল বৃষ্টির ক্ষুদ্র কণার 

মেঘ উড়ে চলেছিলো যতক্ষণ না একদিন

ওয়াশিং মেশিন

কথা বলেছে, নদী সত্তার মতো বাকদক্ষ

অথবা সাগরের স্বচ্ছ তরঙ্গের মতো

সতেজ, স্বচ্ছ আমাদের সকলের

মাঝে এক অদৃশ্য জলশক্তি,

জলবৃক্ষকে শক্তিময় করে

উদ্ধার করে তোমার ভেতরের মৎস্যকে 

মেঘ সমলয়ে ঘূর্ণি তোলে

প্রক্ষালন চক্রের অভিকর্ষ – আহা!

ঝঞ্ঝা পেছন দরজাকে এক ধাক্কায় বন্ধ করে দেয়

পূর্ণ হয় অশনিসম্পাত আর বৃষ্টির নৃত্য।

মন্তব্য: