সরসিজ আলীম

এক সময় তােমাকে আমার কবিতার ভক্ত পাঠিকা বলেই জানতাম। আর তুমি আমার মতােই মনে করতে খুব সকালে মাছরাঙারা পুকুর জলে রং-তুলি নিয়ে ছবি আঁকতে বসে। বনে বনে ঘুরে ঘুরে যে ঘুঘু পাখিটা ছায়াদের কুড়িয়ে জড়াে করে রাখতাে বুকের তলে এক দুপুরে, তাকেও চিনতে তুমি; আর বৃক্ষের ডালে বসে ছায়াদেরকেও পা দোলাতে দেখেছাে মেঠো পথের পর।

দূর মাঠের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা থ’ ধরা একটি বুনােঝােপের আড়াল খুঁজতে খুঁজতে আমরা মুঠো মুঠো তুলে নিতাম পাকা বুনাে ফল, তুমি মুখ ভরে তুলে নিতে বুনােমধু।

এক সময় মনে হতাে তুমি আমার কবিতার প্রেমিকা, এক সময় তুমি আমার কবিতার কাঁধ ছুঁয়ে ইাঁটতে বলেই মনে হতাে পৃথিবীর তাবৎ মেয়েরা আমার কাঁধ ছুঁয়ে আছে। আর আমি স্বপ্নের হাত ধরে আর্নেস্তো চেগুয়েভারার পথ ধরে হেঁটে চলেছি পৃথিবীর দেশে দেশে।

এক সময় তােমাকে প্রেমিকা ভাবতাম বলেই তােমার খরিদ্দারের দালাল হতে চাই আজ, আর তােমারও। তােমার পানীয়, ওষুধ, তােমার সতর্কতা, তােমার পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দিয়ে তােমার খরিদ্দারকে ঘরে রেখে নেমে আসবাে গাড়ি বারান্দায়। তুমুল ঝড়-জলের রাতে বাড়ি ফিরতে পারবাে না, সারারাত বৃষ্টিতে ভিজবাে। যতবার করে তােমার কাপড় খসে পড়বে ততবারই ঘটবে বজ্রপাত, দদ্ধ হবাে না যন্ত্রনাবিদ্ধ হবাে না, বারবার ঘটে যাওয়া বজ্রপাত ছুঁয়ে তােমার শরীরটাকেই উপভােগ করবাে।

তােমার স্বামী রুশ-রুশ করে লেনিন-লেনিন করে স্ট্যালিন-স্ট্যালিন করে চীনের উপরও আস্থা হারিয়ে নেপাল ও ভারতের মাওবাদীদের দিকে ভ্রুকুটি ছুঁড়ে দিয়ে সরকারী দলের খাবার টেবিলের তলে বসে মিঁউ মিঁউ করছে।

তােমার প্রেমিকটি দুর্নীতির দায়ে স্বদেশ-ছাড়া হয়ে পর্ণনারীর বুকে মুখ রেখেছে মুখ লুকিয়েছে। একটির পর একটি পেলেস্টাইন শিশু খুন হবার পর, ইরাকের জনগণের পরাজয়ের পর, বারবার আফগান শিশু-নারী আশ্রয়হীন হবার পর তূমি প্রতিদিন নতুন নতুন খরিদ্দারের প্রতীক্ষা কর।

এক সময় তুমি জানতে চাইতে আমাদের পানি-কয়লা-তেল-গ্যাস রক্ষার কি হবে, বারবার লংমার্চ করলে কি হবে, আমাদের দেশটার কী হবে! এক সময় তুমি আমার কবিতার প্রেমিকা ছিলে বলেই আমি তােমার পাশে আছি পাশে থাকবাে।

মন্তব্য: