মায়াবী যাদুকর

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

তুষার প্রসূন

(পিতা স¦র্গ পিতা ধর্ম পিতাহি পরমং তপ: পিতরি প্রতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা)

গন গন করছে আগুন। হাপর দিচ্ছে দূর্দান্ত হাওয়া। সেই আঁচে রক্তিম হয়ে উঠছে শক্তিশালী লোহা। ভারী একটি হাতুড়ি পিশে ফেলছে বস্তুবাদী চেহারা। পেটের ভেতর জ্বলে উঠছে গনগনে লাল। বুকের হাপর করছে উঠানামা। জাগতিক কাজ সেরে আবারও কামারশালার আঁচে ঝলসানো হচ্ছে সংসারের গড়ন। এরই মাঝে সদ্যপ্রষ্ফুটিত যে ফুলটি কামারশালার পাশে রক্তিম নাড়ি ছিড়ে ফুটে উঠেছিলো তিনি আমার যিশুতুল্য পিতা। 

কোলে শুয়ে আমি যখন তার সারাশরীরে হাত-পা ছুঁড়ে করেছি হাস্যকর অবাধ্যতা সম্ভবত তখন তিনি আমার আপাদমস্তক চুম্বন দিয়ে রচনা করেছিলেন বিশ্বশান্তির অপূর্ব খসড়া। মাতামহীর বিচ্ছিন্ন স্মৃতিচারণায় পিতা ছিলেন অসহ্য সুন্দর, মা তাকে পেয়েছিলেন মহাপুরুষরূপে আর আমি যেদিন তার আঙুল ছুঁয়ে বিশ্বভ্রমণের স্বাদ পেয়েছিলাম সেদিন থেকে তাকে চিনি যাদুকর রূপে। পৃথিবীর প্রতিটি পিতা এক একটি মায়াবী যাদুকর। যিনি সকাল হলেই সংসারের সকল কষ্ট বুকপকেটে পুরে বেরিয়ে যান আর বেলাশেষে ফিরে আসেন স্ত্রী ও সন্তানের সকল আকাঙ্খা পুরনের যাদুর বাক্স নিয়ে।

একদিন তার প্রচ- অসুখ করেছিল আর আমরা সেদিন আকাশ ভরে শুধু অসহায়ত্বের সংগা লিখেছিলাম। মনে হয়েছিল প্রতিদিনের পড়ার টেবিল থেকে একটি জীবন্ত ডিকশনারী কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আবিষ্কার করেছিলাম পিতা পাশে থাকা আর না থাকার মৌলিক রহস্য। কয়েকমাস পর যখন তিনি আস্তে আস্তে সেরে উঠলেন তখন থেকে পৃথিবীর শিরায় শিরায় আবারও রক্তের প্রবহমানতা শুরু হয়েছিলো। আমি একটুও অবাক হইনি কারণ যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি – যাদুকর পাশে থাকলে সংসারে প্রতিদিনই একরকম উৎসব হয়। নতুন জামা, রঙিন বেলুন, চিনাবাদাম, পুকুরে সাঁতার, বই পড়া, স্কুলে যাওয়া, নতুন জীবন অনেককিছুই…। তিনি আমাদেরকে ঘিরে থাকেন বলেই ক্ষুধা-ভয়-দু:খ পালিয়ে বেড়ায়, চারিদিকে নাচ-গান-কবিতার আসর বসে। 

তিনি পাশে থাকলে সব হয় এমনকি বেড়ে ওঠাও হয়, কেবলমাত্র বড় হওয়া হয় না। একজীবনে পিতার সমান বড় হতে চাওয়া সে আমার দ্বিতীয় হাস্যকর অবাধ্যতা।

মন্তব্য: