এম. আসলাম লিটন
একদা আমাদের মেরুদণ্ড ছিলনা।
হাড্ডি-মজ্জা-চর্ম-গ্রীবাদেশ কিছুই ছিলনা
ছিলনা বলিষ্ঠ দেহ, বজ্রমুষ্ঠি, মাংস, মাংসল পেশি,
আর পেশিতে ছিলনা পাথর ভাঙার বল।
একদা আমরা হাঁটতে পারিনি-
উড়তে পারিনি,
ছুঁড়তে পারিনি
দুমড়ে মুচড়ে চুরমার করে ভাঙতে পারিনি কিছুই!
কেবল লালা-পিচ্ছিল শৈবাল হয়ে
ভেসে বেড়িয়েছি; খালে বিলে নদীতে সাগরে
কাল থেকে কালে, অনন্ত মহাকালে…
কী আনন্দ! আহা কী পুলক;
দল বেঁধে সেই জলকেলিকালে!
অতঃপর সময় তরীতে ভাসতে ভাসতে
হাসতে হাসতে
ধাক্কায় ধাক্কায় গড়াতে গড়াতে গঠিত হয়েছে দেহ-
গঠিত হয়েছে মাংস, মাংসল পেশি. রক্তকণিকা।
তারও নিযুত নিযুত কাল পরে,
দেহলালা দলা-জমাট বেঁধে গঠিত হয়েছে হাড়;
হাড়ে রগ, রগে বল-
আমরা তখন জল ছেড়ে উঠে এসেছি ডাঙায়
হাঁচড়ে পাঁচড়ে বুক ঠেলে ঠেলে
কুড়িয়ে ফিরেছি স্বপ্নলোকের কণা;
পরমাত্মার নুড়ি।
আহরণ করেছি ফলার-আহার গন্ধমসম বৃক্ষ
উন্মুক্ততা ত্যাগ ক’রে ক’রে ঢেকেছি অন্তরিক্ষ।
এভাবে যখনই কারো কারো দেহে
হাড়ের মালা গ্রন্থিত হ’তে হ’তে
সৃষ্ট হয়েছে শক্ত-সোজা, নতহীন মেরুদণ্ড;
ঠিক তখনই দণ্ডিত হয়েছে পৃথিবী-
দ্বিখণ্ডিত হয়েছে ধারা
ত্রিখণ্ডিত হয়েছে আমাদের অস্তিত্ব।
এর একদিকে পক্ষ, আরেক দিকে প্রতিপক্ষ
মাঝখানে মেরুদণ্ডহীন আমি…!