রিচার্ড ব্রটিগান এর কবিতা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

অনুবাদঃ জাকির জাফরান 

রিচার্ড ব্রটিগানের জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কিত অনেক তথ্যই অনিশ্চয়তায় ভরা। জন্ম ১৯৩৫ সালের ৩০ জানুয়ারি। ওয়াশিংটনের ট্যাকোমাতে। জন্মের আগেই তার পিতা গৃহত্যাগী হন। ফলে শৈশব কাটে দারিদ্র্যে, আর ঘাত প্রতিঘাতে। কখনও কলেজের বারান্দায় পা রাখা হয়নি তার। মধ্য পঞ্চাশের কোনও এক সময়ে তিনি সান ফ্রান্সিসকো পাড়ি জমান, যেখানে জড়িয়ে পড়েন বিট আন্দোলনের সঙ্গে। ১৯৫৭ সালে ব্রটিগান তার একমাত্র সন্তান ইয়ানথে-র মাতা ভার্জিনিয়া ডায়ানে এ্যাডলারকে বিয়ে করেন। ১৯৭০ এ সে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। যদিও ব্রটিগানকে বিট লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, তিনি বিট এ্যাভার্শনকে মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ, বাণিজ্যিকীকরণ ও প্রথাগত রীতির সঙ্গে যুক্ত করেন। 

কবি হিসেবে ব্রটিগানের সফলতা উল্লেখযোগ্য ছিল না। কয়েকটি ছোট ছোট কবিতার বই বের হয়, তবে তেমন কোনও স্বীকৃতি আসেনি। কিন্তু ‘ট্রট ফিশিং ইন আমেরিকা’ প্রকাশিত হওয়ার পরপরই তিনি মানুষের মনোযোগ কাড়েন এবং জনপ্রিয় লেখকে পরিণত হন। অনেকেই এটিকে তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করেন। ৭০ এর দিকে ‘ট্রট ফিশিং ইন আমেরিকা’ একটি সংঘ, একটি তাত্ত্বিত গোষ্ঠী এবং একটি আন্ডারগ্রাউন্ড খবরের কাগজের সমার্থক শব্দে পরিণত হয়। 

৭২ সনে ব্রটিগান লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান এবং ক্যালিফোর্ণিয়ার বলিনাস এর ছোট্ট একটি ঘরে বাস করতে শুরু করেন। পরের আট বছর তিনি কদাচিৎ বক্তৃতা করার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন আর সাক্ষাৎকার দিতে ক্রমাগত অস্বীকৃতি জানিয়ে গেছেন। তার প্রথম জাপান ভ্রমন তিনি করেন ১৯৭৮ এ, যেখানে মৃত্যু পর্যন্ত বসবাস করেন। আকিকোর সঙ্গে পরিচয় হয় সেখানে, যাকে বিয়ে করেন একই বছর; কিন্তু বিয়েটি ব্যর্থ হয়, আর দুই বছর পর তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ১৯৮২ সনব্যাপী মনতানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। তারপর আবার সেখান থেকে চলে আসেন। ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে নিজগৃহে তার মৃতদেহ আবিস্কৃত হয়; চার পাঁচ সপ্তাহ আগে তিনি নিজের মাথায় গুলি চালিয়েছিলেন।

রিচার্ড ব্রটিগানের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: June 30th, June 30th (1978), Loading Mercy with a Pitchfork (1975), Rommel Drives Deep into Egypt (1970), The San Francisco Weather Report (1969), Please Plant this Book (1969)

রোমিও ও জুলিয়েট

তুমি যদি আমার জন্য প্রাণ দাও

আমিও তোমার জন্য প্রাণ দেব

আর আমাদের সমাধিগুলো হবে

দুই প্রেমিক প্রেমিকার মতো, যারা

এক ধোপাখানায় একত্রে কাপড় কাচে;

তুমি যদি সাবান নিয়ে আসো 

আমি আনব ব্লিচিং পাউডার।

কান্নার শব্দে, চিরতরে

লাটিমের তলদেশে

প্রেতাত্নার মতো

ঘুরতে ঘুরতে 

আমাকে তাড়া করে ফেরে

ঐ সকল ¯হান

যেখানে আমি বাস করব

তোমাকে ছাড়া ।

হরিণপথ

সুন্দর, দীর্ঘ নিঃশ্বাস…

দ্রুত লয়ের সঙ্গম

আর তারপর নীরবে ঘুমিয়ে পড়া 

তুমি যাকে ভালোবাসো

তার পাশে, 

সদ্য-পতিত তুষারের মাঝে যেমন

নিভৃতে শুয়ে থাকে হরিণের পদচি‎হ্ন

আবিষ্কার

ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জুতা খোলার মতো 

উন্মোচিত হয় 

যোনির পাপড়ি দল।

নতুন পৃথিবীকে স্পর্শ করা জাহাজের 

সম্মুখ ভাগের চেয়ে বেশি সুন্দর

আর কী আছে চরাচরে?

হাইকু এ্যাম্বুলেন্স

সালাদের বাটি থেকে

একটি কাঁচা মরিচ

পড়ে গেল :

তাতে কি ?

তুমি এত সুন্দর যে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে 

ওহো মারসিয়া,

আমি চাই তোমার উজ্জ্বল লম্বা চুলের সৌন্দর্য

পড়ানো হোক মাধ্যমিক স্কুলে,

তাতে শিশুরা শিখবে যে- 

ঈশ্বর গান হয়ে বাস করে ত্বকের ভিতরে, 

আর বাজতে থাকে রৌদ্রকরোজ্জ্বল পিয়ানোর মতো।

আমি চাই মাধ্যমিক স্কুলে 

রিপোর্ট কার্ড হোক এ রকম:

কোমল কাঁচের দ্রব্য নিয়ে খেলা 

A

কম্পিউটার ম্যাজিক

A

ভালোবাসার মানুষকে চিঠি লেখা

A

মারসিয়ার উজ্জল লম্বা চুলের সৌন্দর্য

A

+

আমার ভয়ংকর লাগে   

আমার ভয়ংকর লাগে।

সে আমায় ভালোবাসে না।

সেলাই মেশিনের মতো

আমি চারদিকে ঘুরতে থাকি-

যে-মেশিন এই মাত্র 

ডাস্টবিনের ঢাকনির সঙ্গে

এক বিষ্ঠাদলকে সেলাই করে 

শেষ করেছে।

৩০ সেন্ট, দুটি টিকেট, ভালোবাসা

তোমাকে ভাবতে ভাবতে 

বাসে উঠলাম

আর ভাড়া দিলাম তিরিশ সেন্ট

আর চাইলাম দুটি টিকেট

তারপরই মনে এল

আমি ছিলাম

একা।

এখন লু’তে বৃষ্টি হচ্ছে

আমি জানি না তা কী,

যখন আমি খুব বেশি

পছন্দ করতে শুরু করি কোন মেয়েকে

আমি নিজেকে তখন অবিশ্বাস করি।

আমি নার্ভাস হয়ে যাই।

আমি সঠিক কথাটি বলছি না

নতুবা হয়তো আমি যা বলছি

তা পরীক্ষা করতে শুরু করি

কিংবা করি মুল্যায়ন।

আমি যদি বলি,“তুমি কি মনে কর এখন বৃষ্টি শুরু হতে যাচ্ছে”?

আর সে বলে “আমি জানি না”। 

আমি ভাবতে শুরু করি : সে কি আসলেই পছন্দ করে আমাকে? 

অনেকটা শিউরে উঠি আমি

একদা আমার এক বন্ধু বলেছিলো,

“কারো প্রেমে পড়ার চে’

কারো বন্ধু হওয়া বিশ গুন ভালো”।

বন্ধুর কথাই ঠিক

তাছাড়া এখন কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে

সুবিন্যস্ত হচ্ছে ফুল

আর সুখের সাগরে ভাসছে শামুক

কিন্তু

যদি কোন মেয়ে পছন্দ করে আমায়

আর নার্ভাস হয়ে পড়ে

আর হঠাৎ করেই হাস্যকর প্রশ্ন শুরু করে 

আর আমি ভুল উত্তর দিলে 

তাকে বিমর্ষ দেখায়

আর সে যদি এরকম বলে ,

“তোমার কি মনে হয় বৃষ্টি হতে যাচ্ছে ”?

আর আমি বলি “এটা আমাকে হতভম্ব করে,”

সে বলে ‘ওহো’

আর ক্যালিফোর্নিয়ার স্বচ্ছ নীল আকাশে

দু:খিত দেখায় তাকে,

আমি ভাবি: ঈশ্বরকে ধন্যবাদ 

এ যাত্রায় আমার পরিবর্তে 

এটা তুমি, সোনা।    

ওষুধের বড়ি বনাম বসন্ত-পাহাড়ি খনি বিপর্যয়

তুমি যখন তোমার বড়ি হাতে নাও

তখন যেন খনি বিপর্যয় ঘটে।

আমি তো সেসব মানুষের কথা ভাবি

যারা হারিয়ে গিয়েছে তোমারই ভেতরে।

অপেক্ষা

তার মুখ থেকে 

এক তোড়া 

চুম্বন

তুলে নিতে নিতে 

আর তা 

আমার অন্তরের

প্রভাতরঙা পুষ্পাধারে 

রাখতে রাখতে

সহস্র বছর 

কেটে গেলো যেন।

তবে এই অপেক্ষা

অমূল্য ছিলো।

কারণ

আমি 

প্রেমে

মজেছিলাম।

চাঁদ বনাম আমরা

চির নিদ্রামগ্ন যূথবদ্ধতা আবার

আমি, রোমান্সের চিরশত্রু,

তোমায় নিয়ে ভাবতে ভাবতে এখানে বসি।

ইচ্ছে ছিল না, তবু তোমাকে দিয়েছি ব্যথা,

যেহেতু মুক্ত হতে হয়েছে আমাকে। 

হয়তো ভিন্ন হতো সবকিছু

যদি তুমি টেবিলে থাকতে 

কিংবা চাঁদের দিকে মুখ রাখব বলে

আমাকে তোমার সঙ্গে বাইরে আসতে বলতে। 

আহা! যদি তুমি উঠে না যেতে!

আহা! যদি তুমি আমাকে তাঁর সংগে একা না রেখে যেতে!

ইংল্যান্ডের প্রতি

এমন কোনো ডাকটিকিট নেই

যা তিন শতাব্দী আগের ইংল্যান্ডে চিঠি নিয়ে যাবে,

এমন কোনো ডাকটিকিট নেই

যা চিঠিকে নিয়ে যেতে পারে অতীতে যতক্ষণ না

খোড়া হয়েছে কবর,

আর জন ডান জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে অপলক,

এপ্রিলের এই সকালে সবে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে,

আর পাখিরা ঝরে পড়ছে গাছে গাছে,

যেমন দাবার টুকরোগুলো ঝরে পড়ে না খেলা গেমের ওপর,

আর জন ডান ডাকপিয়নকে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসতে দেখে ফেলে,

অতি সাবধানে হেঁটে আসে ডাকপিওন

তাঁর গ্লাসের লাঠিটি ভেঙে যাবে, এই ভয়ে। 

হ্যাঁ, মাছ মিউজিক

আমার চোখের মধ্য দিয়ে, আমার আঙুলের মধ্য দিয়ে,

ট্রাউট রঙা বাতাস বয়ে যায়,

আর আমার মনে পড়ে

ট্রাউট মাছ যখন তৃষ্ণার্ত হয়ে নদীতে ছুটে যেত

তখন কীভাবে তারা ডাইনোসরদের কাছ থেকে

নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখত।

ট্রাউট মাছ লুকাতো পাতালপথে, প্রাসাদে, আর মোটরগাড়িতে। 

তারা অশেষ ধৈর্য নিয়ে

প্রতীক্ষায় থাকত ডাইনোসরদের চলে যাবার।

মন্তব্য: