শহীদ কাদরী’র নির্বাচিত কবিতা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

পরস্পরের দিকে

পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছি

আমরা, এই অন্ধকারে।

প্যাঁচার তীব্র চিৎকার

যেন এই রাত্রির শরীরের ওপর,

নিরন্তর আঁচড় রেখে যাচ্ছে।

কোন সংগোপন উৎস থেকে বেরিয়ে আসছে

অনর্গল ছেঁড়া-খোঁড়া দৃশ্যগুলো:

একটা মদির অশ্ব বারবার লাফিয়ে উঠছে

বাতাসে শূন্যতায়,-

বাখানে ঝুলন্ত চাঁদ জবার মত লাল।

তোমার ক্লেদ সহসা ইন্দ্রধনু হল।

আর আমি কাঁকড়ার মত

অনুর্বর উল্লাসে ভোজে মত্ত, একের পর এক

শুধু ক্ষত তৈরি করলাম।

হঠাৎ ক্ষতগুলো

মাতালের প্রোজ্জ্বল চোখের মত,

মগ্ন, উৎসুক মুখ

আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিল।

বাহুর বিন্যাসে নিবিড় হল সান্নিধ্য আমাদের।

শুধু এইসব দৃশ্যের অকারণ, অদ্ভুত

অনুভূতিগুলোকে ডুবিয়ে

তোমার কান্না আমাকে ছুঁতে পারল না।

অলীক

একটি নর্তকীর নাচ তার অন্তিমে

 পৌঁছানোর আগে, দশ লক্ষ কথার ঝনৎকারে

বোঝা যায় আমি আর একা নই

     এই সুন্দরতম শহরে ॥

সঙ্গতি 

আমরা কাতারে কাতারে দাঁড়িয়ে আছি ব্যক্তিগত

                    দূরত্বে

সবাই। নামহীন অহংকাওে হলুদ একসার বিকৃত 

                      মুখ

পরস্পর থেকে ফেরানো; হৃদপিণ্ডের মধ্যে লুকানো

                        নিতান্ত নিজস্ব

কাঁচ, – সেখানেই উৎসুক ফিরে ফিরে তাকানো।

কিন্তু সন্ধ্যার নির্বোধ হাওয়া জমিয়ে তুললো

একটি সাধারণ পরিমল, -এ যখন ও-র গন্ধে সজাগ,

আমরা প্রত্যেকে ভ্রু-কুঁচকে যাই-যাই, তখনি সে এসে দাঁড়ালো

স্কার্ট-ঢাকা সোনালি চুলের ইন্দ্রজালে দীর্ঘ, ঋজু ক্ষীণ ঊরুর বিদেশিনী

আমরা তাকে ঘিরে ভিখিরির মত গুঞ্জন রটালাম।

স্কিৎসোফ্রেনিয়া

চারিদিকে বিস্ফোরণ করছে টিবিল,

        গর্জে উঠছে টাইপ রাইটার,

চঞ্চল, মসৃণ হাতে বিশ্বস্ত সেক্রেটারীরা

ডিক্টেশন নিতে গিয়ে ভুলে গেছে শব্দ – চিহ্ন,

        জরুরী চিঠির মাঝামাঝি

জাঁহাবাজ ব্যাপারীর দীপ্ত জিহ্বা

হেমন্তের বিবর্ণ পাতার মতো ঝ’রে গেছে

বর্ণমালাহীন শূন্যতায়, –

পেটের ভেতরে যেন গর্জে উঠছে গ্রেনেড,

কার্বাইনের নলের মতো হলুদ গন্ধক-ঠাসা শিরা,

গুনাগার হৃদয়ের মধ্যে ছদ্মবেশী গেরিলারা

খনন করছে গর্ত, ফাঁদ, দীর্ঘ কাঁটা বেড়া।

জানু বেয়ে উঠছে একরোখা ট্যাঙ্কের কাতার,

রক্তের ভেতর সাঁকো বেধে পার হলো

বিধ্বস্ত গোলন্দাজেরা,

প্রতারক ক’টা রঙহীন সাব-মেরিনের সারি

        মগজের মধ্যে ডুবে আছে,

সংবাদপত্রের শেষ পৃষ্ঠা থেকে বেরিয়ে এসেছে

এক দীর্ঘ সাঁজোয়া বাহিনী

এবং হেডলাইনগুলো অনবরত বাজিয়ে চলেছে সাইরেন।

একটি চুম্বনের মধ্যে সচীৎকারে ঝলসে গেল কয়েকটা মুখ,

একটি নিবিড় আলিঙ্গনের আয়ুষ্কালে

৬০,০০০,০০ উদ্বাস্তুর উদ্বিগ্ন দঙ্গল

লাফিয়ে উঠলো এই টেবিলের ’পর;

 বেয়োনেটে ছিঁড়ে যাওয়া নাড়ি-ভুঁড়ি চেপে,

বাম-হাতে রেফ্রিজারেটর খুলে পানি খেলো

যে- লোকটা, তাকে আমি চিনি,

কতবার তার সাথে 

আমার হ’য়েছে দেখা 

        পত্রিকার স্টলে

        প্যান-আমেররিকানের বিজ্ঞাপনে,

টাইম ম্যাগাজিনের 

মসৃণ পাতায় কিম্বা

সিনেমায় কোনো ক্যাপ্টেনের নিপুণ ভূমিকায়।

আমি তাই মহা উল্লাসে

নেমন্তন্ন করলাম তাকে

আমাদের প্রাত্যহিক ভোজনোৎসব –

রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছে সুখাদ্যেও ধোঁয়া

কেননা এক বাঁচাল বাবুর্চির 

সবল নেতৃত্বে

আর সুনিপুণ তত্ত্বাবধানে 

আমাদের সচ্ছল কিচেনে

অনর্গল রান্না হয়ে চলেছে আপন- মনে

নানা ধরনের মাংস –

নাইজেরিয়ার, আমেরিকার, সায়গনের, বাংলার

            কালো, সাদা এবং ব্রাউন মাংস!

নিষিদ্ধ জর্নাল থেকে

ভোরের আলো এসে পড়েছে ধ্বংসস্তুপের ওপর।

রেস্তোরাঁ থেকে যে ছেলেটা রোজ

প্রাতঃরাশ সাজিয়ে দিতো আমার টেবিলে

তে- রাস্তার মোড়ে তাকে দেখলাম শুয়ে আছে রক্তাপ্লুত শার্ট প’রে,

বন্ধুর ঘরে যাওয়ার রাস্তায় ডিআইটি মার্কেটের ভষ্মাবশেষ,

প্রতিরোধের চিহ্ণ নিয়ে বিবর্ণ রাজধানী দাঁড়িয়ে রয়েছে,

তার বিশাল করিডোর শূন্য।

শহর ছেড়ে চলে যাবে সবাই

(এবং চলে যাচ্ছে দলে দলে)                                                                                                                                                                      

কিন্তু এই ধ্বংসস্তুপ স্পর্শ ক’রে আমরা কয়েকজন

আজীবন র’য়ে যাবো বিদীর্ণ স্বদেশে, স্বজনের লাশের আশেপাশে।

তাই তার দেখা পাবো বলে দানবের মতো খাকি ট্রাকের 

অনুর্বর উল্লাস উপেক্ষা করে, বিধ্বস্ত বেরিকেডের পাশ ঘেঁষে

বেরিয়েছি ২৭ শে মার্চের সকালে কান্নাকে কেন্দ্রীভূত ক’রে

পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলায়,

          যে শিলা অন্তিম প্রতিজ্ঞায় অন্তত

প্রাথমিক অস্ত্র হ’তে জানে। তেমনি এক শিলার আঘাতে

বিনষ্ট হয়েছে আমার বুকের অনিদ্র ভায়োলিন।

        ধ্বংসস্তূপের পাশে, ভোরের আলোয়

একটা বিকলাঙ্গ ভায়োলিনের মতো – দেখলাম তে-রাস্তার মোড়ে

সমস্ত বাংলাদেশ পড়ে আছে আর সেই কিশোর, যে তাকে

ইচ্ছের ছড় দিয়ে নিজের মত ক’রে বাজাবে বলে বেড়ে উঠেছিলো

সেও শুয়ে আছে পাশে, রক্তাপ্লুত শার্ট প’রে।

তবে কি এই নিয়তি আমাদের, এই হিরণ¥য় ধ্বংসাবশেষ,

এই রক্তাপ্লুত শার্ট আজীবন, এই বাঁকাচোরা ভাঙা ভায়োলিন?

মধ্য-দুপুরে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে, একটা তন্ময় বালক

কাঁচ, লোহা, টুকরো ইট, বিদীর্ণ কড়ি-কাঠ, একফালি টিন

ছেঁড়া চট, জং ধরা পেরেক জড়ো করলো এক নিপুণ 

        ঐন্দ্রজালিকের মত যতেœ

এবং অসতর্ক হাতে কারফিউ শুরু হওয়ার আগেই

প্রায় অন্যমনস্কভাবে তৈরী করলো কয়েকটা অক্ষর : ‘স্বা-ধী-ন-তা’

তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা

ভয় নেই 

আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী

গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে

মার্চপাস্ট ক’রে চ’লে যাবে

এবং স্যাল্যুট করবে

কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।

ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো

বন-বাদাড় ডিঙিয়ে

কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হ’য়ে, অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে

আর্মার্ড- কারগুলো এসে দাঁড়াবে

ভায়োলিন বোঝাই ক’রে

কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা।

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো¬ –

এমন ব্যবস্থা করবো

বি-৫২ আর মিগ-২১ গুলো

মাথার উপর গো গো করবে

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো 

চকোলেট, টফি আর লজেন্সগুলো

প্যারাট্রুপারদের মতো ঝ’রে পড়বে 

কেবল তোমার উঠোনে প্রিয়তমা।

ভয় নেই, ভয় নেই

ভয় নেই… আমি এমন ব্যবস্থা করবো

একজন কবি কমা- করবেন বঙ্গোপসাগরের সবগুলো রণতরী

এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় 

সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক, প্রিয়তমা!  

সংঘর্ষেও সব সম্ভাবনা, ঠিক জেনো, শেষ হ’য়ে যাবে-

আমি এমন ব্যবস্থা করবো, একজন গায়ক

অনায়াসে বিরোধী দলের অধিনায়ক হ’য়ে যাবেন

সীমান্তের ট্রেঞ্চগুলোয় পাহারা দেবে সারাটা বৎসর

লাল নীল সোনালি মাছ –

ভালোবাসার চোরাচালান ছাড়া সবকিছু নিষিদ্ধ হ’য়ে যাবে, প্রিয়তমা।

ভয় নেই

আমি এমন ব্যবস্থা করবো মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে বেড়ে যাবে

শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা প্রতিদিন

আমি এমন ব্যবস্থা করবো গণরোষের বদলে 

গণচুম্বনের ভয়ে

হন্তারকের হাত থেকে প’ড়ে যাবে ছুরি, প্রিয়তমা।

ভয় নেই

আমি এমন ব্যবস্থা করবো

শীতের পার্কের ওপর বসন্তের সংগোপন আক্রমনের মতো

অ্যাকর্ডিযান বাজাতে- বাজাতে বিপ্লবীরা দাঁড়াবে শহরে,

ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো

স্টেটব্যাঙ্কে গিয়ে

গোলাপ কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে

একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান।

ভয় নেই, ভয় নেই 

ভয় নেই

    আমি এমন ব্যবস্থা করবো 

নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী

কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে- ঘিরে

    নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা।

কোথাও কোন ক্রন্দন তৈরি হয় না

একটি মাছের অবসান ঘটে চিকন বটিতে, 

রাত্রির উঠোনে তার আঁশ জ্যোৎস্নার মতো

হেলায়- ফেলায় পড়ে থাকে

        কোথাও কোন ক্রন্দন তৈরী হয় না,

        কোথাও কোন ক্রন্দন তৈরী হয় না;

কবরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করে প্রথম বসন্তের হাওয়া,

মৃতের চোখের কোটরের মধ্যে লাল ঠোঁট নিঃশব্দে ডুবিয়ে বসে আছে

একটা সবুজ টিয়ে,

ফুটপাতে শুয়ে থাকা ন্যাংটো ভিখিরির নাভিমুলে

হীরার কৌটোর মতো টলটল করছে শিশির

এবং পাখির প্রস্রাব ;

সরল গ্রাম্যজন খরগোশ শিকার ক’রে নিপুণ ফিরে আসে

পত্নীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে, চুল্লির লাল তাপে

একটি নরম শিশু খরগোশের মাংস দেখে আহ্লাদে লাফায়

সব রাঙা ঘাস স্মৃতির বাইরে পড়ে থাকে

বৃষ্টি ফিরিয়ে আনে তার

          প্রথম সহজ রঙ হেলায় ফেলায়

কোথাও কোন ক্রন্দন তৈরী হয় না,

কোথাও কোন ক্রন্দন তৈরী হয় না ॥

আবুল হাসান একটি উদ্ভিদের নাম

ফেলে- আসা স্টীমারের ভেঁপু, ইলিশ রঙের নদী

আর ভোরের কুয়াশা ছিলো সূর্যাস্তের মতো রাঙা

শোনিতে তোমার, সারাক্ষণ জলের চঞ্চল ধারা ব’য়ে প্রাণে,

চক্চকে চিবুক নিয়ে নৌকো আর গলুইয়ে ছায়া 

আজীবন চাঁদে- পাওয়া তুমি হেঁটে বেড়ালে রাতের পর রাত

যে-যে রাস্তায় সেখানে পদচ্ছাপ পড়েছিল একদা আমারও,

মুছে গেছে, সেইসব চাঁদ- জ্বলা বিহ্বল রাতের পীচে

তোমার পায়ের চিহ্নগুলো জ্যোৎস্নায় এখনও যায়,

দেখা যায়- শুকোয় নি পুরোপুরি। কিন্তু তুমি ফুল, ফল, পাখি

এবং পুষ্পল ঋতু পার হয়ে চিনেছিলে পার্কের নিঃসঙ্গ বেঞ্চি,

শানানো ছুরির মতো সুহৃদের স্বর, উদ্বস্তুর মতো এ শহরে 

কতটা দুর্লভ এক- আধখানা ঘর এবং যে- কেউ যখন-তখন

ইচ্ছেমতো হতে পারে বন্দুকের নল। সবই তুমি জেনেছিলে –

শিল্পেরও ব্যর্থতা (আমি জানি), তবু শব্দের সুতীব্র ডাকাডাকি

ভীষণ চঞ্চুর মতো তোমাকে চেয়েছে খেতে ছিঁড়েখুঁড়ে।

ঘূর্ণিপাকে হঠাৎ ছিটকেপড়া একটি নৌকোর 

উচ্ছল উত্থান পতন আগাগোড়া তোমার ভেতওে ছিলো

তাই নিয়ে অত্যন্ত টালমাটাল পায়ে প্রায় বেসামাল

বর্ণোজ্জ্বল এক পালকের নয়নাভিরাম মসৃণতায়

ভেসে থাকলে কিছুকাল এই নিশাকরোজ্জ্বল নিতল শহরে।

তোমার বিভিন্ন রঙ-বেরঙের শার্টগুলো বিজয়ী মাস্তুল হয়ে

নানান ঋতুতে- এমনকি শিস্- দেয়া শীতের হাওয়ায়

উঁচু হয়ে উঠেছিল সত্তুরের ২১শে ফেব্রুয়ারির রাতে –

রিকশায় আমার পাশে, বরিশালের অজস্র জল ও জিউলি

গাছের ভীষণ জেদী আঠার অসংখ্য কথা বলেছিলে ঝোপে ঝাড়ে

গারি-সারি গাছে শীতের হাওয়ায় টলে-পড়ার মতন

আঞ্চলিক টানে। তখনই দেখেছি ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে

তোমার মুখের লাবণ্যের বিনিময়। এ শহরে, দীর্ঘ পরবাসে

অবশেষে নিজেকে ‘পাথর’ ব’লে একদিন চিহ্নিত করেছো বেদনায়

খুব অল্প বয়সেই, জানি। আমি কিন্তু এখনও যে- কোনো

পাথর খ–চাপা পরিত্রাণকামী সজল উদ্ভিদ দেখে বলি:

‘আবুল হাসান একই শীত-হাওয়া বয় আমাদেরও চিবুক ও চুলে’।

আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও

হে নবীনা, এই মধ্য-ম্যানহাটনে বাতাসের ঝাপটায়

তোমার হঠাৎ খুলে যাওয়া উদ্দাম চুল

আমার বুকের ’পর আছড়ে পড়লো

চিরকালের বাংলার বৈশাখের ঝঞ্ঝার মতন।

তোমার জবার মতো চোখে রাঙা শ্রাবণের জল

পালতোলা নৌকার মতন বাঁকাচোরা ঢেউয়ে ঢেউয়ে কম্পমান

তোমার বিপদগ্রস্ত স্তন।

আমি ভাবতে পারি নি কোনদিন এতো অসাধারণ আগুন

প্রলয় এবং ধ্বংস রয়েছে তোমার চুম্বনগুলিতে।

হে নবীনা,

আমার তামাটে তিক্ত ওষ্ঠের ও অবয়বের জন্যে

যেসব চুম্বন জমে উঠবে সংগোপনে,

তাদেও ওপর থেকে আমার স্বত্বাধিকার আমি ফিরিয়ে নিলাম

আমাকে শীতের হাওয়ার হাতে ছেড়ে দাও,

স্বনির্বাচিত এই নির্বাসনে

নেকড়ের দঙ্গলের মতো আমাকে ছিঁড়ে খাক বরফে জ্বলতে থাকা ঋতু

শুধু তুমি,

আমার সংরক্ত চুম্বনের অন্তর্লীন আগুনগুলোকে

পৌঁছে দাও শ্রাবণে আষাঢ়ে রোদুদ্যমান

বিব্রত বাংলায়.

বজ্রে বজ্রে বেজে উঠুক নতজানু স্বদেশ আমার।

কবি

এক নক্ষত্রছুট্ কালো রাত্রিতে

উতরোল এ্যাটলান্টিকের উপকূলে দাঁড়িয়ে 

অস্ফুটে তুমি বলেছিলে:

দ্যাখো, কী ভয়াবহ সৌন্দর্য।

আমি দেখেছিলাম,

মধ্য-সমুদ্রে দাউদাউ আগুনলাগা

একটি জাহাজ ক্রমশ যাচ্ছে ডুবে 

কবিরাও এভাবে তীব্র সুন্দর সৃষ্টি করতে করতে 

পরিণত হন হাঙরের সুখাদ্যে

মিশে যান জলের লবণে,

কুয়াশায়, ও রাত্রির অন্তহীন শরীরে।

মন্তব্য: