খণ্ডচিত্র

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

নোভায়োলেট বুলাওয়েও

Noviolet Bulawayo এখন থাকেন আমেরিকায়। জন্ম ১০ ডিসেম্বর ১৯৮১, জিম্বাবুয়েতে। ছোটগল্প লেখক ও উপন্যাসিক। ২০১৩ সালে তার লেখা পথশিশুদের ওপর একটি গল্প জিতে নেয় কেইন প্রাইজ ফর আফ্রিকান রাইটিং, এ পুরষ্কারকে আফ্রিকান বুকার বলা হয়। ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস ‘নিড নিউ নেমস’। এ বই একসঙ্গে অনেকগুলো পুরষ্কার লাভ করে। তিনিই প্রথম কালো আফ্রিকান ও একমাত্র জিম্বাবুয়ান যার নাম ম্যান বুকার প্রাইজের শর্টলিস্টে স্থান পায়। সে বছর, ২০১৩ এর বিশ্ব সাহিত্যের এই মর্যাদাকর পুরষ্কারটি পান আমেরিকান ছোটগল্পকার লিডিয়া ডেভিস। গল্পটির মূল ইংরেজি।

মূল : নোভায়োলেট বুলাওয়েও

অনুবাদ : তুহিন দাস

যখন তুমি শুনলে তোমার বাবা মারা গেছেন তুমি প্রথমে বুঝতে পারলে না কেমন আচরণ করা উচিত, কেননা তোমার জানাশোনা কেউ আগে মারা যায়নি, এবং অনেসু তোমাকে প্রায় জানার মতো সব বিষয় সম্পর্কে বলেছিলো, শুধুমাত্র তোমার নিজের বাবা মারা গেলে কি করতে হবে তা বাদে। একমাত্র তখনই দেখতে পাও সকলেই তোমাকে ঘিরে কাঁদছে, তখন তুমি বুঝতে পারো তোমারও কান্না করা উচিত। তোমার মা উচ্চস্বরে বিলাপ করছেন, তিনি মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত কালো শোকের পোষাক পরে আছেন যা তোমাকে তার বাদামী চামড়া সম্পর্কে খুব বেশি ভাবিয়ে তুলবে। ওভাবে তার কান্না দেখা তোমার জন্যে নতুন একটা ব্যাপার এবং যেভাবেই হোক তুমি মুগ্ধ এবং তার চোখের জল ছুঁয়ে দেখতে চাও।

রোজও কাঁদতে ব্যস্ত, তুমি ভাবছো যে সে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তার মাথা শোকের কালো স্কার্ফে ঢাকা এবং দেখতে প্রায় একজন নারীর মতো লাগছে। সে কেন তোমার জন্যও ওরকম একটি স্কার্ফ নিলো না যাতে তোমাকেও একজন নারীর মতো লাগতো? তুমি বিস্মিতও হলে এই ভেবে, তোমার ভাই ভুলিনদেলাও যদি এখানে থাকতো সেও এরকম করতো, করতো না? সে কি সত্যিই কাঁদতো এবং একজন পুরুষের মতো কাঁদতো এবং মানুষেরা কিভাবে কাঁদে তারা যখন কান্নার জন্য প্রস্তুত নয়।

তোমার বাবার শেষকৃত্যে অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে, কিছু লোককে তুমি জানো, কিছু লোককে জানো না, এবং কিছু লোককে পছন্দ করো, কিছু লোককে পছন্দ করো না। শেষকৃত্যের কাজগুলো সাধারণভাবে হলেও তিন বা চার দিন ধরে  চলে, কিন্তু তোমার বাবার বেলায় একদিনেই সব হবে কেননা শোকার্তরা কোথায় খাবে? ও ধরনের শেষকৃত্যের জন্য পর্যাপ্ত জল ও বিদ্যুতও নেই। আত্মীয়দের একত্র করে একটি বাদামী পাইন কফিন কেনা হয়েছে। মৃতকে দেখতে এসে লোকেরা তোমাকে ভুলে গেছে দেখে বিস্মিত নও কেননা তুমি একটি শিশু কিন্তু তখন তোমার সঙ্গে কথা বলতেও ভুলে গেছে এবং রোজও আসলো না যখন মৃতদেহ দেখার জন্য বসার ঘরটি প্রাপ্তবয়স্ক লোকে পূর্ণ হয়েছিলো।  তুমি সারির পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলে এবং সকলের দৃষ্টি অনুসরণ করলে।

তুমি কখনো তোমার বাবাকে এভাবে দেখোনি এবং তাকে সেখানে শুয়ে থাকতে দেখে, পোষাক পরা যেন গুরুত্বপূর্ণ কোন জায়গায় যাচ্ছে, যেন বিয়েতে, তুমি অনুভব করো যে সে একজন সুন্দর মানুষ, তার মুখ শান্ত ও শিথিল, উদ্বেগ করার কোনো কারণ নেই সেখানে সে তার রাজকীয় অর্ভ্যথনা পাবে। একসময় তার ওষ্ঠদ্বয় বন্ধ হয়ে যাবে এবং সিগারেট পানের জন্য অর্ধেক খোলা থাকবে না। 

যখন সবাই চলে যাবে যেখান থেকে তারা সকলে এসেছিলো, পরিবারের তোমার বাবার দিকের পুরুষ আত্মীয়রা বাদে, তুমি হঠাৎ ভীত। এ কারণে যে, হাসতে অস্বীকৃতি জানানো  তাদের সকলেরই মুখ কঠোর। তারা তোমার বাবার মৃত্যু সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে, যা তাদেরকে সন্দেহপ্রবণ করে তোলে, কেন সে, সাভু, খুব অকালে মারা গেলো, এমনকি পঞ্চাশ বছরও নয়, এটা কিভাবে হতে পারে? তার সম্পর্কে সকলে যতটুকু জানে তাতে যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা তারা পায় না এবং এটা তারা স্থির করে যে তোমার মাকে অবশ্যই চলে যেতে হবে। সে একজন খারাপ স্ত্রী এবং খারাপ মা, এখন সম্পদের একক উত্তরাধিকারী। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দূরে চলে যাওয়া পর্যন্ত যদি তাকে অনুসরণ করা না হয় তাহলে সে তার স্বামীর মৃত্যুর পরে উত্তরাধিকার সূত্রে  বাড়ির স্বত্ত্ব দাবি করতে পারে।

মা তোমাকে তার ব্যাগ গুছিয়ে দিতে বললেন এবং বাড়ি ত্যাগ করলেন কেননা তোমার চাচা ম্যান্ডালা, তোমার বাবার বড় ভাই, তিনিও প্রথানুযায়ী এগিয়ে দিতে তার সঙ্গে গেলেন। তুমিও রোজ (যে থেকে গেছে কেননা কেউ জানেনা সে এই পরিবারের অধিকারভুক্ত কিনা) জানালার ধারে দাঁড়িয়ে দেখলে ও  শুনতে পেলে তোমার মায়ের ভাগ্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তুমি মাকে দেখতে পেলে, তিনি ফ্লরে বসে আছেন মাথা নত করে এবং যারা চেয়ারে বসে আছে ও যাদের গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে সেসব লোকদের মুখোমুখি হতে গিয়ে তাকে অস্তমিত হতে চলা সূর্যের মতো দেখাচ্ছে। তারা তোমার পিতামহ, তোমার চাচারা এবং তাদের ভাইয়েরা এবং কয়েকজন যাদেরকে তুমি আসলেই চেনো না।

মা যখন কালো সুটকেসটি মাথায় তুলে নিয়েছেন, তখন সূর্য লাল পৃথিবীকে গিলে নিচ্ছে এবং একটি খারাপ রোগের মতো বাড়ি থেকে বাইরে হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি তার ইতিহাস থেকেও বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তা ছিলো : তিনি প্রতিদিন সকাল ৬টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠতেন, মেঝে ভিজে কাপড় দিয়ে ঘঁষে মুছতেন যতক্ষণ না ব্লাক কোবরার মতো মসৃণ হয়ে উঠতো, উঠোন ভিজাতে যাবার আগেই মেঝে চকচকে হয়ে উঠতো। প্রতিদিন রান্নাঘরে রান্না করতেন, এবং পবিত্র জল বাড়ির প্রতিটি দেয়ালে এমনকি রাতে বিছানায় যাবার আগেও ছিটোতেন। ওই সব দেয়াল থেকে তিনি তার তিন সন্তানকে সরিয়ে রাখতেন এবং প্রতিদিন মেঝেতে তার  স্বামীর জন্য হাত ধোবার পাত্র এগিয়ে দিয়ে শোকপ্রকাশ করতেন, তিনি  তার স্বামীর ধূমপান করা পছন্দ করতেন না। তিনি খাবার প্রস্তুতের আগে হাত ধুয়ে নিতেন, তিনি ওই বাড়ির জন্যে আশির্বাদ চাইতেন, ভয় পেতেন, আশা করতেন  ও স্বপ্ন দেখতেন। 

এই তোমার মায়ের গল্প। কিন্তু এখন এটা কোনো বিষয় নয় কেননা এর বাইরে তিনি হেঁটে যাচ্ছেন কেননা যা কিছু তাকে বাড়ির সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলো তা আর নতুন করে শুরু হবে না। ঐদিন তুমি আরো শিখলে, কারও না বলা ছাড়াই, যে, নারীরা তার বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে বসবাস করতে আসে। তারা কোনো অভিযোগ করে না, অনেকটা সূর্যের মতো যেভাবে সূর্য প্রতিদিন উষ্ণতা দেয় যত্ন নেয় শক্তি সঞ্চয় করে একাই তার মায়ের কাছে চলে যায় যতোটা নগ্নভাবে সে এসেছিলো সেভাবেই, এমনকি কোন ধন্যবাদের সুযোগ না দিয়ে। আঙ্কেল ম্যান্ডালা দাঁড়িয়ে ছিলেন দরজায় এটা নিশ্চিত করার জন্যে যে যদিও তার ইতিহাসে এমন কোন অংশ বা চিহ্ন নেই তবুও তোমার মা নীচ প্রকৃতির কিছু করবেন না, কেননা ম্যান্ডালা মনে করেন যে একজন নারী তার বৃহৎ হৃদয় থাকা সত্ত্বেও তার ব্রার মাঝে কিছু নিচু মানসিকতা লুকিয়ে রাখে।

মন্তব্য: