মায়েন্দার

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

সুমন শিকদার

গেদনের চুলে জট ধরতে বাকি। এক জটো চিন্তার শেষ খুঁজে পায় না সে। শরৎ শিশিরে চুলে মুক্তোর দানা, পূর্ণিমার চাঁদ পুর্বদিক থেকে পশ্চিমে হেলেছে, ক্রমশ সকাল সম্ভারে সূর্যের উঁকি তবুও ঘোর কাটে না গেদনের। ঘোরের মাঝেই তার কত চঞ্চল চিন্তা। কত আনন্দ, দুঃখ-বেদনা, হাসি-খুশি, জীবনের নানা রঙ; গেদন যা ভাবে ভেবেই চলে। ভাবনার জগত প্রশস্ত হতে হতে এক সময় গোড়া হারিয়ে ফেলে। গোড়া খুঁজতে খুঁজতে আবার আগাও হারিয়ে ফেলে। তখন আনমনে ভাবনার সাঙ্গ দিয়ে মাথার চুলগুলো মুঠে পুরে নিজেকে গালি দেয়- শালা গাজাখোর। এরপর আবার গান ধরে ‘গাজার নৌকা পাহাড় বাইয়া যায়…’। প্রতিরাতে এ এক খণ্ডিত কর্মসূচি গেদনের। খ্যাড়ের দাঁড়ির মাঝখানে যে গদা গাছটি রয়েছে তার অদূরে মেশিন চালায় বসে বন্ধুদের নিয়ে গেদন গাজা সেবন করে। গভীর রাতে সকলেই চলে যায় যার যার ঠিকানায়, আর গেদন থেকে যায় গেদনের ঠিকানায়। মেশিন চালার প্রান্ত খুঁটিটা হেলান দিয়ে সে বার বার ভাবতে থাকে সেই- জটো চিন্তা- কীভাবে মুন্সি হওয়া যায়!

গেদন জাহের মুন্সির মায়েন্দার। বরো মৌসুমে তার আশ্রয়স্থল কিংবা ঠিকানাই বলা চলে এই মেশিন চালা। এখানে এক দাগে প্রায় দশ বিঘার একটি স্কিম মুন্সি সাহেবের। এর পুরোদস্তুর দায়িত্বভারও গেদনের ওপর। চাষের হিসাব কড়ায়গণ্ডায় তার জানা। একেবারে গো মূর্খ সে নয়। রাত্রকালীন স্কুলে নিজের নাম সইসহ কিছু লেখাপড়া সে করেছে অনেক আগে। মুন্সি মাঝে মধ্যে এসে অবশ্য খোঁজ-খবর নিয়ে যায়। আর মুন্সির জ্যেষ্ঠ এক মায়েন্দার প্রতি সকাল-বিকাল গেদনের খাবার দিয়ে যায়। তা দেখে গেদনের বুকটা গর্বে বড় হয়ে ওঠে। সে খুশি চিত্তে প্রায়ই ভাবে, সেই বোধ হয় মুন্সির সবচেয়ে বড় কর্মচারি!

এই সবুজের ঢেউ দোলানো মাঠ, ফসলের ঘ্রাণ গেদনের ভালো লাগে। আরো ভালো লাগে পূর্ণ ফসলের ঘ্রাণ। মুন্সি যদিও মাঝে মধ্যে এই ফসলের খোঁজ খবর নিতে আসে তথাপিও বীজ বোনা থেকে ফসল মুন্সির ঘরে উঠার আগ পর্যন্ত এই ফসলের সাথে গেদনেরই খুব গাঢ় সম্পর্ক। তার চিন্তার মাঝে যে এই ফসল উঁকি দেয় না তা বলা যাবে না। তারও তো ঘামের জ্বালা আছে। এ রকম অসংখ্য জ্বালা অন্তরে পুষে-পুষে, নিজেকে বারবার ভেঙেগড়ে চরম বিরহ জ্বালায় পুড়ে-পুড়ে তার হৃদয়খানা অঙ্গার করে রেখেছে। অবশ্য এসব বিষয় বাদ দিলে মুন্সি বাড়ির লোকজনই তার একান্ত আপন। মাঝে মাঝে সে প্যাটের ব্যথায় কুতরালে মুন্সির বেটিই তো তেঁতুলের শরবত খাইয়ে যায়। গেদনের ঘরে তখন কস্কো সাবানের বাসনা কয়, ঘরখানি যেন মৌ মৌ করে; আর সব ব্যথা সেরে যায় গেদনের!

মুন্সি বাড়ির খাবারে গেদনের কোন অভিযোগ নেই। কারণ তরকারিতে মাছ না থাকলেও তার গন্ধ থাকে, তেলের কোনো বাড়ম্বরতা নেই, মাসে চান্দে কোনদিন মাংস না জুটলেও হাড় আর ঘন সুরো অন্তত জোটেই। মুন্সির গিন্নির আড় চোখ আছে তার দিকে। শুধু খাবারেই নয়, তেল সাবানে, কাপড়-চোপড়েও তিনি কৃপণতা দেখান। গেদন বুঝেও না বুঝে থাকে। মায়েন্দারের এর চেয়ে বেশি কি-ইবা পাওয়ার আছে। গেদনের সরেস দেহে এখন যৌবনের ইতিউতি গান- এটাই বোধ হয় শত্রুতার প্রধান কারণ। এর বাইরে যে কারণে মুন্সির ঘরণী বিচলিত সেটা অন্দরমহলের ব্যাপার। উঠতি বয়সে যে ভুল সে করেছিল গোপনে গোপনে সে ভুল মনের অন্তর্বাসেই সে রেখে দিয়েছে; এমন ভুল তার মেয়ের জীবনে না ঘটুক, এমনটাই সে চায়। এমন বয়সে কোন ভুল হয়ে গেলে সে ভুল সারা জীবন পুড়িয়ে যাবে বলেই মেয়েকে চোখের আড়াল হতে দেয় না সে। তারপরও গেদনের কিছু হলে সবার আগে মুন্সির মেয়েই খোঁজ পায়!

গেদনের মনটা মাঝে মধ্যে উশখুশ করে। রাতে শরীরটা ঝাকি মেরে ওঠে। তবুও সে কাউকেই বলতে পারে না মনের কথা। মুন্সিও কি বোঝে না? সবাই তো ঘর বাঁধার স্বপ্ন দ্যাখে, গেদন দেখলে কি কারো ক্ষতি হয়? হোক আর না হোক তাতে কিছু যায় আসে না গেদনের। সে এক স্বপ্ন নিয়ে পড়েও থাকে না। সে স্বপ্ন দ্যাখে নিজের ইচ্ছে মতো। অবশ্য স্বপ্নগুলো গাঁজার ঘোরে আরো দীপ্ত হয়। স্বপ্নের গভীরে প্রবেশ করে কত রকমারী খেলা খেলে বেড়ায় তার কোন হদিস নেই। তবে তার স্বপ্নগুলোর সফলতা নিয়ে সে প্রায়ই হতাশ হয়। সে এমন অবস্থাপন্ন মানুষ তাতে এ সকল স্বপ্নের কথা কেউ কখনও শুনলে হাসতেও পারে। আর তা সহ্য করতে পারবে না গেদন। তবে সবকিছুর মাঝে একটি চিন্তা তাকে সব সময় বিচলিত করে তোলে। সে জীবনের মাত্র এই একটি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চায়। সে মুন্সি হবেই হবে। তবে সে মুন্সি হলে, নুরু মুন্সি হবে! নুরু মুন্সির কথায় জাদু আছে; উন্নত জীবনের স্বপ্ন আছে। নুরু মুন্সির কথায় উজ্জীবিত হয় গেদন।

আজ সকাল সকালই মুন্সি মাঠে এসেছে। তার হাকডাকে গেদন লাফ দিয়ে মেশিন চালার বাইরে আসে। প্রণাম করে। ফসল ঘরে তোলার সময় হয়েছে বৈকি! নয়তো মুন্সির এই সাত সকালে কি মাঠে দেখা যেত? মুন্সি বড় ঠাণ্ডা মাথার মানুষ।

– গেদন, তোর মাথায় তো জট ধরেছে রে। তা তুই তো মাথায় একটু সাবান-সুডা দিতি পারিস। আমার কি তার অভাব রে?

গেদন হাসে। খুশিতে বিগলিত হয়। আনন্দে মনটা ভরে ওঠে। গেদন বলে ওঠে-

– ফসল ঘরে তুলে পরে মাকপো কর্তা। এইতো আর কয়ডা দিন।

– কি কইস রে গেদন। ফসল তুলে তুই সাবান-সুডা মাকপি, সে আবার কিরাম কতা।

– সারা দিন কাম করেই সময় যায়। বাড়ি যাওয়ার তো আর ফুসরৎ নেই। তা সময় মত হবেনে কর্তা।

মুন্সির কথা অন্য দিকে মোড় নেয়। গেদন চোখ মুছতে মুছতে কাজের পানে হাত বাড়ায়। একটু পর বাড়ির পথ ধরে মুন্সি। মনের ক্ষেদে গান ধরে গেদন- ‘কবে যাবেরে তোর ইতরপনা, ঠকালে ঠকিতে হবে, যদি রাখি চোখ খোলা’।

গেদনের গাড়ি যেন জ্যাম করছে। স্বাচ্ছন্দ কোন গতি নেই। মাঝে মাঝে চলে, মাঝে মাঝে চলে না। বাবা-মায়ের কোন স্মৃতি নেই তার স্মৃতি ভা-ারে। তাদের সে কখন হারিয়েছে তাও সে জানে না। পিছে চেয়ে কিছুই পায়না সে তাই পিছের দুঃখ-ব্যথা, হতাশাকেও চিরবিদায় করে দিয়েছে। মুন্সি বাড়ির ঝাটা লাথির মাঝেই সে এতটুকু বড় হয়েছে। মনের কথাগুলো বলার মানুষ কই তার। তবুও ওই গাঁজাই তার ভুলিয়ে দেয় সব কথা। আপন মনে স্বর্গে ঘুরে বেড়াতে পারে সে। যেখানে গেদনকে বীর-বীর দেখা যায়। সে দেখতে পায় দু’জন মানুষকে। একজন নারী আর একজন পুরুষ। কাক্সিক্ষত সে নারীটি দেখতে বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মত। মনে মনে সে অনেক খেলা করেছে তার সাথে। তবে অন্যজন তার আদর্শ। গেদনের স্বর্গে বারবার উঁকি দেয় একজন নূরু মুন্সি। নুরু মুন্সির বাচনে সে মন্ত্রমুগ্ধ হয়। তার বাচনে মানুষের গান; যে মানুষগুলো গেদনের মতো। নুরু মুন্সির সেই কথাগুলো সে ভুলতে পারে না কখনো। বালিয়াডাঙ্গা স্কুল মাঠে নুরু মুন্সির সেই ভাষণ শুনে গেদনের চিন্তা ঘুরপাক খায়, এবড়ো থেবড়ো হয়ে যায় তার বিশ্বাসের জগত।

ইদানিং গাঁজায় আর কাজ হচ্ছে না। গাঁজায় তাকে গুলিয়ে দিচ্ছে। গাঁজা সেবনে শরীর মন কোন কিছুই আর সাই দেয় না। শরীরটাকে যেন টেনে হেঁচড়ে নিয়ে বেড়াতে হয়। গা বমি বমি করে। এতদিনের বন্ধু এই গাঁজাকে নিয়ে তার ভাবনা আরো বেড়ে যায়। গেদন আপন মনে গাঁজার প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। গেদনের এখন প্রধান প্রশ্ন হলো- গাঁজা আমি খাই নাকি গাঁজা ওকে খায়। আসলে গাঁজাই ওকে খেয়ে ফেলেছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ওকে নিতেই হবে। একদিন গেদন পণ করে বসল আজ থেকে ও আর গাঁজা খাবে না। শুধু তাই নয় ও ওর বন্ধুদেরকেও খেতে দেবে না। রাতের আয়োজনে গাঁজার আসরে যখন সবাই হাজির হল, তখন বন্ধুদেরকে বুঝিয়ে গেদন নিজের দলে ভিড়িয়ে নিল!

গেদনের বন্ধুরা খারাপ নয়। খারাপের মধ্যে ওরা একটু গাঁজা খায় যা। এটুকু বাদ দিলে ওরা কর্মপ্রিয় পাগল মায়েন্দার। সাধ্যের শ্রমটুকু ব্যয় করতে কোন কার্পণ্যতা নেই ওদের। ওদের কর্ম নিয়ে ওদের মুন্সিরাও বেশ খুশি। তবে সাদা সর্দারদের মতো কোন মহাজনই চায় না মায়েন্দারেরা কোন সময় বসে থাকুক। মুন্সিদের চেহারা যাই হোক, আজ গেদনের চেহারা দেখে ওর বন্ধুরা বিস্মিত হয়েছে বৈকি। যে গেদন তাদেরকে এই ধোঁয়ার পথে এনেছে সেই গেদনই কিনা ফিরালো আবার। শুধু ফিরালোই না এর কিছু দিন পর গেদন বন্ধুদের কাছে একটি বায়নাও ধরে বসল। বন্ধুরা আরো হতবাক। তবুও তারা গেদনের কথায় রাজি হলো। গেদন ওদের একটি খারাপ পথ থেকে ফিরিয়েছে বলে কথা। ওর বায়না বন্ধুদের কাছে মন্দ মনে হয় নি। কত টাকা তো কত দিকেই চলে যায়। যদি এ টাকাগুলো জলে যায় যাক। তবে গেদনকে না করা যাবে না। প্রতিদিন গাঁজা খেতে যে টাকাগুলো খরচা  হতো সেগুলোই প্রতিদিন জমাতে চেয়েছে গেদন। গাঁজা খেলে তো এই টাকাগুলো নষ্টই হয়ে যেত। সেটা দিয়ে গেদনের যদি কোন উপকার হয় তাহলে ক্ষতি কি? এটা গেদনের যদি কোন কাজে আসে তাহলে ওর বন্ধুরা খুশিই হবে!

গেদনের বন্ধুরা প্রতিদিন গেদনের চালায় আসে, সেখানে না পেলে মুন্সির বাড়িতে এসে টাকাগুলো দিয়ে যায়। সময় পেলে দু-দ- বসে সবাই মিলে একটু তামাক খেয়ে যায়। ওদের এ কাজগুলো একান্ত গোপন। কেউই বিশেষ কোন নজর দেয় নি। সকলেই ভাবে ওদের ভেতর গাঢ় বন্ধুত্ব আছে। সমাজচক্ষুর আড়লে ওদের এই নিয়মিত আসা-যাওয়ার সময়ও কি ওরা স্মরণে রেখেছে? এভাবে  কতো দিন কিংবা কতো রাত, কতো মাস বছর পেরিয়েছে তার কোন হিসেব ওদের নেই। প্রতিদিন এক জায়গায় হওয়াই যেন ওদের নেশায় পরিণত হয়েছে। কেউ কোন বিপদে পড়লে ওরাই ওদের বন্ধু। মুন্সিদের পরিচিত চেহারা ওদের জানা আছে। যা হোক, বন্ধুদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা পাওয়ার পরও গেদনের জীবন যাপনে কোন রকমের পরিবর্তন আসেনি। গেদন আছে আগের মতোই। তাহলে এই টাকাগুলো গেদন কি করে? এক বন্ধু প্রশ্ন করতেই গেদন বলেছিলো- ‘শুধু ওই একটি বিষয় আমাকে ভাবতে দিস রে দোস্ত’। বন্ধুরা আর কথা তোলে নি।

এ গায়ে গেদনের মুন্সির মতো আরো কয়েকজন মুন্সি আছে। ওর বন্ধুরা ওইসব মুন্সিদের মায়েন্দার। মুন্সিতে মুন্সিতে ঝাপান খেলার সময় ওরা কৌশলে মাঠ-ঘাটের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। সম্মুখ সমরে ওরা নেই। এ সকল হট্টগোলের সময় কিছু দিন অবশ্য ওদের গোপনে দেখা সাক্ষাত করতে হয়। মায়েন্দারী হারানোর ভয় যে নেই তা নয়। তবে এই লেঠো-লাঠি খেলা দেখতে ওদের কারোই ভালো লাগে না। মুন্সিদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার এই খেলা ওরা কম দেখে নাই। মাঝে মাঝে কোন কোন মুন্সি ভাড়া করা কাইজাদারও নিয়ে আসে। তখন আতঙ্কে কেঁপে ওঠে সমস্ত এলাকা। তবে সদ্য সাবেক নবান্নে ফসলের গরম আর সহ্য হয়নি মুন্সিদের। সকলেরই ফসল ভালো হয়েছে। ঘরের ধানে গায়ে জোর বেড়েছে। আর তাই প্রতিবার গ্রামের সকলে মিলে যে উৎসব আয়োজনগুলো করতো। এবারে তা আর হলো না। যার যার মতো সেই সেই করতে লাগল এক এক আয়োজন। 

কেউ আয়োজন করল ষোল দলের ফুটবল খেলা, কেউ গাজীর গানের, কেউবা যাত্রাপালা। আনন্দ উৎসবে মেতেছিল গ্রামবাসী, একের পর এক আয়োজন। আনন্দ জোয়ারে নেচেছে অনেকেই। তবে সর্বশেষ বাধা পড়ল ধর্মীয় আয়োজনে। তাও আবার ইছালে ছওয়াবের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে। হুজুর মহাশয় ছিলেন ভাড়াটে। তিনি দক্ষিণ পাড়ার আবুজর মুন্সির মতেরই মানুষ। হুজুর রাতে যে বয়ান করেছিলেন তাতে ধর্মের চেয়ে রাজনীতিই বেশি ছিল। যা গ্রামের লোকের পছন্দ হয় নি। ফলে তারা রাতে না খেয়ে বাড়ি চলে যায়। তাতেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে আবুজর মুন্সি। তার ভাড়াটেদের দিয়ে সকালের বাসিপচা খাবার গ্রামের লোকেদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলো সে। গ্রামের লোকে কি সেটা মেনে নিতে পারে? হয়ে গেল মহা হট্টগোল। প্রথমে মুখোমুখি, তারপর হাতাহতি, লেঠোলাঠি, রক্তারক্তি, শেষ পর্যন্ত জীবন দিতে হল আবুজর মুন্সির বড় ছেলে ফালতু’র। এবার শুরু হলো মুন্সিতে মুন্সিতে রাজনীতি। ফালতুর মৃত্যুর দায়ভার এসে পড়লো গেদনের মুন্সির উপর। গেদনের মুন্সি এখন বাড়িছাড়া, এলাকা ছাড়া। কোন উপায় খুঁজে পায় না সে। মাঝে মাঝে সে বাড়িতে আসে, তাও পালিয়ে। জ্বালায় জ্বালায় অতিষ্ট গেদনের মুন্সি। কোট-কাছারী, কতোয়ালি থানা পুলিশ যেন সব সময় হা করে আছে। সকলেই টাকা টাকা করে। নিজের দলের লোকজনও যে কম চায় তা নয়। এই বিপদে পড়ে সে গেল না কোথায়? সবারই গাল একই কথা কয়, টাকা আর টাকা!

এত টাকা পাবে কোথায় মুন্সি। সবাইকে মিটানোর পরও আবুজরকেও দিতে হবে মোটা অংক। দিশেহারা গেদনের মুন্সি। মুন্সিই একদিন গেদনকে বললো- ‘এবার বদায় খ্যাড়ের দাড়ির জমিটুক বেচতিই হয় রে গেদন। কোন উপায় নেই।’ গেদনও বলেছিল- ‘তা বেচলি আমি খদ্দের দেকে দিতি পারি আপনার।’ প্রথমে কথাটা আমলে না দিলেও শেষ পর্যন্ত গেদনের শরণাপন্নই হতে হয় মুন্সিকে। একান্ত গোপনে মুন্সি খ্যাড়ের দাড়ির জমিটুকু বিক্রি করে দিতে চায় সে। জমির দামও নির্ধারিত হয়ে গেল গেদনের মাধ্যমে। মুন্সি রাজি। দিনক্ষণ অনুযায়ী জমি রেজিস্ট্রি হবে থানা সদর অফিসে বসে। পুলিশের ভয়ে গোপনে এলো মুন্সি। ‘মুক্তি’ নামের একটি সমিতির কাছে সে জমি বিক্রয় করল। গেদন বলেছিল এ সমিতির লোকজনের সাথে তার পরিচয় আছে। আছেও বৈকি। টাকা বুঝে পেয়ে গেদনের মুন্সি স্ট্যাম্পে সই করার পর ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপতে থাকলো। কারণ মুন্সির পেছনে গেদনের পাশ দিয়ে লাইন দিয়ে কখোন যেন সার দাঁড়িয়ে গেছে সারা গায়ের মুন্সিদের মায়েন্দারগুলো। তবে সকলের চোখেমুখেই আছে সান্ত¦নার আভাস।

পরদিন খ্যাড়ের দাড়ির সেই স্কীমটাতে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে গেদন বলেছিলো- ‘এই খ্যাড়ের দাড়ির স্কীমটাই এনে দিতে পারে এই খ্যাড়ের দাড়ির মাঠ’। দীপ্ত শপথ নিয়েই সেই মায়েন্দারগুলো আজ নিজেদেরকে আপনার মায়েন্দার হয়ে বাড়ি ফিরল। আর  গেদনের চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠল নুরু মুন্সির সেই সদাহাস্য মুখখানি।

মন্তব্য: