তারেক আহসান
‘ A great poet, in writing of himself, writes of his age…’
– T.S. Eliot
মহার্ঘ এই উক্তিটি এলিয়টের নিজের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। তিনি তাঁর কবিতায় তাঁর সময় অর্থাৎ কাল দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিতজ্জএকথা নিঃসন্দেহে বলা চলে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাহিত্যের সকল প্রবণতাগুলো তাঁর কবিতায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে।
আধুনিক কবিতার গুরু টি.এস. এলিয়ট যে কোনো মূল্যায়নেই বিশিষ্ট, উলেখযোগ্য ও অনন্য। ‘কাব্য, প্রবন্ধ, সমালোচনাজ্জ এক কথায় সাহিত্যের সকল শাখাতেই তাঁর সদম্ভ বিচরণ। ‘The love song of J. Alfred Prufrock’ হতে শুরু করে ‘Four Quartets’ পর্যন্ত বিস্তৃত তাঁর পরিক্রমণ একজন নিবেদিত শিল্পীর কাব্যিক পরিভ্রমণ। দিব্য সত্য সন্ধানে ব্রতী হয়ে নিঃসঙ্গ এ যাত্রাপথে তিনি উন্মোচন করেছেন জাগতিক, মহাজাগতিক নিরাশার স্বরূপ, অবশেষে পৌঁছে গেছেন কাক্সিক্ষত গোলাপকুঞ্জে জ্জ হতাশা মুক্তির তথা নির্বাণের আধারে। এলিয়ট বলেছেন, পাঠককেই হতে হবে সমালোচক আর তাঁকেই কাব্যের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিতে হবে কবি ও কবিতাকে নির্মোহভাবে। এবং আজকের দিনে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা স্বীকৃতি পেতে হলে কবির থাকতে হবে মেধা ও মনন, পরিচিত হতে হবে আর জানতে হবে আপন কৃষ্টি-কালচার-সভ্যতা-ঐতিহ্যÑএটি কাবিদের জন্য এলিয়টের অবশ্য পালনীয় পাঠ।’(১) এলিয়টের মতে ঞৎধফরঃড়হ বা ঐতিহ্যের অর্থ পূর্ববর্তী কবিদের অন্ধ অনুকরণ বা অনুসরণ নয়। মূলত এর অর্থ ঐতিহাসিক চেতনার উপলব্ধি- Ô…The historical sense involves a perception, not only of the pastness of the past, but of its presence;…This historical sense, which is a sense of the timeless as well as of the temporal and of the timeless and of the temporal together, is what makes a written traditional.(2)
বিশ শতকের প্রধান কবিদের মধ্যে টি.এস. এলিয়ট অন্যতম। তিনি তাঁর কবিতায় সম্পূর্ণ পৃথক একটি ধারার সূচনা করেছেন পূর্বের ইংরেজি কাব্যের রীতি পাল্টে দিয়ে। গদ্যের মধ্যেও এক চিন্তা থেকে অন্য চিন্তায় দ্রুত বিচরণ করার রীতি তৈরী করেছেন, নাটকীয় সংলাপ এবং কথ্য ভাষার যথোপযুক্ত মিশ্রণ ঘটালেন; এবং বিশ্বের সকল সাহিত্যকর্ম, দর্শন, পুরাণ থেকে উদ্ধৃতি ও উলেখ অবলীলায় নিজের কবিতায় ব্যবহার করলেন অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে। ‘ভাবনাকে চিত্রে রূপায়িত করা এবং চিত্রকে ভাবনায় নিয়ে যাওয়া এই ছিল তাঁর কাব্যের একটি প্রধান কৃতিত্ব। এলিয়টের ভাষায়- ‘Transforming ideas into sensation, transforming an observation into a state of mind.’ তার ফলে এক ভাবনার থেকে আর-এক ভাবনার স্তরে একটা আকস্মিক গতি তাঁর কাব্যে দেখা যায়।’(৩)
এলিয়ট স্বভাবত একজন প্রচারবিমুখ ও স্বল্পভাষী ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনের অধিকাংশ সময়ই তাঁকে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করতে হয়েছে। বিষাদ, ক্লান্তি ও হতাশা তাঁকে জর্জরিত করলেও কাব্যের বাইরে এর কোনো বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। ১৯১৫ সালে তাঁর প্রথম পরিণয় শ্রীমতী ভিভিয়েন হেউড-এর সঙ্গে। বিবাহের কিছুদিন পরেই তাঁর স্ত্রী মানসিক রোগে আক্রান্ত হন এবং ১৯৪৭ সালে একটি মানসিক আশ্রমে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর কাব্যে তাই এই মানসিক যন্ত্রণার বহু প্রতিফলন দেখতে পাই। ১৯৪৮ সালে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে দেওয়া হয় নোবেল পুরস্কার। ১৯৫৭ সালে অর্থাৎ তাঁর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর ১০ বৎসর পর তিনি তাঁর প্রাইভেট সেক্রেটারি শ্রীমতি ভ্যালেরি ফ্লেচারকে বিয়ে করে ১৯৬৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শান্তিময় জীবন যাপন করেন।
২.
বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড। প্রথমেই বলে নেওয়া যাক, কবিতাটির এলিয়ট প্রদত্ত নাম The waste land নয়; নামটি ছিল He do the police in Different Voices; এবং এর প্রথম পঙক্তি আধুনিক চেতনা-সমৃদ্ধ, চিত্রকল্পের অসাধারণ প্রয়োগে সৃষ্ট ‘April is the cruellest month…Õ নয়। পঙ্ক্তিটি ছিল সাদমাটা স্মতিরোমন্থন মেজাজের-
First he had a couple of feelers at Tom’s place
There was old Tom, boiled to the eyes, blind
সু-যোগ্য সম্পাদক, কবি এজরা পাউন্ড তাঁর এই কাব্যে এমন নির্ভুলভাবে সম্পাদকের কাঁচি চালিয়েছেন যে, বাক্য-সম্পাদনার ইতিহাসে তা একটি অনন্য নজির হয়ে আছে। মহৎ ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রে ভাগ্যবানও বটে। তা না-হলে এমন কাব্য-খ্যাতি না-ও পেতে পারতেন।
‘বিশ শতকে যদি কোনো একটি কাব্য বিশ্বসাহিত্যে কবিতার মোড় ফিরিয়ে থাকে তবে তা নিঃসন্দেহে ‘দ্য ওয়েস্ট্ ল্যান্ড্’। কবিতাটি যেমন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তেমনি এর দুরূহতাও কবিতাটি বুঝবার পক্ষে কম জটিলতা সৃষ্টি করে নি। ব্যাখ্যাদাতাগণ এর নানারকম ব্যাখ্যা করেছেন এবং বিভিন্ন তাৎপর্যের সন্ধান দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে কোনো একটিমাত্র তাৎপর্যে এই কাব্যটি নিঃশেষিত হয় না, এবং এটিই এর বিশেষ আকর্ষণ ও শক্তি। …. কিন্তু কোনো কাব্যই শুধু পণ্ডিতদের পরিতৃপ্তি দেবার জন্য রচিত হয় না। সাধারণ পাঠকের কাছে গ্রাহ্য না-হওয়া পর্যন্ত কবিতা সার্থক বা সফল হয়েছে বলা চলে না। অবশ্য অত্যন্ত সরল কাহিনীকাব্য ছাড়া সার্থক কবিতা মাত্রেরই আবেদন একাধিক স্তরে বি¯তৃত থাকে। পাঠকভেদে ও রূচিভেদে বিভিন্ন স্তরের রসগ্রহণও পৃথক হয়।’(৪)
জেমস জয়েসের ইউলিসিস ছাড়া বোধ হয় বিশ শতকের সেরা সৃষ্টিকর্ম এটি। এটি স্বল্প পরিসরে একটি মহাকাব্যজ্জ যার মূল বিষয় আত্মিক বিনষ্টি বা মৃত্যু। The waste land এ-যুগের প্রতিচ্ছবি বলে দাবি রাখে না। এ শুধু এক কবির জীবন সম্পর্কে ব্যক্তিগত বিক্ষোভ, ছন্দোবদ্ধ হা-হুতাশ। এলিয়ট বিভিন্ন সময় দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে স্বীকার করেছেন যে, The waste land সমাজ-সভ্যতার ওপর তাঁর কোনো মন্তব্য নয়; নিছক ব্যক্তিগত বিক্ষোভ।
এলিয়ট এই কবিতাকে প্রথমে খুব ভালো কবিতা বলে ভাবতে পারেন নি। এক জায়গায় তিনি বলেছেন যে, কবিতাটি তিনি লিখেছেন অন্তর্নিহিত চাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য। তদুপরি এটিই তাঁকে কাব্য-প্রেমিকদের কাছে পোড়ো জমির কবি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এলিয়ট যে নতুন টেকনিক এই কাব্যে ব্যবহার করেছেন তা পূর্বে রচিত ইংরেজি কাব্য ধারার টেকনিক থেকে ভিন্ন। বিষয়বস্তুর অভিনবত্ব ও যুগ সম্বন্ধে এলিয়টের কঠিন শ্লেষ তাঁর কবিতায় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। পরস্পরবিরোধী রসের অবতারণা, কাব্যে নাটকীয় সংলাপ প্রয়োগ, গদ্যগন্ধী শব্দের ব্যবহার, বিভিন্ন চমকপদ উদ্ধৃতি ইত্যাদির ব্যবহারের পেছনে ছিল লাফর্গ, মালার্মে, ডান-প্রভৃতি কবির প্রভাব। কিন্তু মালার্মে যেখানে ব্যক্তিগত প্রতীক ব্যবহার করেছেন এলিয়ট সেখানে নৈর্ব্যত্তিক। প্রতীকও বাস্তবের মধ্যে তিনি মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।
গুরু এজরা পাউন্ডের মতো এলিয়টও কবি রবার্ট ব্রাউনিং- এর ভক্ত ছিলেন। ব্রাউনিং- এর ড্রামাটিক মনোলগ-এর প্রভাব এলিয়টের কবিতায় বর্তমান। তাছাড়া ফরাসি কবি জুলে লাফর্গের কাছে তাঁর কাব্যিক ঋণের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন তিনি। এছাড়া প্রতীকের জন্য তিনি মিস ওয়েস্টেনের From Ritual to Romance জড়সধহপব নামক পুস্তকের কাছে ঋণ স্বীকার করেন।
‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড- এর আঙ্গিক চলচ্চিত্রের আঙ্গিকের সমধর্মী। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র যেমন দৃষ্ট চিত্রকল্প ও শ্র“ত চিত্রকল্পের মিলন ঘটায়, কাব্য ও চিত্রের মেলবন্ধন করে, এলিয়টও এই কবিতায় তাই করেছেন। কবিতাটির মধ্যে এখানে আছে একটি ধর্মচক্র, ওখানে বোদলেয়ার বা ট্যাসিটাস থেকে একটি উদ্ধৃতি, শহুরে টাইপিস্টের প্রণয়লীলার কিছু আভাস, দুলিমাখা লন্ডনের রাস্তার কিছু বর্ণনা: বিংশ শতাব্দীর খন্ড, ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত জীবন যেন কয়েকটি ছড়ানো চিত্রকল্পে স্তব্ধ হ’য়ে আছে। এতে স্বপ্নের মতো অনেকগুলি অভিজ্ঞতা এলোমেলো; এক অভিজ্ঞতা থেকে আর-এক অভিজ্ঞতায় কিংবা একই অভিজ্ঞতার স্তর থেকে স্তরান্তরে, স্মৃতি ও বর্ণনা, চেতন ও অবচেতন, বর্তমান ও অতীতের মধ্যে অবিরত এবং অতিদ্রুত চলেছে যাতায়াত; মাঝে-মাঝে এজন্যে উলম্ফনের আশ্রয়ও নেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যধারা হ’তে ভ্রষ্ট্র্র্র জীবনের ছিন্নমূল রূপ এই আঙ্গিকে ফুটে উঠেছে সন্দেহ নেই। বোদলেয়ার, ডান্, লাফর্গের মতো ফ্রয়েড, ইয়ুং, বোর প্রভৃতির প্রভাবও এর পশ্চাতে কাজ করেছে। (৫)
দ্য ওয়েস্ট্ ল্যান্ড্ কাব্যের প্রথম স্তবকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য বেরিয়াল অব দ্য ডেড’। ক্রিশ্চিয়ান অন্ত্যেষ্টিতে যদিও মৃতের পুনরুত্থানের উপর জোর দেওয়া হয়ে থাকে কবিতার এই অংশে কিন্তু পুনর্জীবন সম্বন্ধে হতাশাই ব্যক্ত হয়েছে। কবিতার দ্বিতীয় স্তবকের নাম ‘এ গেম অব চেস’ বা ‘দাবাখেলা’। পৌরাণিক ফিলোমেল এর ধর্ষণ কাহিনী কবি এখানে উলেখ করেছেন যার চিত্র কক্ষের দেয়ালগাত্রেই অঙ্কিত। তৃতীয় স্তবকের নাম ‘দ্য ফায়ার সারমন’ বা অগ্নিবাণী। বুদ্ধের অগ্নিবাণীতে মানুষের বাসনাকে অগ্নির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যে অগ্নিতে নরনারী সততই দগ্ধ। চতুর্থ স্তবকের নাম ‘ডেথ বাই ওয়াটার’ বা ‘সলিল সমাধি’। এটি একটি শোকগাথা। পঞ্চম স্তবকের নাম ‘হোয়াট দ্য থান্ডার সেইড বা ‘বজ্রবাণী’। এই অংশে যিশুখিস্টের অন্তিম প্রহরের বর্ণনা করা হয়েছে।
এলিয়ট ছন্দ-প্রকরণে এনেছেন নতুনত্ব। তিনি Free Verse এর পাশাপাশি অন্যান্য ফর্মও অনুসরণ করেছেন। কবিতার স্টাইলে এনেছেন আধুনিকতা। তাঁর বক্তব্যে জানা যায় যে, তিনি ফরাসি প্রতীকবাদী কবি ও কবিতা দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। প্রতীক ও চিত্রকল্পের ব্যবহারে আনেন চমক। আর তাই ‘প্র“ফ্রক’-এ সন্ধ্যা ‘ইথারে নিথর রোগী’ হয়ে মূর্ত হয়ে ওঠে-
Let us go then, You and I,
When the Evening is spread out against the sky
Like a patient etherised upon a table:
আবার চমৎকার একটি Image এর উদাহরণ দেখিজ্জ
At the violet hour, when the eyes and back
Turn upward from the desk, when the human engine waits
Like taxi throbbing waiting…
কবিতার সমাপ্তিতে উচ্চারিত হয়েছে শান্তির বাণী- শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ। পাশ্চাত্য মরা মাঠ, পোড়ো জমির উপর এই প্রাচ্য শান্তিজলের ছিটা দিয়ে দ্য ওয়েস্ট্ ল্যান্ড্ কাব্যের সমাপ্তি হয়েছে।
৩.
দ্য ওয়েস্ট্ ল্যান্ড্ আধুনিক মানুষের আধ্যাত্মিক অবস্থার গুরুত্বপূর্ণ রহস্য উদঘাটনের এক মহাকাব্য। এই মহাকাব্যে এলিয়ট কতটুকু বুদ্ধ দর্শন, উপনিষদ তথা ভারতীয় ভাবধারা দ্বারা প্রভাবিত তার প্রমাণ মেলে। ‘দ্য ওয়েস্ট্ ল্যান্ড্’ এর তৃতীয় স্তবকে ‘দ্য ফায়ার সারমন’ পর্বে এলিয়ট বলছেন যে, কাম ও কামজাত লোভই মানব জীবনের সকল যন্ত্রণার মূলে। বুদ্ধদর্শনে চক্রএকটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এলিয়ট এই তাৎপর্যেই ‘The wheel’ কে ব্যবহার করেছেন। বীজাকারে এই যে৬ বাসনা আমাদের স্বভাব থেকে আমাদের প্রবৃত্তি, কর্ম, ইচ্ছা, মনজ্জ সবকিছুকেই ধাবিত করাচ্ছেজ্জ সর্বদা ক্ষুব্ধ ও অস্থির করে রাখছে, সকল কিছুর উপরে তপ্ত বাষ্পের মতো ছড়িয়ে থেকে আমাদের চেতনাকে সুশীতল হতে দিচ্ছে না কখনো- তা মানুষ উত্তরাধীকার সূত্রেই পেয়েছে। Passion বা কাম থেকেই পাপের জন্ম। কাম, ঘৃণা, ভয়- সবই এই অগ্নি থেকে উৎপন্ন। পবিত্র প্রেমের পরিবর্তে উৎপন্ন হয় কাম। যে আগুন ক্ষুদ্র, আবদ্ধ, আনন্দহীন ও কালিমালিপ্ত তাকেই বলে কাম। সব অনর্থের কারণ বলে এই অগ্নিকে সমূলে নিভিয়ে ফেলার উপদেশ দিয়েছেন বুদ্ধদেবের মতো এলিয়টও। আর এভাবেই মানুষ মুক্ত হতে পারে স্বরচিত করাবাস থেকে।
ভারতীয় দর্শনে বলে, আমাদের কামনাই জন্ম, মৃত্যু পুনর্জন্মের অন্তহীন চক্রে আমাদের বেঁধে রাখে- যতক্ষণ না আত্মা স্ব-আলোকে উদ্ভাসিত হয়। এলিয়ট ‘ডেথ বাই ওয়াটার’- এ সে রকম একটি উচ্চারণই করেছেন-
A curent under sea
Picked his bones in whispers. As he rose and fell
He passed the stages of his age and youth
Entering the whirpool.
পৃথিবীকে, পৃথিবীর এই ওয়েস্ট ল্যান্ডকে উর্বরা করার জন্য কাব্যের পঞ্চম পর্বে কবি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন বৃহদারণ্যক উপনিষদের সেই রক্ষা কবচের- দ দ দ অর্থাৎ দত্তম্, দায়ধ্বম্, দম্যতম্। বৃহদারণ্যক উপনিষদের গল্পে আছে, একবার এক প্রচণ্ড দুর্বিক্ষ হয়েছিল। সব নদী, নির্ঝর শুকিয়ে গেল। গাছের পাতা জলের অভাবে ঝরে পড়লো। সমগ্র সৃষ্টি অপেক্ষা করে আছে কখন মেঘ ভেঙে বৃষ্টি আসবে। কিন্তু বৃষ্টি আর আসে না। ভয়ে দিশেহারা হল জীবকূল- সৃষ্টি বুঝি যায় যায়। মানব, দানব, দেবতা মিলে চললো প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে, আর তখন মেঘের অন্তরালে বজ্রকণ্ঠে তিনবার ধ্বনিত হল- দ দ দ।
দত্তম, দয়ধ্বম, দম্যতম্। দান করো তোমার অহংকার; দয়া করো জীবক‚লকে; দমন করো নিজেকে। এভাবেই টি.এস. এলিয়ট তাঁর সময়কে পোড়ো, বিবর্ণ, বিষণ্ন, সারশূন্য, ক্লান্ত ব’লে উল্লেখ করেছেন The waste land নামক মহাকাব্যে। সেই সাথে তিনি পথও বলে দিয়েছেন কীভাবে এই পতিত সভ্যতার অন্তঃসারশূন্য মানব জাতি নিজেকে উদ্ধার করতে পারে এবং সেজন্য কবি ভারতীয় দর্শন ও চিন্তাধারা তথা ভাববীজের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন উলেখযোগ্য ভাবে।