ছোট কাগজের পাঠ আলোচনাঃ কবি-সময়ের একবচন-বহুবচন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

জিয়াউদ্দিন খোকা

অবলীলায় বলা যায় আমাদের ছোট কাগজগুলো দুই ধারায় বিভক্ত এবং ধারা দুইটির উদ্দেশ্য এক নয় বরং বিপরীত। এর প্রথম ধারাটি সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি অঙ্গীকর তথা সামাজিক দায়িত্ববোধে সচেষ্ট। এধরনের পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্যও পাঠকের কাছে ধরা পড়ে লেখার বিষয়বস্তুর নিরিখে। অন্য দিকে দ্বিতীয় ধারাটির উদ্দেশ্য যে সম্পাদক ও লেখকের আত্মপ্রতিষ্ঠার গোপন ইচ্ছা লালিত সেটাও একইভাবে বোঝা যায় লেখার দিকে তাকালে। প্রথমধারার উদ্দেশ্য যেখানে সাহিত্যের নতুন ধারার সৃষ্টি ও প্রচলিত বৃত্তভেঙ্গে দেয়া, এমনি একটি ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে ছোট পত্রিকা ‘কবি’তে। এখানে ঝাঁকে ঝাঁকে তারুণ্যের মুখ, নতুন চিন্তা, আলাদা ভাবনার লেখা ভরে তোলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। সা¤প্রতিক সময়ের স্ব-প্রতিষ্ঠিত অনেক তরুণ এবং সদ্য তরুণোত্তীর্ণ অনেক কবি, লেখকের লেখাই ‘কবি’তে মুদ্রিত হয়েছে। উপরিউক্ত কথাগুলো ছোট পত্রিকার বলে বিবেচনা করা হয়। এই কথার সঙ্গে ‘কবি’র সম্পাদক সজল আহমেদের সম্পাদকীয়তে একই গানের সুর শোনা য়ায়। ‘কবিতা তো প্রাণের ভেতর মনের কথা লুকিয়ে রাখে। আমিত্ববোধকে জাগিয়ে তুলে, নিজের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখে। বোধের ভেতর থাকে কবিতা, কবিতার ভেতরে বোধ, এই নিয়ে তো জীবন। জীবনের অর্থহীন অর্থই হলো কবিতা। দীর্ঘ যুদ্ধকে পেছনে ফেলে অবশেষে প্রকাশিত হলো ‘কবি’এর দ্বিতীয় সংখ্যা। আবারও জয় হলো কবিতার। এই জয় পৃথিবীর মানচিত্রকে জড়িয়ে ধরুক অনন্তকাল।’

সা¤প্রতিক সময়ে ছোট পত্রিকার সংখ্যায় যেমন অজস্রতা এসেছে তেমনি বিষয়বস্তুগত বৈচিত্র্যও দুর্লক্ষ্য নয়। পূর্বের প্রথাগত বিষয়াশয়ের বদলে এখন ভিন্নধর্মী অনেক কিছু স্থান করে নিচ্ছে বিভিন্ন ছোট পত্রিকায়। সামাজিক, রাজনৈতিক সমসাময়িক চিন্তা ধারা থেকেই এমনটি হচ্ছে। ‘কবি’ কাগজটি হাতে নিলে উক্ত কথার সপ্রমাণ মিলবে। প্রবন্ধ, কবিতা, অনুবাদ কবিতা, ধারাবাহিক রচনা ও বইপত্র নিয়ে  সজানো হয়েছে এ সংখ্যাটি। আমাদের ছোট পত্রিকাগুলো এখন শুধু সাহিত্যকেই ধারণ করে না বরং চিন্তাজগতের অনেক আপাত গুরুভার বিষয়কে তারা আলোচনা পর্যালোচনায় আগ্রহী। তাদের সিদ্ধান্ত হয়তো অনেকের সমর্থন পাবে না কিন্তু জরুরি প্রসঙ্গকে এড়িয়ে না গিয়ে বিচার বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যাচাই করে দেখার সৎ সাহসটি প্রশংসনীয়। তেমনি ‘কবি’র এ সংখ্যায় সুধীন্দ্রনাথের কবিতার চিত্রকল্পÑহামিদ রায়হান, রাজনীতি ও প্রেমের কবিহেলাল-হাফিজ, -মাসুদুল হক, পাঠবিমুখ মুর্খরা মিডিয়া কাঙ্গালÑমোহাম্মদ নূরুল হক ও লিমেরিক ও লিয়ারিক তত্ত্ব ও প্রসঙ্গ কথা নিয়ে সময়োপযোগী আলোচনার নতুন চিন্তাধারা ধরা পড়বে  প্রবন্ধগুলোতে। এগুলো পড়ে মনে হবে সমাজ, রাজনীতি ও অন্যান্য বাস্তবতার জীবন্ত চিত্রনাট্য তুলে ধরা হয়েছে। 

‘কবি’এর এ সংখ্যায় প্রতিষ্ঠিত ও নতুন বেশ কিছু কবির কবিতা ছাপা হয়েছে। নির্বাচিত কবিদের মধ্যে আছেনÑঅজয় রায়, অনিক ইসলাম, অববিন্দু চক্রবর্তী, আশয়া ঝর্না, চারু হক, তপন বাগচী, বীরেন মুখার্জী, রনজু রাইম, রেজাউর রহমান রিজভী, সঞ্জয় সাহা, সঞ্জীব পুরোহিত আরো অনেকে। ভাস্কো পোপ এর কবিতা ভাষান্তর করেছেন মানবেন্দ্র বন্দোপ্যাধায়। মহাগদ্যকবি রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ধারাবাহিক রচনা লিখছেন আবদুশ শাকুর। আদিত্য অন্তরের কাব্যগ্রন্থ রোদ, পানি ও বৃক্ষের ক্রন্দন নিয়ে আলোচনা করেছেন নাজমুল হাসান।

বাংলাদেশের ছোট পত্রিকাগুলোর বেশির ভাগেরই প্রবণতা হচ্ছে পাঠক প্রিয়তা অর্জন। এটি ছোট পত্রিকার ক্ষেত্রে মানায় না। অনেক ছোট পত্রিকায় দেখা যায় প্রতিষ্ঠিত বা কিছু পরিচিত লেখকদের লেখা ছাপাবার প্রতি ঝোঁক। অথচ সেসব লেখা লেখকগণ লেখেন যেন দায় থেকে মুক্ত হবার মানসে। ছোট পত্রিকার এই প্রবণতা নিজের দৈন্যকে প্রকাশ করে। সেক্ষেত্রে ছোট পত্রিকা ‘কবি’ উপরোক্ত অভিযোগ থেকে অনেকটাই মুক্ত হতে পেরেছে বলে মনে হয়। আমরা আশা করতে চাই ‘কবি’ সেসব লেখাই প্রকাশ করবে যাদের স্রষ্টারা তরুণ দ্রোহী এবং প্রাতিষ্ঠানিকতা বিরোধী। লেখাকেও হতে হবে মৌলিক, তা বিষয়বস্তুতেই হোক কিংবা আঙ্গিকেই হোক। এ না হলে ছোটপত্রিকার উদ্দেশ্যই কেবল ব্যহত হয় না, পাঠকের অনাগ্রহের কারণে তার অপমৃত্যুও ঘটতে পারে। আশা করি, ‘তারুণ্যের একবচন ও বহুবচন’ ছোট পত্রিকা ‘কবি’ এর সম্পাদক সেই বিষয়টার প্রতি  জোর দেবেন।

কবি

প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা ফেব্র“য়ারি ২০১১ (প্রকাশকাল: মে ২০১১)

সম্পাদক: সজল আহমেদ। 

প্রকাশক: সঞ্জয় গাইন

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা

পৃষ্ঠা: ১১২

মন্তব্য: