রবীন্দ্র-মূল্যায়নে শামসুজ্জামান খান

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

তপন বাগচী

বাংলা-অঞ্চল পূর্বে-পশ্চিমে বিভক্ত হলেও এবং অনেকেই পূর্ববঙ্গ-পশ্চিমবঙ্গ কিংবা পূর্ববাংলা-পশ্চিমবাংলা নামে সম্বোধন করলেও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহীকবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘বাংলাদেশে’ নামেই ডাকতেন। এই বিষয়টি লক্ষ্য করে আমাদের ফোকলোরবিদ ও সমাজচিন্তক শামসুজ্জামান খানের স্বগত-প্রশ্ন, ‘কবিরা দিব্যজ্ঞান। ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি রাষ্ট্রের আবির্ভাব কি তাঁরা দিব্যদৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছিলেন? Poetic Vision কি তাহলে Prophetic ভবিষ্যদ্বাণীতে রূপান্তরিত হয়েছিল? আর এই দুই কবির নিবিষ্ট অনুরাগী ও শক্তিধর রাজনৈতিক ইতিহাস-নির্মাতা শেখ মুজিব দুই কবির দিক-নির্দেশক ইঙ্গিত থেকে ইতিকর্তব্য বুঝেই কি প্রতিষ্ঠা করলেন বাঙালির ইতিহাসের প্রথম প্রকৃত স্বাধীন সার্বভৌম ও জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রাষ্ট্র?’ প্লেটোর কল্যাণ-রাষ্ট্রে যেখানে কবিদের অবদানকে স্বীকার করা হয় নাই, সেখানে শামসুজ্জামান খান বিশ্বকবি, বিদ্রোহীকবি ও রাজনীতির কবি- এই তিন কবির অবদানকে যথামর্যাদায় অভিষিক্ত করলেন। রবীন্দ্রবিবেচনায় তাঁর এই আবিষ্কার ও বিশ্লেষণ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ বললে আমাদের দেশে ওয়াহিদুল হক, মুহম্মদ হাবিবুর রহমান, আবদুশ শাকুর, আহমদ রফিক, আনিসুজ্জামান, সন্জীদা খাতুন, সনৎকুমার সাহা, আনিসুর রহমান, করুণাময় গোস্বামী, প্রমুখের নাম যেমন করে ভেসে ওঠে, তেমনিভাবে হয়তো শামসুজ্জামান খানের নাম ভেসে ওঠে না। কিন্তু এদেশে আরো অনেক গুরু দায়িত্ব পালন করেও যাঁরা রবীন্দ্রচর্চাকে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান করেছেন এবং নানান কর্মকা- পরিচালনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে শামসুজ্জামান খান অগ্রগণ্য। রবীন্দ্রনাথ-সম্পর্কে অধ্যয়ন করে প্রাতিষ্ঠানিক উপাধি গ্রহণ করেও রবীন্দ্রচর্চায় সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় অক্ষুণœ রাখতে পারেননি অনেকে। শামসুজ্জামান খান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে আসীন হয়ে রবীন্দ্র পদক প্রচলন করেছেন। তিনি আবদুশ শাকুরকে দিয়ে লিখিয়েছেন রবীন্দ্রজীবনী। আবদুশ শাকুরের অসামপ্ত কাজ সম্পন্ন করাচ্ছেন আহমদ রফিককে দিয়ে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাময়িকপত্রে রবীন্দ্রবিষয়ক বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। সেই প্রবন্ধগুলো পাঠ করলে আমরা রবীন্দ্র-ব্যাখার নতুন একটা চেহারা পাই। এইসব প্রবন্ধের বিবেচনা থেকে আমরা শামসুজ্জামান খানকে নির্দ্বিধায় রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ হিসেবে আখ্যা দিতে পারি।

‘রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশে, বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের নামকরণের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের ভাবনাবিন্দু খুঁজে বের করেছেন। রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশকে কীভাবে ভালবেসেছেন, বাংলাদেশের মানুষ, প্রকৃতি, সংস্কৃতি কীভাবে তাঁকে হয়ে-উঠতে সহায়তা করেছেন, তাঁর চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন লেখক। ‘বাংলাদেশের রবীন্দ্রনাথ’ বলতে বাংলাদেশে রবীন্দ্রমূল্যায়ন, রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ-বর্জন বিতর্ক নিয়েও বেশ কিছু নতুন কথা বলা হয়েছে এই প্রবন্ধে। তাঁর গানকে জাতীয় সংগীত হিসেবে প্রতিষ্ঠাদানের প্রেক্ষাপটও তিনি আবিষ্কার করেছেন। লেখকের ভাষায়, ‘৬৬-তে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলন বাঙালির নিজস্ব রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রূপ লাভ করে। খাজা শাহাবুদ্দীনের রবীন্দ্রসংগীতের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। এ আন্দোলনে মিছিলে-মিটিংয়ে-সভাতে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথে ‘আমার সোনার বাংলা’ গান ভবিষ্যৎ বাঙালি রাষ্ট্রের জাতীয় সংগীতের বিবেচনায়ই গাওয়া হয়েছে বারংবার। এ গানটি বাংলাদেশ আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর খুব প্রিয় ছিল। এ গানকে জাতীয় সংগীত করার সুচিন্তিত সিদ্ধান্তও তাঁরই।’

‘স্বকালের সংকট ও রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক চিন্তার অনুসন্ধান করা হয়েছে। লেখকের দৃষ্টিতে ‘রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মূলত সুষ্ঠু জাতীয়তাবাদী ও উদার মানবিক আন্তর্জাতিকতাবাদী’। রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লিখেছেন, ১৯২৭-এ ফ্যাসিবাদ-বিরোধী সভায় আইনস্টাইন, র’মা র’লাঁ প্রমুখের আহ্বানে সাড়া দেন। ১৯৩৩-এ ফ্যাসিবাদ ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে র’মা র’লাঁ-র নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী যে সংগঠন হয়, রবীন্দ্রনাথ হন তার ভারতীয় শাখার সভাপতি। এরকম অনেক উদাহরণ টেনে শামসুজ্জামান খান খুব যুক্তিগ্রাহ্যভাবে রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে বিশ্লেষণ করেছেন।

বাংলার বাউল দর্শনের প্রতি রবীন্দ্রনাথের আকর্ষণের মূলে যে ছিলেন লালন সাঁই, এবং শিলাইদহ-পতিসর-সাজাদপুরে বাসের ফলে যে তাঁর মানসচেতনা প্রসারিত হয়েছে লোকায়ত দর্শনের দিকে সেই সত্য সন্ধান করেছেন ‘লালন, রবীন্দ্রনাথ ও বাঙালির তৃণমূলের ভাবসাধনা’ প্রবন্ধে। এই বিষয়ে আবুল আহসান চৌধুরী-সহ অনেক প্রাবন্ধিক আলোচনা করেছেন, কিন্তু ফোকলোরিক দৃষ্টিকোণ তেকে বিচারের কারণে এই প্রবন্ধটি বিশেষ মাত্রা লাভ করেছে।

শামসুজ্জামান খান ইরাকযুদ্ধ এবং পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের সুলুক সন্ধান করেছেন মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ও অরুন্ধতী রায়ের মন্তব্য থেকে। প্রবন্ধটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। রবীন্দ্রচিন্তায় নারীবাদ নিয়েও শামসুজ্জামান খানের চমৎকার পর্যবেক্ষণ রয়েছে। রবীন্দ্র-অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লেখক ‘প্রথম নিঃসঙ্কোচ নারী-স্বাধীনতাকামী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ‘খাতা’ গল্পটিকে তিনি নির্দিষ্ট করেছেন রবীন্দ্রনাথের প্রথম নারীবাদীচিন্তার প্রকাশ হিসেবে। লেখকের বক্তব্য, ‘রবীন্দ্রনাথের এই সামান্য গল্পটিও বাঙালি শিক্ষিত সনাতন হিন্দুসমাজে স্ত্রীশিক্ষার বিরুদ্ধে নব-আন্দোলনের ঢেউ তোলে’। ১৮৮৯ সালে মহারাষ্ট্রের বিদুষী নারীনেত্রী রমাবাই ইউরোপের নারীস্বাধীনতা-আন্দোলন, নারীশিক্ষা, নারীনির্যাতন, নারীমুক্তি, নারীশক্তি বিষয়ে এক বক্তৃতা করেছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, স্বর্ণকুমারী দেবী প্রমুখ। বক্তৃতায় রমাবাই তিনি ঠাট্টচ্ছলে বলেন, ‘মেয়েরা সব বিষয়ে পুরুষের সমকক্ষ, কেবল মদ্যপানে নয়’। এর প্রতিক্রিয়ায় রবীন্দ্রনাথ ‘ভারতী ’পত্রিকায় প্রেরিত এক পত্রে ছদ্মনামে লিখেছিলেন, ‘মেয়েদের পুরুষের সমকক্ষ কিছুতেই বলা যাবে না, কেননা মেয়েদের ধারণাশক্তি থাকলেও সৃজনীশক্তি নেই।’ এর বিরোধিতা করেন রবীন্দ্রনাথের বোন স্বর্ণকুমারী-সহ অনেকেই। বিলেত-ফ্রান্স-ইতালি-ফেরত বঙ্গনারী কৃষ্ণভাবিনী এই উক্তির বিজ্ঞানসম্মত প্রতিবাদ করেন। রবীন্দ্রনাথ এতে বিরূপ হন।  কিন্তু ১৯১৪ সালে এসে সেই রবীন্দ্রনাথ বদলে যান। নারীর পক্ষ নিয়ে লেখেন ‘স্ত্রীর পত্র’। শামসুজ্জামান খানের ভাষায়, ‘সবুজপত্র বেরুল। চলিত ভাষা হলো সাহিত্যের নতুন প্রকাশ মাধ্যম। রবীন্দ্রনাথের নারীসংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে ঘটে গেল বিপুল রূপান্তর। তিনি নারীর স্বকীয় কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরলেন তাঁর সাহিত্যে। বোষ্টমী, হৈমন্তী, অপরিচিতা গল্প এবং ঘরে বাইরে উপন্যাসে নারীর স্বাধীন সত্তা ও অধিকার-সচেতনতার পরিচয়-সমৃদ্ধ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা গেল।’ রবীন্দ্রচিন্তার ক্ষেত্রে শামসুজ্জামান খানের এই মন্তব্য অনেকটা নতুন আবিষ্কারের মূল্য পেতে পারে। ‘রবীন্দ্রনাথ, রমাবাই ও কৃষ্ণভামিনী: নারীবাদী বিতর্ক’ প্রবন্ধটি তাই গুরুত্বপূর্ণ।

‘রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও বাংলাদেশ’ প্রবন্ধটি অনেকটা জানা তথ্যের ভিত্তিতে রচিত হলেও গুরুত্বপূর্ণ  হয়ে উঠেছে মূল্যায়নের  স্বাতন্ত্র্যে। দুই কবির  সাহিত্য রচনার পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা, বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁদের ধারণার নৈকট্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা- স্নেহের সম্পর্কের দৃঢ়তা পর্যালোচনা করেছেন। আর সবশেষে তাঁর মূল্যায়ন, ‘বাংলাদেশের বাঙালির বিশেষ গর্ব ও অহঙ্কারের বিষয় এই দুই কবির কবিতা-গান-নাট ও অন্যান্য রচনা তাঁদেও নিজস্ব রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনন্য অবদান রেখেছে। আধুনিক বাঙালির মানসভূমি (mindset) নির্মাণেও এই দুই কবির সাহিত্য নিরন্তর সক্রিয় উপাদান যোগাচ্ছে। এই দুই কবির সাহিত্যে বাঙালির রাষ্ট্রসাধনা, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, বহুত্ববাদিতার বোধ এবং ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বদর্শনে (worldview) গঠনে গুরুতক্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সেজন্যই বাঙালি এই দুই কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় আপ্লুত।’

বাংলাদেশে রবীন্দ্রবিতবর্ক নিয়েও তিনি বিশ্লেষণী আলোচনা করেছেন। কেবল মৌলবাদীরা নয়, বামপন্থীরাও রবীন্দ্রনাথকে ইংরেজ-সমর্থক বলে সমালোচনা করেছে। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধেও সময় বেতাওে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুদ্ধের পরে জনগণের দাবির ফলে বেতারে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার শুরু হয়। ১৯৬৭ সালে তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দীনের ফরমানে বেতার-টিভিতে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধ করা হয়। এর প্রতিবাদে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা  বিবৃতি দেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন ড. মুহম্মদ কুদরাত এ খুদা, কাজী মোতাহার হোসেন, সুফিয়া কামাল, জয়নুল আবেদিন, মুহম্মদ আবদুল হাই, মুনীর চৌধুরী, খান সরওয়ার মুরশিদ, সিকান্দার আবু জাফর, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আহমদ শরীফ, নীলিমা ইব্রাহিম, শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, ফজল শাহাবুদ্দীন, আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রমুখ। লেখক বলেছেন এই বিবৃতি ছিল ১৮ জনের। এখানে পূর্ণ নাম আছে ১৭ জনের আর ‘জনাব এম এ’  লেখা আছে একজনের নাম হিসেবে। এটি হবে এম এ বারী। এটা মুদ্রণপ্রমাদ হতে পারে। তবে আহমাদ মাযহার ‘আমাদেও দুঃসময়ের রবীন্দ্রনাথ’ নামের এক প্রবন্ধে বিবৃতিদাতার সংখ্যা ১৯ বলে জানিয়েছেন। উপর্যুক্ত ১৮ জন ছাড়া মুস্তফা নূরউল ইসলামও স্বাক্ষর করেছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।  যাই হোক এই বিবৃতির বিপক্ষে  সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন-সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষক বিবৃতি দেন। এরপর ৪০ জন বুদ্ধিজীবী রবীন্দ্রসংগীত প্রচার নিষেধাজ্ঞার পক্ষে বিবৃতি দেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ বরকুতুল্লাহ, আবুল মনসুর আহমদ, মোহাম্মদ মোদাব্বের, কবি আহসান হাবীব, কবি ফররুখ আহমদ, কাজী দীন মুহাম্মদ, কবি আশরাফ সিদ্দিকী, কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন, কবি তালিম হোসেন, শাহেদ আলী, আনম বজুলর রশীদ, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ, সানাউল্লা নূরী, কবি আবদুস সাত্তার, শিল্পী কাজী আবুল কাসেম,  মোস্তফা কামাল,  মোহাম্মদ নাসির আলী, কবি জাহানারা আরজু, হোসনে আরা, মাফরুহা চৌধুরী, আখতারুল আলম। এঁদের মধ্যে  আনম বজলুর রশীদ ও আশরাফ সিদ্দিকী রবীন্দ্রনাথের উপর গ্রন্থ রচনা করে নিজের চিন্তাগত অবস্থান  পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। পরবর্তীকালে আর কোনো প্রতিক্রিয়াশীল কর্মকা-ে জড়িত হননি বলে, কাজী আবুল কাসেম ও কবি আহসান হাবীবের এই রবীন্দ্রবিরোধিতা অনেকটা বিস্মৃত হতে চলছে। কিন্তু অন্যরা শেষতক প্রগতির বিরুদ্ধ শিবিরেই অবস্থান করেছেন। এই বিতর্ক ছাড়াও ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় এবং ১৯৭৩ সালে টেলিভিশনে আহমদ শরীফের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে যেসব বিতর্ক হয়, তা নিয়ে লেখক আলোচনা করেছেন। তথ্যবহুল এই প্রবন্ধটি আমাদের রবীন্দ্রবিতর্কের স্বরূপ উন্মোচনে সহায়ক হয়েছে। এছাড়া ‘রবীন্দ্রনাথ: মূল্যায়ন সম্পর্কে দুটি কথা’ এবং ‘বিপরীত স্রোতে রবীন্দ্রনাথ’ নামের প্রবন্ধদুটিও শামসুজ্জামান খানের স্বচ্ছ রবীন্দ্রচিন্তার  বাহক। রবীন্দ্র-মূল্যায়নের এই নতুন ব্যাখ্যার মাধ্যমে শামসুজ্জামান খান হয়ে উঠেছেন প্রকৃত এক রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ।

মন্তব্য: