শিল্প সাহিত্যের ছোটকাগজ টঙ।। শিকদার ওয়ালিউজ্জামান

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

টঙ। শিল্প সাহিত্যের ছোটকাগজ। দ্বিতীয় সংখ্যা। প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০১৫। সম্পাদক উপল বড়ুয়া ও কুহন সাধু। টঙ এর এ সংখ্যার প্রচ্ছদ করেছেন অরণ্য শর্মা। কাগজটি খড়িমাটির তদারকিতে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত। ই- মেইল: upalbarua10@gmail.com সম্পাদকীয়’র স্বীকারোক্তি, টঙ নির্দিষ্ট কোন বিষয় বা তত্ত্বের উপর কাজ না করে সমকালীন সাহিত্য কোন পথে আছে বা এগুচ্ছে সেই বিষয়ের সন্ধানেই চলমান এই সংখ্যা। এটি কোন গোষ্ঠির পত্রিকা নয়। বরং টং সর্ব সাধারণের।
টঙ আশি’র দশকের দুই খ্যাতিমান কবি, যাঁরা ছোটকাগজ ‘লিরিক’ সম্পাদনার সাথে জড়িত এবং উত্তোরাধুনিক চর্চার অন্যতম পথিকৃত, এজাজ ইউসুফী ও জিললুর রহমানকে উপস্থাপন করেছে। মাত্র ৭২ পৃষ্ঠার কাগজ হলেও পাঠক কেবল চোখ বুলালেই কাগজটি আয়ত্ব করতে পারবেন না। নিশ্চয়ই মগজ খাটাতে হবে এর প্রতিটি পৃষ্ঠায়। টং এর শুরু হয়েছে কবি জিললুর রহমান এর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। একটি প্রাণবন্ত সাক্ষাৎকার। বারবার পাঠ করার স্পৃহা জাগবে এটি পাঠে। সাহিত্যের অনেক শাখা যেমন- ঐতিহ্য, ইতিহাস,  সাহিত্যের কেন্দ্রমুখিতা-কেন্দ্রবিমুখতা, কবিতার বিবর্তন, আধুনিকতা, উত্তরাধুনিকতা, রিলিজিয়াস উপকথা, নাগরিকায়ন, স্মৃতিকাতরতা, কবিতায় বিনির্মাণ, আন্তর্বয়ান, পোস্টমডার্নিজম, সাম্রাজ্যবাদ-ঔপনিবেশবাদ, আধুনিকতার বিপরীতে হতাশা-একাকীত্ব-নিঃসঙ্গতা-এনার্কিজম। মর্ডানিটির পিঠেপিঠি আইসোলেশন, বুর্জোয়াজিম, পুঁজিবাদ, শিকড়ের সন্ধান, সাহিত্যে অনুকরণ আর পুনরাবৃত্তি, সাহিত্যের প্রাচীন ও মধ্যযুগ, বাঙালি ইতিহাসের মর্মকথা, মহাভারতের অন্তর্বয়ান, মিথআশ্রিত মধ্যযুগীয় সাহিত্য, ব্রিটিশদের হাত ধরে আসা আধুনিকতা… এমন অনেক বিষয়।
এজাজ ইউসুফী’র ‘বিনির্মাণ’, আশির দশকের অন্যতম অনবদ্য কবিতার উপর আলোচনা করেছেন নব্বইয়ের কবি পুলক পাল। আলোচনাটি তথ্যসমৃদ্ধ হলেও আলোচক আলোচনাটিকে পাঠকের জন্য আরো কিছুটা সহজ এবং সাবলীল করতেই পারতেন।

গদ্যবিভাগে শফিউল আজম মাহফুজ প্রবন্ধ লিখেছেন ‘অঁরে দ্য বালজাক এবং বাহুবন্ধনে ভ্রাতৃগণ’ শিরোনামে। Realism এর প্রবক্তা ফরাসী ঔপন্যাসিক ও নাট্যকর বালজাক এর জীবনী ও তাঁর সৃষ্টিশীলতাকে তিনি বয়ান করেছেন সুন্দরভাবেই। গল্প করার ভঙ্গিমায় তিনি বালজাকের ক্যারিশমাকে বর্ণনা করেছেন, যে ক্যারিশমাতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন চার্লস ডিকেন্স, এডগার এলান পো, ফিউদোর দস্তয়ভস্কি, অস্কার ওয়াইল্ড, গুস্তাভ ফ্লোবার্ট, হেনরি জেমস, উইলিয়াম ফকনার প্রমুখ।

রাজিবুল আলম আলোচনা করেছেন জিয়া হায়দার রহমান এর ‘ইন দ্যা লাইট অব হোয়াট উই নো’ নিজের আলোতে আমরা যা জানি  উপন্যাসের উপর। আলোচনায় তুলে এনেছেন উপন্যাসের অন্তর্বয়ান যাতে আলোচিত উত্তর-উপনিবেশবাদ, বিশ্ব-রাজনীতি, গোলকায়ন, পুঁজিবাদ ও বাংলাদেশ।
ফুটিয়ে তুলেছেন নির্বাসন, বিচ্ছিন্নতাবোধের অনুভব ও ব্যাক্তিক মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার চিত্র। কবিতার বইয়ের আলোচনা আমরা বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক বা ছোট কাগজে দেখি। কিন্তু গল্প বা উপন্যাস বা নাটকের আলোচনা নিতান্তই কম। বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বমঞ্চে দাঁড় করাতে অবশ্যই সমালোচনা ও অনুবাদের কোন বিকল্প নেই। টঙ থেকে আমরা তেমন ধারনাও পাই।

কবিতাপর্বে ভাগ্যধন বড়ুয়া, আরণ্যক টিটো, সজল সমুদ্র, অরণ্য শর্মা, অরবিন্দ চক্রবর্তী, রুহুল মাহফুজ জয়, শিমন রায়হান, রাসেল আহমেদ, নিষাদ নয়ন, অজিত দাশ, তানজিন তামান্না, কুহন সাধু, ইয়ার ইগনিয়াস, অরিত্র আরাফাত ও রাফসান গালিব এর কবিতা পাঠকের জন্য ভালোলাগা রেখে যায়।

বই আলোচনায় মোশতাক আহমদ এর ‘ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি’ কাব্যগ্রন্থের উপর ‘একজন কবিকে আমরা কতটুকু জানি’ শিরোনামে আলোচনা করেছেন উপল বড়ুয়া। পাঠকের জন্য ভাবনার জায়গা রেখে সংক্ষিপ্ত পরিসরে প্রাণবন্ত ও তথ্যবহুল আলোচনা করেছেন। বইয়ের দুটো চুম্বকলাইন-
পদ্মপুকুরের বদলে পেলাম পদ্যপুকুর
সেই পুকুরভর্তি নির্বিরোধ কথাবার্তা (পদ্যপুকুর)
উপল বড়ুয়ার ছোটগল্প ‘উত্থিত শিশ্নের রাগ’ একটি Ironic story.

পরিশেষে এ কথা বলা যায়, টঙ নিঃসন্দেহে স্বার্থক ছোটকাগজ হওয়ার দাবি রাখে। পাঠকের জন্য চিন্তা ও বার্তা রেখে যেতে টঙ এর ভূমিকা প্রশংসনীয়। টঙ আরো জানান দেয়, পত্রিকার আকৃতি কোন ব্যাপারই না। ভেতরকার রশদই লিটলম্যাগপ্রেমিদের জন্য মুখ্য।

মন্তব্য: