কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

হেনরী স্বপন

বরে গুলাম আলির ঠুমরি বাজছে…

এখন বৃষ্টি নামবে। গগণে গরজে মেঘ…। শিশিরের শব্দের মতন…চেতনার আবেগও কি কামনার চেয়ে বেশী হয়। বৃষ্টির উপলব্ধিতে গ্লভস্ হেলমেট পরে সচিন এখন মাঠে নামবেন। নাকি নগর-রাষ্ট্রের উৎসারণ কেবল… লেফট রাইট লেফট…। তাহলে শহীদ কাদরীর কবিতার অন্তর্দৃষ্টিতে কোন সৈনিকের কুচকাওয়াজ বেজে ওঠে আমাদের প্যারেড গ্রাউন্ডের ঘাসে ঘাসে-মাঠে-প্রান্তরে-

‘ভয় নেই, ভয় নেই

ভয় নেই…আমি এমন ব্যবস্থা করবো

একজন কবি কমান্ড করবেন বঙ্গোপসাগরের সবগুলো রণতরী

এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায়

সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক, প্রিয়তমা !’

কাদরী যদিও কম লিখেছেন কিন্তু ওর কাব্যের লিপ্ততা বাংলা কবিতাকেই কমান্ড করে চলেছে-এখনও-আজও।

তাই’তো সুদূর প্রবাসে থেকেই বলেছেন, ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’-কবির শেষ গ্রন্থের-এই প্রতিশ্রুতিবোধ-কেবলই কি একজন মৌল কবির বহুমাত্রিক উম্মোচন। না-কী স্বাধীনতা-স্বদেশ, প্রকৃতি-প্রতিবেশ এবং আত্মমগ্নতার উপাদানকে সম্মুখে রেখে-দেশাত্মবোধের ছুঁয়ে দেখা। ব্যক্তি থেকে সামাজিক অন্যায়ের বৃহৎ পটভূমিতে কাদরীর কবিতা যেন সেই ক্রোধ-প্রশান্তি-গভীরতার খোঁজে যাবতীয় মূর্ততার দিকে এগিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতায় সামষ্টিক সর্বদা। ফলে তার কবিতায় নগর বাক-বাক্য আত্মনির্মাণের ভাষায় অপরিহার্য। কেবল সাব-অলটার্ন নয়। অকৃত্রিম উজ্জ্বলতায় আন্তর্জাতিকও…কেননা কাদরীর উচ্চারণে রয়েছে সেইসব মূল্যবোধের নিঃশব্দ লড়াই…

‘একটি আংটির মতো তোমাকে পরেছি স্বদেশ

আমার কনিষ্ঠ আঙুলে, কখনও উদ্ধত তলোয়ারের মতো

দীপ্তিমান ঘাসের বিস্তারে, দেখেছি তোমার ডোরাকাটা

জ্বলজ্বলে রূপ জ্যোৎস্নায়।’

এমোনি জ্যোৎস্নায় ফুটে ওঠে সেই প্রিয়তমার মুখ। যাকে দেখে কবি বললেন, ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’-(এটি কবির প্রবল জনপ্রিয় একটি কাব্যগ্রন্থের নাম) স্বদেশউদ্দীপক এই সর্বনাম কেবল সর্বজ্ঞ শরীর ছুঁয়ে থাকে দেশময়-একটি বাংলাদেশ। যে দেশ একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী ও এ-দেশের ঘাতকদের হাতে রক্তাক্ত হয়েছে। ধর্ষিত হয়েছে। সেইসব ভয়াবহ বেদনার উপমা-দুর্দান্ত এই কবির অন্তরে কখনই বহন করা সম্ভব নয় বলেই লিখেছেন, সেইসব বেদনার বাতাসের কথা-

‘যদিও বধ্যভূমি হল সারাদেশ-রক্তপাত আর্তনাদে

হঠাৎ হত্যায় ভরে গেল বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তর,

অথচ সেই প্রান্তরেই একদা ধাবমান জেব্রার মতো

জীবনানন্দের নরম শরীর ছুঁয়ে উর্ধ্বশ্বাস বাতাস বয়েছে।’

এভাবেই কাদরীর কবিতায় ব্যতিক্রমী-বিষয় ভাষা উপমা ছন্দ উৎপ্রেক্ষা জড়ো করে যুক্তি উত্থাপিত হয়। স্বভাবতই কম লিখেছেন বলেই এমন সব সপ্রতিভ গভীরতা তার সমস্ত কবিতায় মুড়কি ধানের খৈ ফুটে ফুটে ওঠে। ৪টি মাত্র কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অনেক কম লিখেও-বৃহৎ আয়তনে কবির পাঠক উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে আছে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের ধু ধু পর্যন্ত বিস্তীর্ণ আকাশ।

বস্তুত জীবন অন্বেষণে কবি অনুঢ়া বৃষ্টি… স্ফীত রমণী দেখেছেন-জ্যোৎস্নায়। সকাল দেখেছেন সূর্যের পাশে জননীর বুকে স্তন ক্যান্সার। উঠোনজ্যোৎস্নায় কবির গন্তব্যের ইশারায় আশ্চর্য সব কবিতার কথা-তিনিও জানেন। নিশ্চিতভাবেই জানেন, দুর্ভিক্ষ দাঙ্গা যুগ্ধ গণহত্যার বিউগল শুনেও আত্মস্থ লড়াই কি এবং কতটা। তা-ও সে জানতেন বলেই-বলেছেন, ‘আমি করাত কলের শব্দ শুনে মানুষ’। যে মানুষ চিরকাল সেই অবিশ্বস্য সৌন্দর্যের কবি এবং কবি…হয়েই বেঁচে থাকবেন-

‘বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা

মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ

কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা

ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ…’

মন্তব্য: