বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক হয়েও যারা গুপ্তচর ছিলেন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

মুসাফির নজরুল

কবি-সাহিত্যিক হয়েও গুপ্তচরের ভুবনে বিচরণ করেছেন অনেকেই। বিশ্বসাহিত্যের এমন কিছু দিকপালের নাম শোনা গেছে, যাঁরা জীবনের কিছু সময় হলেও গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে নিজেদেরকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। এদের মধ্যে আছেন ক্রিষ্টোফার মারলো, স্যার কম্পটন ম্যাকেনজি, ড্যানিয়েল ডিফো, ডেভিড কর্নওয়েল, এরস্কাইন চাইল্ডার্স, গ্রাহাম গ্রীন। এছাড়াও অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডস ওয়ার্থ ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত থেকে বেশ কিছু দিন গুপ্তচরবৃত্তি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। অবশ্য এ বিষয়ে এদের কারো কারো স্বীকারোক্তি আছে, আবার কারো নেই। তবে এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ এদের সম্পর্কে জানা যায় যাতে ধারণা করা মোটেই অসম্ভব নয় যে, তারা গুপ্তচরের জগতে বিচরণ করেছিলেন।

উইলিয়াম ওয়ার্ডস্ ওয়ার্থ: উনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত ইংরেজ রোমান্টিক কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডস্ ওয়ার্থ (১৭৭০-১৮৫০) প্রকৃতির কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। বিশ্বজোড়া এ সুখ্যাতি তাঁকে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকারী এ মহান কবি ছিলেন পিতা-মাতার দ্বিতীয় সন্তান। ১৭৯৮ সালে বন্ধু কবি স্যামুয়েল কোলরিজ-এর সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় ‘লিরিক্যাল ব্যালেড’ প্রকাশ করে ইংরেজী কাব্য সাহিত্যের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করেন। তাঁর ‘লিরিক্যাল ব্যালেড’ ও ‘ড্যাফোডিলস্’ প্রকৃতি প্রেম বন্দনায় উদ্ভাসিত। এখানে প্রকৃতি যেন তাঁর কবি আত্মার, কবি মানসের চিরন্তন সুর গেয়ে উঠেছে। এ সময়ে তিনি গ্রাসমেয়ারের বাড়িতে বসবাস করছিলেন। দীর্ঘ নয় বছরের এ বসবাস তাঁর কাছে ধীরে ধীরে বিষাক্ত হয়ে ওঠে। কারণ এখানে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাতে পায়ে খিল ধরার অবস্থায় পড়েছিলেন। ফলে ১৮০৮ সালে তিনি এ বাড়ী ত্যাগ করেন, গ্রাসমেয়ারের এ বাড়ী আজও পর্যটক তথা ভক্তদের শ্রেষ্ঠ দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত। প্রতিবছর প্রয় ৮০ হাজার ট্যুরিষ্ট সেখানে ভ্রমণ করে। তাঁর রাজনৈতিক আত্মজীবনচরিত ‘দ্য প্রিলুইড’ এ সময়ের রচনা। অসংখ্য কবিতা ও উৎকৃষ্ট সনেটের মাধ্যমে তিনি প্রকৃতির রূপÑরসÑগন্ধÑএককথায় যাবতীয় সৌন্দর্যকে কাব্যময় করে তুলেছেন। ছন্দবদ্ধ বাক্যের গাঁথুনির চমৎকারিত্ব সৃষ্টিতে কবি ওয়ার্ডস্ ওয়ার্থ অসাধারণ কবিত্বশক্তির পরিচয় দিয়েছেন। 

ওয়ার্ডস ওয়ার্থের গ্রাসমেয়ারের বাড়ীকে কেন্দ্র করে তাঁর সমুদয় সাহিত্যকর্মকে একত্রীকরণের জন্য ১৮৯১ সালে একটি ট্রাষ্ট গঠন করা হয়। বাড়ীটি বর্তমানে মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, প্রায় ৫০ হাজার পান্ডুলিপি, বই-পুস্তক সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে। এসব পান্ডুলিপি সংরক্ষণের জন্য দু’টি বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ‘লেক ডিস্ট্রিক ন্যাশনাল অথরিটি’ মনে করে ওয়ার্ডস ওয়ার্থের যাবতীয় সাহিত্য কর্মকে সংরক্ষণের জন্য এ স্থানটি উত্তম নয়। এই অথোরিটির একজন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছেÑট্রাষ্ট কর্তৃক নির্মিত টাওয়ারগুলো নিতান্তই সাদামাটা। 

উচ্চ পদস্থ অফিসার রাকেন নাথম্যান মনে করেন এটি কেসউইস, অ্যামব্রেসাইড বিশ্ববিদ্যালয় বা লন্ডনের যে কোন বিল্ডিংয়ের চেয়ে দৃষ্টিনন্দন নয় এবং এখানে যে সংগ্রহ তা রাখার অনুপযোগী। কবির অভিভাবক স্থানীয় এক ব্যক্তি লিখেছেন ‘‘দি ওয়ার্ল্ড ইজ টু মাচ উইথ আচ, লেট এ্যান্ড সুন। গেটিং এÐ স্পেন্ডিং, উই লে ওয়েস্ট আওয়ার পাওয়ারস্”। ওয়ার্ডস ওয়ার্থ ট্রাষ্টের কমার্শিয়াল ম্যানেজার ব্রিয়ান এটন বলেছেন যে, আমরা এটিকে শিল্প কারখানার অংশ হিসেবে মনে করি না, তবে এখানে অত্যাধুনিক এয়ারকুলার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে কারও বিতর্ক নেই এবং লন্ডনে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

সম্প্রতি ওয়ার্ডস্ ওয়ার্থ এর ওপর বিশেষজ্ঞ বলে পরিচিত ইন্ডিয়ানা বিশ্বদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের  অধ্যাপক কেনিথ জন ষ্টোন ওয়ার্ড ওয়ার্থ-এর জীবনের চাঞ্চল্যকর তথ্য সম্বলিত হাজার পৃষ্ঠার একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। এই গ্রন্থটিতে বলা হয়েছে, ওয়ার্ডস ওয়ার্থ একজন গুপ্তচর ছিলেন। বিদেশের মাটিতে অবস্থানকালে তিনি ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করেছেন। ব্রিটেনের যে সব শিক্ষাবিদ এই গ্রন্থটির গ্রুফ কপি দেখেছেন তাদের প্রতিক্রিয়া উৎসাহব্যঞ্জক। বইটিতে বলা হয়েছে, তিনি ফরাসী বিপ্লবের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন এবং সে সময়কার বিপ্লবী কবি সাহিত্যিকদেরকেও তাঁর অনুগামী করেছেন। অধ্যাপক জন ষ্টোন তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির যে সমন্ত অভিযোগ এনেছেন তা বিশেষজ্ঞ মহলকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ, এর প্রমাণ হিসেবে এমন কিছু কিছু তথ্য আবিস্কার করেছেন যা ফেলে দেবার মত নয়। এর মধ্যে একটি হল, ফরাসী বিপ্লবের অব্যবহিত পরে ১৭৯৯ সালে জার্মান সিক্রেট সার্ভিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় একটি ড্রাফ মিঃ ওয়ার্ডস ওয়ার্থের নামে পরিশোধ করেন। এ ড্রাফে এপ্রিল মাসে ৪.১১.১৩ এবং ১৫ তারিখে যথাক্রমে ফোর্ড-৬০ সিলিং ফোর্ড-২০০ সিলিং মিঃ ওয়ার্ডস ওয়ার্থ-৯২/১২ সিলিং ফোর্ড-১৭০ সিলিং এবং ১৮৫ স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান ডিউক অব পোর্টল্যান্ডের জার্নালে জমা দেয়া মোটা অঙ্কের অর্থ পরিশোধ সংক্রান্ত এন্ট্রি তুলে ধরেছেন। এন্ট্রিতে কবি ওয়ার্ডস ওয়ার্থের সঙ্গে আরও দু’জনের নাম রয়েছে। একজন ছিলেন জার্মানীতে অবস্থানরত হামবুর্গে ব্রিটিশ চার্জ দ্য এফিয়ার্স কাউফোর্ড। এ সময়ের কিছুদিন পর তার বন্ধু কবি স্যামুয়েল কোলরিজের সঙ্গে এক পদাযাত্রায়ও অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে ম্যাজিষ্ট্রেট রিচার্ড ফোর্ডের কথা বলা হয়েছে। জার্নালটি পাঁচমিশালী পত্রিকার একটি ভলিউমে ছিল। ১৯৯৩ সালে গ্রাসমেয়ারের ওয়ার্ডস ওয়ার্থের বাড়ীর সামনে ভলিউমটি বিক্রি হলে সেই জার্নাল এবং এন্ট্রির কথা প্রকাশ পেয়ে যায়। তবে অধ্যাপক জন ষ্টোন একথাও উলে­খ করেছেন যে, নজরদারির জন্য যে এজেন্টকে নিয়োগ করা হয়েছিল ; তিনি যেরূপ আশঙ্কা করেছিলেন- হয়ত সে ধরনের কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে, এরা ভিন্নমতাবলম্বী ইংরেজদের একটা গোষ্ঠীমাত্র। তবে যে কোন সময়ে ঝামেলা বাধাতে পারে। নজরদারির কারণে সরকারী খাতায় ওয়ার্ডস ওয়ার্থের নাম চিরস্থায়ীভাবে লেখা হয়ে যায় কিন্তু ঘটনাটা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। অধ্যাপক জন ষ্টোন তাঁর গবেষণার বলেছেন, সম্ভবত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কোন ভাবপ্রবণ সংস্থা ওয়ার্ডস ওয়ার্থের জার্মানিতে অবস্থানকালীন সময়ে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছিল। তবে জন ষ্টোন এও উলে­খ করেছেন যে, জার্মানির মাটিতে অবস্থানকালীন ওয়ার্ডস ওয়ার্থ জোসেফ এন্টোইন দ্য লিউটার নামের একজন পরিচিত স্পাইয়ের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করেছেন।

দলিলে ক্রাউফোর্ড ও ফোর্ড ছাড়াও ওয়ার্ডস ওয়ার্থের নামে-৯২ পাউন্ড ১২ সিলিং পরিশোধের কথা লেখা ছিল। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা ওয়ার্ডস ওয়ার্থের জার্মানিতে অবস্থান কালে পররাষ্ট্র দপ্তরের ম্যাসেঞ্জার সার্ভিসের জন্যই হয়তো বা এ খরচটি হয়েছিল। 

অধ্যাপক জন ষ্টোন অবশ্য তাঁর গুপ্তচরবৃত্তির প্রমাণস্বরূপ আরেকটি কথাও দাঁড় করিয়েছেন। তাহলো, ওয়ার্ডস ওয়ার্থের বোন ডরিথি বিবেকবুদ্ধির পরিচায়ক যে জার্নালটি প্রকাশ করতেন, তা ১৭৯৯ সালের ফেব্রæয়ারী ও মার্চ মাসের একটি সংখ্যাও বের হয়নি। তাঁর ধারণা, ওয়ার্ডস ওয়ার্থ এ সময়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে লিপ্ত ছিলেন এবং একারণেই ডোরিথি ঐ সময়ে জার্নালটি বের করতে পারেননি। অধ্যাপক জন ষ্টোন আরও উল্লেখ করেছেন যে, এ সময়ের দুই মাস ওয়ার্ডস ওয়ার্থ ও ডরোথি কি কাজে ব্যস্ত ছিলেন সে সংক্রান্ত কোন রেকর্ডপত্রও নেই। 

ওয়ার্ডস ওয়ার্থ জার্মানি থেকে ফিরে এসে ডানপস্থী রাজনীতির দিকে আরো ঝুকে পড়েন। এর পাঁচ বছর পর ওয়ার্ডস ওয়ার্থ বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। পাঁচ সন্তানের পিতা হন তিনি। ধীরে ধীরে জীবনে সমৃদ্ধিতে পরিপুর্ণ হয়। 

অধ্যাপক জন ষ্টোনের এ গবেষণার মূল ভিত্তি আসলে পাবলিক রেকর্ড অফিসে রক্ষিত পুলিশের এন্ট্রি বুক। তিনি অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, তবে গোয়েন্দা বাহিনীর খাতায় নাম উঠতে পারে তিনি এমন লোক ছিলেন বলে মনে হয় না। 

অধ্যাপক জন ষ্টোন মনে করেন, যারা আমার যুক্তির বিরোধিতা করবেন তাঁদের অবশ্য এ যুক্তি খণ্ডন করতে বেগ পেতে হবে। গুপ্তচর হিসেবে চাঞ্চল্যকর কিছু করার ক্ষমতা ওয়ার্ডস ওয়ার্থের ছিলো তিনি বলেছেন যে, ওয়ার্ডস ওয়ার্থ যে গুপ্তচর ছিলেন-এটাই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ক্রিষ্টোফার মারলোঃ ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট নাট্যকর ক্রিষ্টোফার মারলো কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় গুপ্তচরবৃত্তি গুরু করেন। রাণী প্রথম এলিজাবেথের মুখ্য সচিব এবং বৃটেনের জাতীয় সিক্রেট সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফ্রান্সিস ওয়াল সিঙ্গাম তাকে রিক্রুট করেছিলেন। তার গুপ্তচরবৃত্তির প্রধান টার্গেট ছিল রিফর্মেশনের বিরোধিতাকারী ক্যাথলিক সম্প্রদায়। ক্যাথলিক সমর্থকদের পরিচয় নিয়ে তিনি ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশে তৎপরতা চালিয়েছিলেন। ১৫৯৩ সালের মে মাসে তিনি বন্দী হন এবং জামিনে মুক্তি পান। এর কিছুদিন অব্যবহিত পর তাকে দক্ষিণ লল্ডনের এক গুড়িখানায় হত্যা করা হয়। হত্যার কারণ জানা যায়নি। ধারণা করা হয়, সম্ভবত তাকে ডবল এজেন্ট হিসেবে সন্দেহের কারণে হত্যা করা হয়েছিল। 

 স্যার কম্পটন ম্যাকেনজিঃ স্যার ম্যাকেনজি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গ্রীস ও সিরিয়ায় ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬ এর এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি হুইস্ক গ্যালোরে‘র লেখক হিসেবে সর্বাধিক আলোচিত। লল্ডনের উধ্বতন কর্মকর্তা স্যার বেসিল জাহারফ-এর অভিযোগ, তাকে কখনো ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব ছিল না। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “গ্রীক মেমোরিজ এ এমআই-৬ সংক্রান্তি কিছু কিছু গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ, ১৯৩৩ সালে তাঁকে অফিসিয়াল সিক্রেসি এ্যাষ্ট-এ দোষী সাব্যস্ত করে জারিমানা করা হয়। এই শাস্তির জবাবে তিনি “ওয়াটার অন দ্যা ব্রেইন” রচনা করে, যা হচ্ছে গোয়েন্দা সার্ভিসগুলোর উপর অসাধারণ সুন্দর এক ব্যাঙ্গাত্মক গ্রন্থ। ‘গ্রীক মেমোরিজ’ শুধুমাত্র জনসাধারণের জন্যই সৃষ্টি করেছিলেন। 

ড্যানিয়েল ডিফোঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ব্রিটিশ সরকারে সবয়েয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুপ্তচরদের অন্যতম ছিলেন ড্যানিয়েল ডিফো। তিনি অমর গ্রন্থ ‘রবিনসন ক্রুসো’ মোল ফ্যালান্ডার’ রচনার মধ্যদিয়ে সুখ্যাতি অর্জন করেন। জ্যাকোবাইড অর্থাৎ রাজা দ্বিতীয় জেমস্ সমর্থকদের মধ্যে অনুপ্রবেশে ব্যাপারে তার মত দূরদর্শী খুব অল্পই ছিলো। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন যে, রানী এ্যান বেশকিছু সম্মানজনক অথচ গুপ্তকার্যক্রমে তাকে নিযুক্ত করেছিলেন। রানী এ্যানের উত্তরসুরি রাজা প্রথম জর্জের আমলে তাকে সরকারের প্রধান সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে সারাদেশ ঘুরে দেখতে পাঠানো হয়েছিল।  তিনি ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়িয়ে অন্যান্য গুপ্তচর সংগ্রহ করেছিলেন। 

   

ডেভিড কর্নওয়েলঃ ডেভিড কর্নওয়েল একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক। তার বইয়ের পেপার কভারে পরিচিতির জায়গায় প্রায়ই উলে­খ করা হয়ে থাকে যে, তিনি পাঁচ বছর ব্রিটিশ ফরেন সার্ভিসে ছিলেন। আসলে এর দ্বারা তাঁর এমআই-৬ এর ক্যারিয়ারের কথাই বুঝানো হয়ে থাকে। এ হলো একটা অপ্রিয় ব্যাপারকে ভদ্রস্থ করে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা। ১৯৮৩ সালে এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ডেভিড কর্নওয়েল বলেছিলেন ‘ আমি মাতাহারি ছিলাম না। হিটলারের চার্চিল ছিলাম না। কিন্তু আমি যদি ভান করার চেষ্টা করি যে সমারসেট মম (তাকেও এমআই-৬ করেছিল) গ্রাহাম গ্রীন ও আরও অন্যান্য লেখকের মতো আমি কিছুকালের জন্য ঐ কাজে নিয়োজিত ছিলাম না, তাহলে সেটা নিবুদ্ধিতার পরিচয় হবে। এমআই-৫ এর সঙ্গে কিছুদিন কাজ করার পর কর্নওয়েল এমআই-৬ এর যোগ দেন। তাকে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে জার্মানীর বন-এ পাঠানো হয়েছিল। 

এরস্কাইন চাইল্ডার্সঃ ক্লাসিক গোয়েন্দা উপন্যাস ‘দি রিড্ল অব দ্য স্যান্ড’ এর রচয়িতা এরস্কাইন চাইল্ডার্সও একজন গুপ্তচর ছিলেন। ১৯০৩ সালে তার এই বিখ্যাত গ্রন্থটি প্রকাশ হওয়ার পর ব্রিটিশ নৌ-বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ তাকে রিক্রুট করেছে। ‘দি রিডল অব দ্য স্যান্ড’ এ তিনি জার্মানীর ক্রমবর্ধমান নৌ-শক্তির বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছিলেন। নৌ-বাহিনী জার্মানীর উপক‚ল সংক্রান্ত তাদের পুরনো চার্ট বদলনোর ব্যাপারে চাইল্ডার্সের সাহায্য চান। চাইল্ডার্স আইরিশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আগে ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগে থাকাবস্থায় তিনি অস্ত্রশস্ত্রসহ একটি প্রমোদতরীতে করে আয়ারল্যাল্ডের দক্ষিণে পালিয়ে যান। ১৯৯২ সালে তাকে গুলী করে হত্যা করা হয়। 

গ্রাহাম গ্রীনঃ ‘দি কনফিডেন্সিয়াল এজেন্ট’ এবং ‘দি থার্ড ম্যান‘ গ্রন্থের রচয়িতা গ্রাহাম গ্রীনও গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গ্রীন লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এমআই-৬ তাকে রিক্রুট করে। অতঃপর গ্রীনকে সিয়েরালিওনে পাঠানো হয়। সেখানে গুপ্তচরবৃপ্তির ফাঁকে তিনি ‘মিনিষ্ট্রি অব কিয়ার’ এবং ‘দি হার্ট অব দি ম্যাটার’ নামে দুটি গ্রন্থ লেখেন। গ্রাহাম গ্রীন তার বন্ধু কিম ফিলবি’র আত্মজীবনী ‘মাই সাইলেন্ট ওয়ার’ এর মুখবন্ধে লিখেছিলেন, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে দেশের চেয়ে বড় কোন ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। পরবর্তীকালে এমআই-৫ এর পক্ষ থেকে এমআই-৬ কে বলা হয় যে, ‘আওয়ার ম্যান ইন হাভানা’ বইটির মধ্যে কিছু গোপন তথ্য ফাঁস করার দায়ে গ্রাহাম গ্রীন-এর বিচার হওয়া উচিত। গ্রাহাম গ্রীন একজন সুখ্যাতিমান লেখক হিসেবে ইতিপূর্বেই যশ কুড়িয়েছিলেন।

মন্তব্য: