অন্য ভূখণ্ডের চার কবির কবিতা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

অনুবাদ : মুসাফির নজরুল

আলফ্রেড টেনিসন

অশ্রুবিন্দু বৃথা অশ্রুবিন্দু

অশ্রুবিন্দু বৃথা অশ্রুবিন্দু, জানি না তারা কি, 

স্বর্গীয় নৈরাশ্যের গভীরতম অনুভূতি থেকে আসা অশ্রুবিন্দু

হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে আসে এবং চোখে জমা হয়ে 

শরতের পরিপূর্ণ মাঠের মত আবির্ভূত হয়, 

এবং চলে যাওয়া চিন্তার সেই দিনগুলো আর নেই।

উজ্জ্বল চাকচিক্যময় জাহাজের নিখুঁত প্রথম নোঙর,

যা আমাদের বন্ধুদের আত্ম উন্নয়ন করে অধঃজগত থেকে,

সব দুঃখগুলো একটি লজ্জায় রক্তিম হয়

মনের অজান্তেই সে গেয়ে ওঠে ;

অতি দুঃখের সুনির্মল সে দিনগুলো কই।

ব্যথাতুর অন্ধকারাচ্ছন্ন আগন্তে গ্রীষ্মের নবাগত

পাখিগুলো আর সুর তোলে না

অনিঃশেষ নির্মিলনে আমার বন্দিশালা দীর্ঘায়িত হয়

দেদীপ্যমান অক্ষিগুলো মুমূর্ষ হয়ে ওঠে ;

খুবই দুঃখের, খুবই অদ্ভুদ সেই দিনগুলো কই।

যখনই মনে পড়ে, মনে হয় মৃত্যুর পরও চুমো দিচ্ছে

আশাহত মূর্ত বেদনাগুলো

যেগুলো শুধুই অন্যের ; প্রেমের মত গভীর

গভীরতর প্রথম প্রেমের মত, এবং বন্য দুঃখে পরিপূর্ণ 

জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সেই দিনগুলো কই। 

সি.এফ.আলেকজেন্ডার

স্বপ্ন

পর্বত শৃঙ্গের সারি পেড়িয়ে পেড়িয়ে,

ধূসর পাথর এবং জলস্রোতে ক্ষয়প্রাপ্ত প্রস্তর খ-,

আকাশ ছোয়া সবুজ দেবদারু পেরিয়ে, ঐ চূড়ার পশ্চিম স্কন্ধে 

শায়িত আমার পরীর দেশ   

অনাবিষ্কৃত এক দর্শকের।

এখানের ফুলগুলো অসাধারণ পদ্মরাগমনি

দর্পণের মত স্বচ্ছ ঝর্ণাধারা,

স্বর্ণমণ্ডিত দূর্গ ঝুলছে বাতাসে

যেন বেগুনী বর্ণের আঙ্গুরের স্তুপ, 

সম্ভ্রান্ত বংশীয় যোদ্ধা আর সুদর্শন অপ্সরী 

বিচরণ করছে নীচে নেমে।   

হাইওয়াথ

পুবের হাওয়া

যৌবনবতী সুশ্রী পূবের হাওয়া 

কুয়াশাচ্ছন্ন সকালকে বহন করে

ধারালো তীক্ষ্ণ রৌপ্যের তীর দিয়ে 

শিকার করে পাহাড় ও উপত্যকাকে।

তার কপালে চিত্রিত

অসাধারণ উজ্জ্বলতম ঘোর লাল ডোরা,

উচ্চ কণ্ঠস্বর গ্রামকে জাগিয়ে তোলে 

গভীর অরণ্যের হরিণ এবং শিকারীকেও। 

নিঃসঙ্গ পূবের হাওয়া বিচরণ করে আকাশে

পক্ষ্মীকূল নিভৃতে গান গায় তার সঙ্গে, 

বয়ে যায় বন্যফুল উদ্যানের মধ্য দিয়ে 

ভরে ওঠে সুগন্ধ মিশ্রিত বাতাস।

গহীন অরণ্য আর জলোচ্ছ্বাসে উথলে উঠা সমুদ্র পেরিয়ে

গানের সুরে চিৎকার করে জানায় তার আগমন বার্তা,

অব্যক্ত বেদনায় হৃদয় আড়ষ্ট হয়ে আসে

যেন অনন্তলোকে সে একান্তই একা।

রক ডালটন

আমার প্রতিবেশী

তার আছে অধিকতর সাদাসিদে স্ত্রী,

তার দুটো ভৃত্য আছে যারা তাকে দেখাশোনা করে

মনোযোগ সহকারে

যারা এ সময় বিড়াল তাড়িয়ে দেয় অন্য পাড়ায়।

তিনি কাজ করেন, প্রচুর পড়েন, প্রত্যহ গান করেন

এবং তারপর তিনি মহিলাদের জিজ্ঞেস করেন ;

তিনি পছন্দ করেন রুটি ও রুটিওয়ালাকে

তিনি জানেনফটবল খেলতে, ভালোবাসেন সমুদ্রকে

তিনি পছন্দ করেন নিজের গাড়িতে চড়তে।

তিনি সঙ্গীতানুষ্ঠানে যান, তার একটি ছোট কুকুর আছে।

তিনি প্যারিসে বসবাস করেন এবং বই লিখছেন

আমার বিশ্বাস এটা ছিল কবিতাগ্রন্থ।

তিনি অবসন্ন মনে পাখিদের নির্জন গোধূলিলগ্নে

নিরন্তর পাহাড়া দিতেন,

তিনি মাসের শেষে দেনা পরিশোধ করতেন

ধর্মীয় কাজে সাহায্য করতেন অবসর পেলেই

এখন তিনি বন্দীশালায়

তিনি একজন সাম্যবাদীও, সুতরাং তারা বলেন…  

মন্তব্য: