মুসাফির নজরুল অনূদিত কবিতা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আলফ্রেড টেনিসন

অশ্রবিন্দু বৃথা অশ্রুবিন্দু

অশ্রবিন্দু, বৃথা অশ্রুবিন্দু, জানি না তারা কি,

স্বার্গীয় নৈরাশ্যের গভীরতম অনুভূতি থেকে আসা অশ্রুবিন্দু

হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে আসে এবং চোখে জমা হয়ে

শরতের পরিপূর্ণ মাঠের মতাে আবির্ভূত হয়।

এবং চলে যাওয়া চিন্তার সেই দিনগুলাে আর নেই।

উজ্জ্বল চাকচিক্যময় জাহাজের নিখুঁত প্রথম নােঙর,

যা আমাদের বন্ধুদের আত্ম উন্নয়ন করে অধঃজগৎ থেকে,

সব দুঃখগুলাে একটি লজ্জায় রক্তিম হয়

মনের অজান্তেই সে গেয়ে ওঠে ;

অতি দুঃখের, সুনির্মল, সে দিনগুলাে কই।

ব্যথাতুর অন্ধকারাচ্ছন্ন আগন্তে গ্রীষ্মের নবাগত

পাখিগুলাে আর সুর তােলে না

অনিঃশেষ নির্মিলনে আমার বন্দিশালা দীর্ঘায়িত হয়

দেদীপ্যমান অক্ষিগুলাে মুমূর্ষ হয়ে ওঠে ;

খুবই দুঃখের, খুবই অদৃশ্য সে দিনগুলাে কই।

যখই মনে পড়ে, মনে হয় মৃত্যুর পরও চুমু দিচ্ছে

আশাহত মূর্ত বেদনাগুলাে

গভীরতর প্রথম প্রেমের মতাে, এবং বন্য দুঃখে পরিপূর্ণ

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সেই দিনগুলাে কই।

টি.এস. এলিয়ট

অবিনশ্বর গােপন কথা

ওয়েবস্টার মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন

করােটিকে ম্লান করে চামরার অন্তরালে ।

হৃদয়হীন অলৌকিক মায়ার জগৎ মাটির নীচে

পেছনের দিন সুক্ষ্ম কাঁচে হেলান দিয়ে হাসছে অবজ্ঞার হাসি।

ডেফোডিল ফুটেছে নৈঃশব্দের সাজানাে বাগানে

শুরু হলাে চোখের কোটর থেকে অবিরাম অঝোর ধারায়;

তিনি জানতেন মৃত আত্মা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গর চতু্দিকে ঘুরছে

আস্টেপৃষ্ঠে বাঁধা লােভ-লালসা ও বিলাসিতা।

ভিন্ন পংক্তিমালা জাগ্রত আমার হৃদয়ে

যার অনুভূতির মধ্যে কেউ প্রতিনিধিত্ব করতে অক্ষম ;

স্পর্শ বা প্রবেশ করতে পারে না

সুদক্ষ অতীত অভিজ্ঞতা অতিক্রম করে।

তিনি জানতেন মজ্জাগত দেহ বা হৃদয়ের যন্ত্রণা

ক্ষয়িষ্ণু কঙ্কালের অবিশ্রান্ত কম্পমান জ্বর ।

হৎপিণ্ড বা মাংসের সঙ্গে যুক্ত সম্ভব নয়

হাড়ের পক্ষে অযৌক্তিক এ ব্যাধির আরােগ্য লাভ।

‘গ্রীসকীন” সুন্দরী ; অপরূপ তার রাশিয়ান চোখ

ভাজ পড়ে উচ্চারণকালে অব্যক্ত শব্দাবলী;

মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত বন্ধুর নয়নাভডিরাম

ফুসফুসের প্রদাহ দেয় পরম সুখের অঙ্গীকার।

ওঁৎ পেতে শয্যায় শায়িত ব্রজিলিয়ান ব্যাঘ্র

হিংস্র থাবায় শিকারীকে বধ করে ;

বন্য বিড়ালগুলাে ভয়ে কম্পমান দিক-বেদিক

ছুটে যায় অভয়ারণ্যে অথৈ অতল।

তীক্ষ্ম ধুরদ্ধর ব্রাজিলিয়ান ব্যাঘ্র

পায় না গতি-প্রকৃতি নিঝুম অন্ধকারে;

নাসারন্ধ্রে শিকার্য প্রাণীর গন্ধ

বয়ে যায় মৃদু বাতাসের গা মেখে অবিরাম।

সত্য বস্তুকে সরিয়ে নেওয়া এমন কি দুঃসাধ্য

তার মন্ত্রমুগ্ধকর যাদুমন্ত্রের মােহিনী শক্তিতে ;

বুকে হেঁটে চলা পাঁজরের শুষ্ক হাড়

পরাতত্ত্ব রক্ষিত হয় প্রবল উত্তেজনায়।

মন্তব্য: