একাকী খনিজ
ভুলে গেছি সব। কোন হাতে পাত্র রাখি কোন হাতে সােনার গােলক। ঘনকুয়াশার বনে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে গেছে আমার সকাল। তিস্তা-বেগবতী-নিলাক্ষী কত শত নদীর নামে তােমারে ডাকতে গিয়ে প্রাণের শ্রাবণে কখন যে হয়ে গেছি জল। রূপালী শস্যের টানে সাঁই সাঁই উড়ে আসে পাখিদের ঝাঁক। ফড়িঙের ঘাস দেহে উদ্যানের প্রগাঢ় মমতা। কেবল ছায়ারা ডাকে, পার হয়ে যাই রােদের বেলা। অনেক গােপন ঘেটে যা কিছু তুলে আনি তার দেহে শ্যামল অঁধার। বুকের ওড়নায় রাত্রি ঘুমিয়ে থাকে, তারে তুমি জাগালে না-জাগালে না সংঘমিত্রা ধ্যানে। অজস্র ধোঁয়ার মতাে জ্যোৎস্না নামে-সারারাত ঘুমাতে পারিনা, সারারাত চুরি হতে থাকে পাহাড়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘ্রাণ। নক্ষত্র তারার নীচে সাড়ে চারশ কোটি বছর পড়ে আছি একা। তােমারে হারাতে গিয়ে অবশেষে জেনে গেছি তুমিও একা আর ভালবাসা একাকী খনিজ।
আলােকলতা
পথ জানা নেই, তবুও পথে পাথে হাঁটি। নিমকষ্টের বনে রাতের নিঝুম। জ্যোৎস্নাপােড়া ছাই নিয়ে হেঁটে যাবাে, আমাদের হাতে হাতে চাঁদের পরাগ। তুমিতাে জান সবুজের কত রঙ। সুবর্ণ রেখার কোলে রূপের মহড়া। আমি পাথরে-পাহাড়ে-গুহায়-হাড়ে লিখে নেব তােমার কাওয়ালি ষোল কলায় গাঁথা পূর্ণবর্তী বাণী। তুমি আকাশে আকাশ হয়ে ডেকে যেও আমার বিস্ময়। জেনে রেখ আমি আর তুমি ছাড়া নিসর্গের সকলই পুরাণ। সকলই ছিল, আমাদের জন্মের অধিক আগে। জীবন ও মৃত্যু থেকে উঠে আসা আমরা, যারা হাঁটতে হাঁটতে একদিন চলে যাবাে অহমের দেশে, ফেলে যাব হাঁস বালিকার শাদা গন্ধ-জলডুবি দিঘি; যুগল জন্মের আলােকলতা। জল, প্রথম অগ্নিমালা। কার কাছে আবার হারাবাে, ভেসে যাবাে সহজ তরলে।