সিলভিয়া প্লাথ
সিলভিয়া প্লাথের জন্ম আমেরিকায়, বোস্টনে। ১৯৩২ সালে। বিষণ্নতার শিকার এ বালিকা ছেলেবেলায়ই মেধার পরিচয় দিতে সমর্থ হন। তখন থেকে তাঁর লেখাজোখা শুরু। ১৯৫৬ সালে প্রণয়সূত্রে বিয়ে করেন কবি টেড হিউজকে। ১৯৬২ তে তাঁদের বিয়ে ভেঙে যায়। আর এই সময় রচিত হয় তাঁর বিখ্যাত কবিতার বই ‘এরিয়েল’ এর বেশির ভাগ কবিতা। ১৯৬ইং কে তিনি আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর পর তাঁর কবিতা দেশে-বিদেশে ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ‘এরিয়েল’ থেকে অনূদিত তিনটি কবিতা
অনুবাদ : চরু হক
গালিভার
তোমার শরীরের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মেঘ
অনেক অনেক উঁচু, যেন বরফ
এবং সামান্য আনত
যেন অদৃশ্য কোনো আয়নায় ভেসে যাচ্ছে মেঘ
ঠিক রাজহাঁস নয়, প্রতিচ্ছবিহীন।
তোমার মতোও না
অসম্ভব ঠাণ্ডা এবং নীলাভ
যা ঠিক তুমিও নাও
তুমি পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছ
চোখ তোমার আকাশে
মাকড়সা মানুষ তোমাকে আঁকড়ে ধরেছে
তাদের অনুপম শেকলগুলো গুটিয়ে নিচ্ছে তাদের প্রলোভন
এবং রেশম সুতোর কারুকাজ।
কী ঘৃণাই না তারা তোমাকে করে
তোমার আঙুলের উপত্যকায়
তাদের কথোপকথন চলে
যেন পোকা:
তাদের আলমিরায় তোমাকে ওরা ঘুমের জগতে ডাকে
এই আঙুল বলো আর ওই আঙুল বলো
সবই ধ্বংসচিহ্ন
তবে পার হয়ে যাও
পার হয়ে যাও ওই দলাদলি ওই বিস্তৃত বিস্তার
ওই ক্রিভিলির ঘূর্ণিপাক, যা স্পর্শের বাইরে
তবে ওই চোখই শিকারি ঈগল
আর ঠোঁটের ছায়া
অতল পাতাল..
বছরগুলো
বাইরের হরিৎ অরণ্যভূমি থেকে প্রাণীদের মতো এসে
এরা প্রবেশ করে এখানে
যেখানে চিন্তাগুলো আমি ওলট পালট করি সেগুলো
পেরেক নয়, যেন একজন যোগী
সবুজিমা এবং অন্ধকার এত বিশুদ্ধ যে ক্রমে জমাট বেঁধে যায়….
¬
হে ঈশ্বর আমি তো তোমার মতোই
তোমার ওই কালো নক্ষত্রগুলো বিঁধে আছে মাথার ওপর
উজ্জ্বল হাবার মতো
চিরন্তনতা ক্লান্ত করে আমাকে
আমি কখনো তা চাই না
আমি ভালোবাসি বন্দুকের গতিময়তা
কিন্তু আমার হৃদয় এর আগেই মৃত্যুবরণ করে
ঘোড়ার খুরের নিষ্ঠুর মোহনীয়তা…
হে মহান ধ্বংসকামিতা
তোমার মধ্যে কী এত বিশাল?
বৎসর কি কোনো বাঘ
সে কি কোনো দরজার গর্জন
সে তো ভয়াবহ
তোমার মধ্যে ঈশ্বরের স্পন্দন
পালাতে পালাতে মৃত্যুবরণ করে।
তবে তাই হোক
এরা রক্তের কালোজম
এরা ভীষণ নিস্তব্ধ
খুরগুলো একে খুঁজে পাবে না
এই নীলাভ বিস্তারে
যেখানে পিস্টনগুলো শুধু
ফুঁসে ফুঁসে ওঠে..
রাতের নাচ
একটা মৃদু হাসি ঢলে পড়ল ঘাসের ওপর
যেন অপ্রতিরোধ্য
কেমন করে তোমার রাতের নাচ নিজেকে হারায়
সে কি হিসাব নিকাশে ?
এইসব আনকোরা জেগে ওঠা এবং পেঁচিয়ে থাকা
সারা জীবন, জগৎ ঘুরে বেড়ায়।
আমি এই সৌন্দর্যে একেবারে শূন্য হয়ে যাব না
তোমার ছোট্ট নিশ্বাস একটি উপহার
শুকনো ঘাস তোমার ঘুমের গন্ধ নিচ্ছে
এবং লিলি ফুলের।
তাদের শরীর কোনো যোগাযোগের চিহ্ন রাখেনি
অহমিকা গুটিয়ে আছে নিঃসাড় হয়ে
যে বাঘ নিজেকে জাগ্রত করছে
ছড়িয়ে যাচ্ছে দাগ,
ছড়িয়ে যাচ্ছে উত্তপ্ত পাপড়িমালা
এবং ধূমকেতুরা বিশাল বিশাল বিস্তার
অতিক্রমের প্রতীক্ষায়…..
এই যে শীতলতা, এই যে ভুলে যাওয়া
এই যে তোমার গুঁড়ো গুঁড়ো অঙ্গভঙ্গি
আতপ লাগা এবং মানুষের মতোই
যেন লাল আভা রক্ত ঝরাচ্ছে
এবং খোসা ছাড়াচ্ছে
আকাশের স্মৃতিভ্রমের ভেতর কালো
কেন আমাকে দেওয়া হলো এই আলোকমালা এই গ্রহজগৎ
যা আশীর্বাদের মতো গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ঝরছে
ছয় দিকে, সাদা হয়ে আমার চোখে, ঠোঁটে, চুলে..
যেন কিছুই ছুঁচ্ছে না
কোথাও গলে যাচ্ছে না